মঞ্চে: পুরুলিয়া জেলা পরিষদ ভবনের অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র
রেশনে খাদ্যদ্রব্য মজুত থাকলেও, অনেকে ঠিক মতো খাবার পাচ্ছেন না। পুরুলিয়ায় সোমবার বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর এই মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
এ দিন পুরুলিয়া জেলা পরিষদ প্রেক্ষাগৃহে বিশ্ব খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার জনসংখ্যা ৩০ লক্ষ ৪০ হাজারের মতো। আর রেশনকার্ড অনুযায়ী খাদ্য রয়েছে সাড়ে ৩১ লক্ষের মতো। মানুষের থেকে রেশনকার্ড বেশি থাকা সত্ত্বেও কেন মানুষকে ক্ষুধার্ত থাকতে হবে? আমরা যদি খাদ্য উৎপাদন করতে পারি, তাহলে মানুষ অপুষ্টিতে ভুগবে কেন? তা হলে কি ভূতে খাচ্ছে? না হলে মানুষ মুখোশধারী শয়তানেরা খাচ্ছে?’’ তিনি যোগ করেন, সবাই দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করলে মানুষকে ক্ষুধায় থাকতে হতো না। সভাধিপতির হুঁশিয়ারি, ‘‘সেই দিন খুব দূরে নেই, মুখোশধারী শয়তানদের নিশানা করা হবে। সকলের কাছে অনুরোধ, খাদ্য বন্টনের ক্ষেত্রে মানবিক মুখ যেন থাকে।’’
বস্তুত, এই জেলায় রেশনের খাবার নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ মাঝে মধ্যেই সামনে আসে। কিছু দিন আগেই পুরুলিয়া শহর লাগোয়া কর্পুরবাগান এলাকায় একটি চালকল থেকে রেশনের আটা বোঝাই একটি ট্রাক পাচার করা হচ্ছে বলে খবর পেয়ে হানা দেয় জেলা দুর্নীতি দমন শাখা। বস্তা বস্তা রেশনের আটা বাজেয়াপ্ত করা হয়। রেশনের আটার মান নিয়েও বিধানসভায় প্রশ্ন তুলেছেন বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো। তাঁর অভিযোগ, রেশনের আটার প্রস্তুতের তারিখ উল্লেখ করা হচ্ছে না। তদন্তে নেমে সেই অভিযোগের সত্যতা পায় জেলা খাদ্য দফতর।
খাদ্য দফতরের কোনও আধিকারিক অবশ্য সভাধিপতির ওই মন্তব্য নিয়ে মতামত জানাতে রাজি হননি। তবে পরিবেশকদের সংগঠনের জেলা সম্পাদক দেবকুমার দাঁ বলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্ব রেশন ডিলারদের কাছে খাদ্যপণ্য পৌঁছে দেওয়া। সেই কাজ আমরা করছি।’’ ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রভাশিসলাল সিংহ দেও দাবি করেন, ‘‘রেশন কার্ড যাঁদের রয়েছে, তাঁদেরই মালপত্র দেওয়া হয়। কাউকে বঞ্চিত করার কোনও অভিযোগ নেই।’’
এই সুযোগে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। নেপালবাবু বলেন, ‘‘আমরা তো রেশন ব্যবস্থা দুর্নীতি নিয়ে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছি। সভাধিপতির এতদিন বোধোদয় হওয়ায় তাঁকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু দুর্নীতি চক্রের পিছনে অবশ্যই শাসকদলের কারও কারও মদত থাকতে পারে। এ নিয়ে উচ্চস্তরের তদন্ত দরকার।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সভাধিপতি স্বীকার করলেন ভাল। তবে আমরা ক্ষমতায় এসে এর সিবিআই তদন্ত করাব।’’
শাসকদলের এক জন প্রতিনিধি হয়ে সৃষ্টিধরবাবুর এই মন্তব্যে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে তাঁর দলের জেলা নেতৃত্ব। অনেকে আবার এও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সভাধিপতি হওয়ার পর থেকে সৃষ্টিধরবাবু এমন বিতর্কিত মন্তব্য কম করেননি।
অনুষ্ঠানে কিছু বীরহোড় পরিবারকে চাল-ডালের ব্যাগ তুলে দেওয়া হয়। উপস্থিত পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের সম্পাদক স্বামী জ্ঞানলোকান্দ বলেন, ‘‘আমরা সকলেই এমন দিন দেখতে চাই, যে দিন অনুষ্ঠান করে মানুষকে খাবারের প্যাকেট তুলে দিতে হবে না।’’