সভাধিপতি ও কমিটির কাজিয়া তুঙ্গে

ঝুলন মেলা নিয়ে বিরোধ বলরামপুরে

ঝুলন পূর্ণিমা উপলক্ষে মেলা বসানো নিয়ে স্থানীয় ঝুলন মেলা কমিটির সঙ্গে বিরোধ বেধেছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের। জেলা পরিষদের আপত্তির প্রতিবাদে বলরামপুরের ওই মেলা কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রচারপত্রও প্রকাশিত হয়েছে।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

বলরামপুর শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০০:২৭
Share:

বলরামপুর পঞ্চায়েতের সামনে ঝুলন মেলা কমিটির প্রতিবাদ।

ঝুলন পূর্ণিমা উপলক্ষে মেলা বসানো নিয়ে স্থানীয় ঝুলন মেলা কমিটির সঙ্গে বিরোধ বেধেছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের। জেলা পরিষদের আপত্তির প্রতিবাদে বলরামপুরের ওই মেলা কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রচারপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। এই ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয় তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে মেলা কমিটির।

Advertisement

বলরামপুরের সরাই ময়দানে এই ঝুলন মেলা বসে। বলরামপুরের সরাই ময়দানে ঝুলন মেলাকে সামনে রেখে যে মিনাবাজার বসে, তা আনুমানিক বিগত ৩৫-৪০ বছর ধরে বলরামপুর কালীমন্দির ঝুলন মেলা কমিটি পরিচালনা করে আসছে। মেলা কমিটির অভিযোগ, এ বার মেলা করা নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদ নানা টালবাহানা করছে। তারা যাতে মেলা বসাতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মেলা থেকে আয়ের টাকা কয়েক জন আত্মসাৎ করতে চাইছেন বলেও অভিযোগ কমিটির। এই অবস্থায় কমিটির দাবি, হয় তাদের মেলা করতে দেওয়া হোক, না হলে বলরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতই সেই দায়িত্ব নিক।

এই সব অভিযোগ তুলে ঝুলন মেলা কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রচারপত্রও এলাকায় বিলি করা হয়েছে। অভিযোগের তির মূলত তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদের দিকে হলেও প্রচারপত্রে সরাসরি কোথাও তাদের নাম নেই। এমনকী, প্রচারপত্রের তলায় প্রকাশক হিসেবে কমিটির নাম থাকলেও, কমিটির কোনও সদস্যের নাম নেই। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, সরাই ময়দান জেলা পরিষদের অধীনে। ঘটনাচক্রে জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলরামপুরেরই বাসিন্দা। তাই প্রকাশ্যে ঝুলন মেলা কমিটির হয়ে শাসকদলের নেতা সৃষ্টিধরবাবুর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চান না মেলা কমিটির কেউই। তাই কমিটির খোলা চিঠিতেও প্রকাশকের নাম নেই।

Advertisement


বাসিন্দাদের প্রতি মেলা কমিটির প্রচারপত্র।

‘বলরামপুরের সাধারণ জনগণের প্রতি খোলা চিঠি’ শিরোনামে ওই প্রচারপত্রে জানানো হয়েছে, এই মেলা থেকে যে অর্থ আয় হয়, তা এত দিন আয়োজক হিসাবে ঝুলন মেলা কমিটিই পেয়ে আসছে। অতীতে এই টাকার অঙ্ক এক হাজার, দু’হাজার থাকলেও বর্তমানে আয়ের পরিমাণ তিন লক্ষ টাকা। প্রচারপত্রে দাবি করা হয়েছে, আয়ের টাকা দিয়ে বলরামপুর কালীমন্দিরের দৈনন্দিন নানা খরচ চলার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজকর্মও হয়। তা ছাড়া, সরাই ময়দানের আশপাশে যে সমস্ত মন্দির রয়েছে, সেখানেও মেলার আয়ের অংশ থেকে সাহায্য করা হয়।

খোলা চিঠিতে সোমবার বিকেলে মেলা সংগঠিত করা নিয়ে মেলার মাঠের কাছে একটি সভাও ডাকা হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এ দিন বিকেলে ওই সভার পরেই ঝুলন মেলা কমিটির বেশ কিছু লোকজন সভাস্থল থেকে মিছিল করে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা পঞ্চায়েত প্রধানের হাতে কালীমন্দিরের চাবিও তুলে দিতে চান। কিন্তু প্রধান তা নিতে অস্বীকার করেন। ওই গ্রামবাসীরা প্রধানকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, ওই মাঠে মেলার অনুমতি দিতে প্রশাসন নানা ভাবে বাগড়া দেওয়ায় এ বার মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব পঞ্চায়েতকেই নিতে হবে। মেলা কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, ‘‘প্রশাসন এ বার মেলার অনুমতি দিতে বিস্তর টালবাহানা করছে। মেলা থেকে আয়ের টাকাও তারা কমিটিকে দেবে না বলেছে। আমাদের প্রশ্ন, ওই আয়ের না পেলে কী ভাবে মন্দিরের পুজো-আচ্চা চলবে? তাই আমরা পঞ্চায়েতে জানতে এসেছিলাম, তারা আমাদের মেলা করার অনুমতি দেবে কিনা। না হলে পঞ্চায়েতই মন্দির চালাক।’’

মেলা কমিটির কর্মকর্তা সুভাষ মাঝি বলেন, ‘‘দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে এই কমিটিই মেলা চালিয়ে আসছে। আয়ের টাকাও তারা পাচ্ছে। এখন জেলা পরিষদের সভাধিপতি কেন আমাদের মেলা করতে দিচ্ছেন না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা সৃষ্টিধরবাবুর সঙ্গে দেখা করব। প্রয়োজনে আমাদের বিধায়ক তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোরও দ্বারস্থ হব।’’ বলরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মাঝি বলেন, ‘‘কিছু লোক আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, সরাই ময়দানে মেলা করার অনুমতি দেওয়া হোক। কিন্তু ওই ময়দান জেলা পরিষদের। ফলে আমরা কী ভাবে অনুমতি দিতে পারি? আমরা ‘নো-অবজেকশন’ দিতে পারি মাত্র।’’

এ দিনই তৃণমূলের পক্ষ থেকে এলাকায় সভাধিপতি সৃষ্টিধরবাবুর সমর্থনে একটি বাইক-মিছিল বের করা হয়। সেখানেতৃণমূলের পাশাপাশি সৃষ্টিধরবাবুর নামেও স্লোগান দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর একাংশের ধারণা, মেলা কমিটির প্রচারপত্র বের করার পাল্টা হিসাবেই এই মিছিল। যদিও প্রকাশ্যে তা মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।

কিন্তু প্রশ্ন হল, মেলা আদৌ হবে কি না এবং মেলা হলে আয়ের টাকা কোথায় যাবে। সৃৃষ্টিধরবাবু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ওই মাঠে অবশ্যই মেলা হবে। কিন্তু যেহেতু ওই ময়দান জেলা পরিষদের, তাই মেলা থেকে প্রাপ্ত আয় জেলা পরিষদ কোনও মন্দির কমিটিকে দেবে না। বরং এই মাঠে গত বছর থেকে বইমেলা শুরু হয়েছে। ঝুলন মেলার আয়ের অর্থ বইমেলার উন্নতি এবং বলরামপুরের সার্বিক উন্নয়নে খরচ করা হবে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, কোনও মন্দির কমিটি নিজেদের সিদ্ধান্তে ওই অর্থ নিয়ে খরচ করবে, তা হতে পারে না।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন