প্রশ্নে প্রশাসনের ‘নজরদারি’
Corona

ঘরের পথে পরিযায়ী শ্রমিকেরা

কোথা দিয়ে, কত জন পরিযায়ী শ্রমিক বা বাইরের রাজ্য থেকে মানুষজন জেলায় আসছেন, সে দিকে কী কোনও নজর রয়েছে প্রশাসনের? প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন মহলের মানুষজন।

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২১ ০৫:২৬
Share:

ফাইল চিত্র।

করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে পুরুলিয়া জেলায়। দেশের কিছু রাজ্যেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই অবস্থায় ভিন্‌ রাজ্যের কর্মস্থল ছেড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ কেউ পুরুলিয়া জেলায় ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকে আবার ট্রেনের টিকিট জোগাড় করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু গত বছর স্পেশাল ট্রেনে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের স্টেশনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার যে ব্যবস্থা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর করেছিল, এ বার তা দেখা যাচ্ছে না। তাই এ বারও যাতে ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসা ঘরমুখো মানুষজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়, সে দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

Advertisement

কোথা দিয়ে, কত জন পরিযায়ী শ্রমিক বা বাইরের রাজ্য থেকে মানুষজন জেলায় আসছেন, সে দিকে কী কোনও নজর রয়েছে প্রশাসনের? প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন মহলের মানুষজন।

পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর বলেন, ‘‘গত বার দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল, যাতায়াত বন্ধ ছিল। স্পেশাল ট্রেনে যাঁরা ফিরছিলেন, তাঁদের সম্পর্কে প্রশাসনের কাছে আগাম তথ্য ছিল। এখন তো ট্রেন-বাস সবই চলছে। ফলে কে, কোথায় ফিরে আসছেন, তা খুঁজে বের করা কঠিন। তবে ফিরে আসা কেউ অসুস্থ বোধ করলে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন। সেখানে করোনা পরীক্ষা থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে নিভৃতবাসে থাকবেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা সাহায্য করবেন।’’

Advertisement

দিল্লির ১২ নম্বর সেক্টরে অনেক দিন ধরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে রয়েছেন পুরুলিয়ার একাধিক ব্লকের বহু যুবক।

তাঁদেরই এক জন অযোধ্যা পাহাড়ের একটি গ্রামের বাসিন্দা অনাদি সিং মুড়া ভুলতে পারেননি গতবারের লকডাউন পর্ব। সম্প্রতি তিনি ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গত বার আচমকা লকডাউনে আমরা দিল্লিতে আটকে পড়েছিলাম। চরম অনিশ্চয়তা আর আশঙ্কা নিয়ে প্রতিটা দিন কাটাতে হয়েছে। এ বারের পরিস্থিতিও ভাল যাচ্ছে না। তাই ওখান থেকে আমরা ১৮ জন শ্রমিকই বাড়ি ফিরে এসেছি।’’

সেখান থেকে ফেরা বাঘমুণ্ডির বাসিন্দা চন্দ্রশেখর পরামাণিক, অযোধ্যা পাহাড়ের বাসিন্দা সরাবন সিং মুড়া ও অমূল্য সিং মুড়া। তাঁরা বলেন, ‘‘দিল্লির পরিস্থিতি সুবিধার নয়। তার মধ্যে কাজ হচ্ছিল। কিন্তু কখন কী নিষেধাজ্ঞা হয়, ঠিক নেই। তাই আমরা সাত জন টাটানগরগামী একটি ট্রেনে টিকিট পেয়ে ফিরে এসেছি।’’ অনাদির দাবি, তাঁরা ফিরে সবাই করোনা পরীক্ষা করান। সবার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

গুজরাতের আমদাবাদের একটি হোটেলে ওয়েটারের কাজ করেন কাশীপুরের বাসিন্দা আকাশ গোপ। গতবার লকডাউন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় সেখানে এক মাসেরও বেশি সময় আটকে পড়েছিলেন আকাশ-সহ আরও কয়েকজন। আবেদন করেও স্পেশ্যাল ট্রেনের যাত্রী তালিকায় নাম নথিভুক্ত না হওয়ায় কয়েকজন মিলে একদিন হেঁটেই বেরিয়ে পড়েছিলেন স্টেশনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ট্রেন মেলেনি। এ বার করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর খবর পেয়ে আপাতত ছুটি নিয়ে ফিরে এসেছেন তাঁরা। আকাশ বলেন, ‘‘গতবারের অভিজ্ঞতা ভুলিনি। তাই এ বার সাত তাড়াতাড়ি
ফিরে এলাম।’’

ঝালদা ১ ব্লকের অনা গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত সিং মুড়াদের মতো বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক মকর সংক্রান্তির আগে বাড়ি ফিরেছিলেন। ঠিক করেছিলেন, ভোটের পরে দিল্লিতে
কাজে ফিরবেন।

জয়ন্ত বলেন, ‘‘ভোটের পরে ফিরব বলে সাত-আটজন ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিলাম। যাওয়ার আগেই শুনলাম, দিল্লিতে করোনা ছড়িয়েছে। তাই আর যাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন