ভোটের মুখে শাসকদলের গায়ে হুল বিঁধিয়েছে নারদ-কাণ্ড। দলের এক ঝাঁক মন্ত্রী-নেতার সরাসরি ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন দলের জেলা নেতা থেকে নিচুতলার কর্মীরাও। প্রচারে বেরিয়ে ওই অভিযোগ সম্পর্কে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে বাঁকুড়ায় অবশ্য দলের কর্মীদের সামনে দলীয় নেতাদের ‘ইমেজ’ ঠিক রাখতে পাল্টা যুক্তির পথে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে দেখা গেল বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তকে।
রবিবার দিনভর শহরের বিভিন্ন জায়গায় কর্মিসভা করলেন মহাপ্রসাদবাবু। সন্ধ্যায় তামলিবাঁধ মোড়ে একটি লজে দলীয় কর্মিসভায় তিনি কর্মীদের সামনে নিজের বক্তব্যে তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। শেষে নারদ-কাণ্ড নিয়ে মুখ খোলেন তিনি। শুধু মুখ খোলাই নয়, প্রযুক্তিতে যে চোখে ধুলো দেওয়াও সম্ভব বোঝাতে নিজের পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল ফোনটি বের করে কর্মীদের দু’টি স্টিল ছবি বা স্থির চিত্র দেখান। দু’টি পৃথক সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চেয়ারে বসে রয়েছেন। তাঁদের সামনের টেবিলে বান্ডিল-বান্ডিল টাকা। মহাপ্রসাদবাবু বলেন, “ভোট এলেই বিজেপি নানা মিথ্যা বিষয়কে সামনে নিয়ে আসে। যদিও এইসব করে আমাদের ক্ষতির বদলে লাভই করে ওরা। কারণ প্রতিবারেই আমরা বেশি জনসমর্থন নিয়ে ফিরে আসি।” ওই দু’টি ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা ছবিতে দেখছেন নরেন্দ্র মোদী ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য টাকা নিচ্ছেন। আগেই বলে দিই এই ছবিগুলো কিন্তু মিথ্যা। প্রযুক্তির মাধ্যমে যে এখন না’কেও হ্যাঁ করা যায়, তা বোঝাতেই এই ছবিগুলো দেখালাম।”
মহাপ্রসাদবাবু যখন মোবাইলে ওই ছবি দেখাচ্ছেন তখন ওই কর্মিসভার দর্শক আসনে বসে থাকা কয়েক জন তৃণমূল কর্মীই বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘‘ওঁরা ভিডিও ফুটেজ দেখাচ্ছে, তাতে নেতাদের বক্তব্যও শোনা গিয়েছে। এই স্টিল ছবি দিয়ে কি মোকাবিলা হবে?’’
উল্লেখ্য, নারদ-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার মতোই বাঁকুড়া জেলারও হাটে-বাজারেও এ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। ঠগ লোকজন দেখলেই নারদ-কাণ্ডের প্রসঙ্গ উঠে আসছে। অনেকেই জানাচ্ছেন, বাসে ভাড়া নিয়ে কন্ডাক্টর টিকিট না দিলে যাত্রীরা ‘নারদ নারদ’ বলে কটাক্ষ করছেন। মাছের বাজার বা সব্জি বাজারেও বিক্রেতারা বেশি দাম হাঁকলেও অনেকে ‘নারদ’ বলে টিপ্পনি কাটছেন। বিভিন্ন চায়ের দোকানের আড্ডার হট টপিকও হয়ে দাঁড়িয়েছে নারদ। এ দিন বিকেলে বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন মগরা গ্রামে প্রচারে গিয়েছিলেন বিজেপির বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী সুভাষ সরকার। সেখানে বহু মানুষকেই তিনি বলেছেন, “নারদ সমস্ত পর্দা ফাঁস করে দিয়েছে। তৃণমূলকে আর বিশ্বাস নয়।”