ভবঘুরের শুশ্রূষায় দুই ‘ঘরের লোক’

তিন কুলে কেউ আছে কি না জানা যায় না। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন বৃদ্ধা। কাঁধে ঝোলা, নোংরা কাপড়চোপড়। কুকুরের দল আঁচড়ে-কামড়ে রক্তাক্ত করে ফেলে রেখে গিয়েছিল তাঁকে। সেই ঘটনাই ভবঘুরে বৃদ্ধার জীবনে এনে দিল কাছের জনের শুশ্রুষা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঘমুণ্ডি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩৭
Share:

সেবা। বাঘমুণ্ডি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তোলা নিজস্ব চিত্র।

তিন কুলে কেউ আছে কি না জানা যায় না। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন বৃদ্ধা। কাঁধে ঝোলা, নোংরা কাপড়চোপড়। কুকুরের দল আঁচড়ে-কামড়ে রক্তাক্ত করে ফেলে রেখে গিয়েছিল তাঁকে। সেই ঘটনাই ভবঘুরে বৃদ্ধার জীবনে এনে দিল কাছের জনের শুশ্রুষা। স্থানীয় বাসিন্দা শশীপ্রসাদ মাহাতো এবং বাঘমুণ্ডি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের হস্টেলের শিক্ষিকা অপর্ণা মাহাতো গত বেশ কিছুদিন দু’বেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন বৃদ্ধার। নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে আসছেন তাঁকে।

Advertisement

প্রায় হপ্তা খানেক আগের এক সন্ধ্যার ঘটনা। বাঘমুণ্ডির সিন্দরি গ্রামের রাস্তাঘাটে তখন লোকজন বিশেষ নেই। এলাকার বাসিন্দা শশীবাবু জখম অবস্থায় ওই বৃদ্ধাকে পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধা এই এলাকার নন। ভিক্ষা করেই দিন চলত বলে জেনেছি। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে খবর দেন।’’ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গাড়ি এসে বৃদ্ধাকে নিয়ে যায় বটে, কিন্তু অভিযোগ, সেখানে তাঁকে বিনা চিকিৎসায় বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। আর তা নিয়েই প্রতিবাদ করেন শশীবাবু এবং অপর্ণাদেবী। তার পর থেকে অবশ্য চিকিৎসা নিয়ে আর হেলাফেলা হয়নি বলেই তাঁদের দাবি।

অপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘কুকুরের কামড়ে ভবঘুরে বৃদ্ধা মারাত্মক জখম হয়েছেন শুনেই ছুটে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তো আলাদা করে নজর দেওয়ার মতো কেউ নেই, আমারই পাশে থাকা দরকার।’’ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি থাকা সুনির্মল লোহার, কামদেব কৈবর্তদের সঙ্গেও এখন আলাপ হয়েছে গিয়েছে ভবঘুরে বৃদ্ধার দুই ‘বাড়ির লোক’-এর।

Advertisement

তাঁরা জানান, খাবার খাওয়ানো, নিয়ম করে করে জল খাওয়ানো, পাশে বসে গল্পগাছা করা— কোনও যত্নেই যেন খামতি রাখছেন না শশীবাবু এবং অপর্ণাদেবী। গ্রামের অনেকেও সময়সুযোগ মতো এসে খোঁজ নিচ্ছেন।

তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাঘমুণ্ডির বিএমওএইচ সমীর সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘বৃদ্ধার চিকিৎসা চলছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে। ব্যান্ডেজ করা হচ্ছে। কিন্তু সারা শরীরে ক্ষত থাকায় সারতে একটু সময় লাগবে।’’

নিজের বাড়ি কোথায়, নাম কী— কিছুই ঠিক করে বলতে পারছেন না ওই বৃদ্ধা। কিন্তু শশীবাবু বা অপর্ণাদেবীকে দেখলেই মুখে একগাল হাসি! শশীবাবু বলেন, ‘‘সুস্থ হয়ে উঠুন, তারপরে বাড়ি খুঁজে ওকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন