বিধি ভেঙেছে পুলিশ: কোর্ট

নিগ্রহের শিকার হয়েছেন খোদ সিজেএম। অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তেই উঠছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। কেন এখনও অভিযোগকারীকে পুলিশ ‘ফর্মাল এফআইআর’ দেয়নি, দু’মাসে ঘটনার তদন্তে কতটুকুই বা এগোল পুলিশ— বৃহস্পতিবার নানা বিষয়ে এসিজেএম-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আদালতের নজরদারির আবেদন জানালেন সিজেএম-এর আইনজীবী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:০০
Share:

বৃহস্পতিবার সিউড়ি আদালতে আইনজীবী পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়।

নিগ্রহের শিকার হয়েছেন খোদ সিজেএম। অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তেই উঠছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। কেন এখনও অভিযোগকারীকে পুলিশ ‘ফর্মাল এফআইআর’ দেয়নি, দু’মাসে ঘটনার তদন্তে কতটুকুই বা এগোল পুলিশ— বৃহস্পতিবার নানা বিষয়ে এসিজেএম-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আদালতের নজরদারির আবেদন জানালেন সিজেএম-এর আইনজীবী।

Advertisement

ঘটনাস্থল: সিউড়ির এসিজেএম দেবকুমার গোস্বামীর এজলাস।

সময়: দুপুর ১টা ৫০ মিনিট।

Advertisement

উপস্থিত: এপিপি লোপামুদ্রা দাস, অভিযোগকারীর পক্ষে আইনজীবী পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়।

বিচারক: (সিজেএমের আইনজীবীর উদ্দেশে) এপিপি থাকা সত্ত্বেও আমি আপনার আবেদন শুনব কেন?

পৃথ্বীশবাবু: আমি এপিপি-র অনুমতি নিয়েই বলছি।

বিচারক: আপনি এপিপি-কে সহায়তা করতে পারেন মাত্র।

পৃথ্বীশবাবু: এপিপি-র অনুমতি নিয়েই বলছি। যে জন্য আবেদন করছি, তার অন্যতম কারণ আমার মক্কেল নিগ্রহ মামলায় তদন্তের গতিপ্রকৃতি। চাঁদা আদায়কারীরা হেনস্থা করেছিলেন, এই মর্মে গত ৯ নভেম্বর সিউড়ি থানায় অভিযোগ করেছিলেন আমার মক্কেল। ওঁর ছেঁড়া জামাটি সিজ করতেই পুলিশ দশ দিন লাগিয়েছিল। আইনত আমার মক্কেলের ফর্মাল এফআইআর পাওয়ার কথা থাকলেও দু’মাস হতে চলল, এখনও পুলিশ তা দেয়নি।


সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন...

বিচারক: নিশ্চয়, এটা আপনার মক্কেলের পাওয়ার কথা। এখনও পাননি! (এপিপি-র উদ্দেশে) কেন সিউড়ি থানা প্রতিলিপি দেয়নি?

এপিপি: পুলিশের তরফে এটা ত্রুটি হয়েছে।

বিচারক: এটা ‘গ্রস ভায়োলেশন অফ সিআরপিসি’ (ফৌজদারি কার্যবিধির গুরুতর লঙ্ঘন)!

পৃথ্বীশবাবু: হুজুর, পুলিশ প্রথম যে চার জনকে ধরেছিল, তাঁদের টিআই প্যারেডের জন্য আবেদন না করা নিয়েও আমার আপত্তি রয়েছে।

বিচারক: ওই চার জনকে জামিন দেওয়ার সময় বিচারক লিখেছেন ঘটনার সঙ্গে ধৃতেরা যুক্ত নন। আপনি আমাকে বলুন, পুলিশের এখানে কোথায় ভুল রয়েছে?

পৃথ্বীশবাবু: হুজুর আপনি যদি দেখেন, পুলিশ কেমন করে ঘটনার তদন্ত করছে।

বিচারক: আপনি কী চাইছেন? আদালত তদন্ত মনিটর করুক?

পৃথ্বীশবাবু: আমি বলতে চাইছি যে, ওই কালীপুজোর উদ্যোক্তা ক্লাব সম্পাদক বা সভাপতিদের কি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে? তদন্তের অগ্রগতিই বা কতটা?

বিচারক: আপনার মক্কেল কি নির্দিষ্ট করে কোনও ক্লাবের নাম উল্লেখ করেছিলেন?

পৃথ্বীশবাবু: অভিযোগে স্থানীয় ক্লাবের কালীপুজোর চাঁদা আদায়ের কথা তো উল্লেখ রয়েইছে। তা হলে ক্লাবটি খুঁজতে অসুবিধা কোথায়? সে দিন চাঁদা তোলার দায়িত্বে যারা ছিল, তাঁদের কি পুলিশ জিজ্ঞাসা করেছে? মেম্বারশিপ রেজিস্টার সিজ করেছে?

বিচারক: আপনি কী করে জানলেন, পুলিশ সেটা করেনি?

পৃথ্বীশবাবু: হুজুর, আমি চাইছি সেটা আপনিই দেখুন।

বিচারক: কেস ডায়েরি আনিয়ে আদালত যদি সেটা দেখেও থাকে, মামলার তদন্ত যে পর্যায়ে, সেখানে আদালত কেন আপনাকে সে কথা বলবে?

পৃথ্বীশবাবু: আদালত যেন সেটাই করে, এটাই আমার আবেদন।

এপিপি: আমি এই আবেদনের বিরোধিতা করছি। পুলিশের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

বিচারক: সেটা এখনই সম্ভব নয়। কোনও ঘটনার তদন্ত শেষ করে পুলিশ যত ক্ষণ না তদন্ত রিপোর্ট বা চার্জশিট দিচ্ছে, আদালত এ ভাবে তদন্তে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

পৃথ্বীশবাবু: হজুর, পুলিশ ধৃতদের যে জবানবন্দি দিয়েছে, তার প্রতিলিপি মেলার জন্যও আবেদন করছি।

বিচারক: আইনে এমন কোনও প্রভিশন (বিধান) নেই। এই আবেদনও খারিজ করছি। তবে, শুক্রবার দুপুর ১টার মধ্যে সিউড়ি থানার আইসি-কে (সমীর কোপ্তি) লিখিত ব্যাখ্যা-সহ ফর্মাল এফআইআর-এর প্রতিলিপি অভিযোগকারীকে দিতে হবে।

তথ্য: দয়াল সেনগুপ্ত।

ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন