চলছে শরীরচর্চাও। ঝালদা ২ ব্লকের কোয়রান্টিন সেন্টারে। নিজস্ব চিত্র
‘ফেসিলিটি কোয়রান্টিন’-এ নজরবন্দি ব্যক্তিরা বসে পদ্মাসনে। সেখানে এক ‘মনো বিশ্লেষক’ (এক কথায় কাউন্সিলর) করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন। রবিবার সকালে এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে জেলায় ‘ফেসিলিটি কোয়রান্টিন’গুলিতে।
কী সেই শপথ?
কাউন্সিলর’ বলছেন, ‘আমাদের অঙ্গীকার, আমরা এই ভাইরাসকে পৃথিবী থেকে দূরে তাড়াব। আমরা বাঁচব। মানব সমাজকে বাঁচাব। দৈহিক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখব। তবেই আমরা এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাব। এটাই আমাদের সকলের অঙ্গীকার।’’ তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়ে কথাগুলি বলে চলেছেন ‘কোয়রান্টিন’-এ ‘নজরবন্দি’ লোকজন।
করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি ‘কোয়রান্টিন’-এ থাকা ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। একঘেঁয়েমি কাটাতে টিভির বন্দোবস্ত করা হয়েছে। চলছে করোনা ঠেকাতে শপথবাক্য পাঠও। কোয়রান্টিন-এ থাকা ব্যক্তিরা শপথ নিয়ে বলছেন, ‘‘আমি নিজেকে ভালোবাসি। আমি নিজেকে শ্রদ্ধা করি। নিজেকে বিশ্বাস করি। আমি নিজেকে সাহায্য করি। আমি আমার পরিবারকে ভালোবাসি। পরিবারকে সম্মান করি। আমি আমার পরিবারকে সাহায্য করতে চাই। আমি আমার দেশকে, সমাজকে সাহায্য করতে চাই। সর্বোপরি আমি আমার সারা পৃথিবীর মানুষকে সাহায্য
করতে চাই।’’
কোয়রান্টিন-ওর আবাসিকদের জন্য তাস খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে ওয়াই-ফাই পরিষেবা ব্যবস্থাও। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘কোয়রান্টিন-এ থাকা ব্যক্তিরা যাতে একাকীত্ব অনুভব না করেন, তার জন্য নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে। তাঁদের মনের জোর বাড়ানোর চেষ্টা চলছে. মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এই কাজ করছেন।’’
‘কমিউনিটি কোয়রান্টিইন’-এ নজরবন্দি ব্যক্তিদের শরীরচর্চার পাঠ দিচ্ছে পুলিশ। কী ভাবে শরীরকে ফিট রাখতে হয় তা ‘কোয়রান্টিন’-এর আবাসিকদের শেখাচ্ছে পুলিশ। পুরুলিয়ার পুলিশসুপার এস সেলভামুরুগান বলেন, ‘‘শারীরিক ভাবে ফিট থাকলে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এই সময় আবাসিকদের আমরা শরীরচর্চার পাঠ দিচ্ছি।’’
তাঁদের একঘঁয়েমি কাটাতে দেওয়া হচ্ছে তাস। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন চাইছে, পর্যবক্ষণে থাকাকালীন তাঁরা যেন মানসিক অবসাদে না ভোগেন। ঝালদা-২ ব্লকের কর্মতীর্থে (যেখানে ‘কমিউনিটি কোয়রান্টিইন’ খোলা হয়েছে) রয়েছেন ২৫ জন।
গত কয়েক দিন ধরে তাঁদের যোগাসন ও শরীরচর্চার পাঠ দিচ্ছেন সরোজ তামাং নামে কোটশিলা থানায় কর্মরত এক ইএফআর জওয়ান। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করি। কয়েকদিন ধরে সবাইকে সেটাই শেখাচিছ। এই পরিস্থতিতে শরীর এবং মন ভাল রাখা প্রয়োজন।’’