মেজাজ দরাজ থাকলে গেয়ে উঠতেন ঝুমুর

তাই নকুল মাহাতোর হৃদয়ে বরাবরই আলাদা জায়গা করে ছিল লোকশিল্প। লোকশিল্পীদের সরকারি মান্যতা দেওয়া ও এই শিল্পের প্রসারের জন্য তিনি গড়ে তুলেছিলেন আদিবাসী লোকশিল্পী সঙ্ঘ। তাই তাঁর প্রয়াণে শোকতপ্ত জঙ্গলমহলের লোকশিল্পীরাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:২০
Share:

জেলা সম্পাদক হিসাবে শেষ জনসভায়।— ফাইল চিত্র

দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন প্রায় অর্ধ শতক। কিন্তু সেই আদ্যন্ত কমিউনিস্ট নেতাই কখনও সখনও গেয়ে উঠতেন ঝুমুর। লিখতেন টুসু গানও।

Advertisement

তাই নকুল মাহাতোর হৃদয়ে বরাবরই আলাদা জায়গা করে ছিল লোকশিল্প। লোকশিল্পীদের সরকারি মান্যতা দেওয়া ও এই শিল্পের প্রসারের জন্য তিনি গড়ে তুলেছিলেন আদিবাসী লোকশিল্পী সঙ্ঘ। তাই তাঁর প্রয়াণে শোকতপ্ত জঙ্গলমহলের লোকশিল্পীরাও।

নকুলবাবু ছিলেন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা রাজ্য সম্পাদক। সংগঠনের বর্তমান জেলা সম্পাদক জলধর কর্মকার বলেন, ‘‘২০০০ সালে এই সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন তিনি। খুব কম লোকই জানেন যে নকুলদা নিজে খুব ভাল ঝুমুর গাইতেন। আমি নিজে নকুলদার সঙ্গে রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ ঘুরে বেড়িয়েছি। কখনও মেজাজ ভাল থাকলে বা কোনও শিল্পীর সঙ্গে দু’কলি ঝুমুর গাইতেও দেখেছি তাঁকে। তিনি ভাল টুসু গানও গাইতে পারতেন।’’

Advertisement

পুরুলিয়ার ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশিরভাগ পঞ্চায়েত তিনি লোকশিল্পীদের সংগঠিত করতে, লোকশিল্পের প্রসারে ঘুরেছেন। জলধরের কথায়, ১৯৯০ সাল থেকেই নকুলবাবু এই কাজ শুরু করেছিলেন। লোকশিল্পীদের এক ছাতার তলায় আনতে ঘুরেছেন রাজ্যের সব জেলায়। সংগঠন যখন তৈরি হল, তখন তাঁর কি আনন্দ! লোকশিল্পীদের অধিকারের দাবিতে এই মঞ্চ গড়ে ওঠায় তিনি খুব তৃপ্ত হয়েছিলেন।

নিজেদের পার্টির সরকার ক্ষমতায়, তবুও লোকশিল্পীদের সঙ্গে তাঁদের দাবিতে জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে সরব হয়েছেন একাধিকবার। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় লোকশিল্পীরা বিভিন্ন স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেন। সেই বাদ্যযন্ত্রগুলি যাতে সরকারি ভাবে সংরক্ষিত হয়, সেই দাবিও তুলেছিলেন তিনি। নকুলবাবু বলতেন, কালের নিয়মে এই যে টুঙটুঙির মতো বাদ্যযন্ত্র, এগুলি তো হারিয়েই যাবে।

‘‘জেলার বিভিন্ন ইতিহাস যাতে দুই মলাটের মধ্যে বন্দি হতে পারে, সে জন্য গবেষকদের কাজে তাঁর সহায়তা ভোলার নয়’’— মন্তব্য জেলার ইতিহাস গবেষক দিলীপকুমার গোস্বামীর। তিনি বলেন, ‘‘আমি পঞ্চকোট নিয়ে যখন কাজ করছি, তখন বেশ কিছু কাজে আটকে পড়েছি। কোনও ভাবেই সেই কাজ করে ওঠা যাচ্ছে না। এক জনের পরামর্শে নকুলবাবুকে গিয়ে সমস্যার কথা জানাতেই তিনি নিজে শুধু সমাধানই করে দিলেন না, জানালেন তিনি নিজে পঞ্চকোটে যাবেন। আমাকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চকোট ঘুরেছিলেন।’’ দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘সেই সময়েই বুঝেছিলাম গোটা জেলাটা তাঁর কার্যত নখদর্পণে। এমন জায়গা যাতে পর্যটকেরা আসতে পারেন, তাই বন উন্নয়ন নিগমের মাধ্যমে পঞ্চকোটে অতিথি আবাস গড়ে তোলার উদ্যোগও নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এই কাজে অনেকেই সহায়তা করেছিলেন।’’

তাঁর শিক্ষার আন্দোলনের কথাও জেলাবাসী মনে রাখবে। পুরুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনেক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন