বান্দোয়ানের কাঁটাগোড়া গ্রাম দত্তক নিয়ে চলছে সামগ্রিক উন্নয়নের কাজ

বন্দুক হাতে টহল নয়, রোজগারের দিশাও দিচ্ছে সিআরপি

গ্রামে পুরুষ-মহিলাদের শুধু স্বনির্ভর করারই নয়, গ্রামের আদ্যন্ত উন্নয়ন করতে নেমে পড়েছে সিআরপি। এক মাস আগে বান্দোয়ানের কাঁটাগোড়া গ্রাম দত্তক নিয়ে ধাপে ধাপে সেখানে কাজ শুরু করেছেন জওয়ানেরা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:১৪
Share:

ট্রফি: সিআরপি কাঁটাগোড়া গ্রামে ফুটবল প্রতিযোগিতায় আয়োজন করেছিল। আটটি দলে দু’টি গ্রুপে খেলে। সোমবার ফাইনালে ২-১ গোলেনিউ তরুণ সঙ্ঘকে পরাজিত করে এমবিটিএস। পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় বিজয়ী ও রানার্স দলকে। নিজস্ব চিত্র

এত দিন এলাকায় বন্দুক কাঁধে টহল দিতেই তাঁদের দেখা যেত। অনেকে ভয়ে তাঁদের কাছে ঘেঁষতে চাইতেন না। এ বার সেই গ্রামবাসীদেরই কাছে ডেকে কী ভাবে তাঁদের রোজগার বাড়ানো যায়, সেই শলা দিচ্ছেন সিআরপি জওয়ানেরা। গ্রামে পুরুষ-মহিলাদের শুধু স্বনির্ভর করারই নয়, গ্রামের আদ্যন্ত উন্নয়ন করতে নেমে পড়েছে সিআরপি। এক মাস আগে বান্দোয়ানের কাঁটাগোড়া গ্রাম দত্তক নিয়ে ধাপে ধাপে সেখানে কাজ শুরু করেছেন জওয়ানেরা।

Advertisement

সিআরপি-র ১৬৯ নম্বর বাহিনীর সদর দফতর দুর্গাপুরে। বাহিনীর কমান্ডান্ট মনোজকুমার গৌতম জানান, তাঁদের জওয়ানেরা পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থানার কুচিয়া ও গুড়পানা, বরাবাজার থানার বেড়াদা, বাঁকুড়ার বারিকুল থানার সেরেনসাগড়া ও ঝিলিমিলি এবং বীরভূমের খয়রাশোল, অসমে একটি শিবির রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বাহিনীর তরফে ১০ জানুয়ারি আমরা কাঁটাগোড়া গ্রামকে দত্তক হিসেবে নিয়েছি। ওই গ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যে কাজ শুরু হয়েছে।’’

কেমন তাঁদের পরিকল্পনা? সিআরপি-র দুই সেকেন্ড কমান্ডান্ট উত্তম মিশ্র এবং কুমারেশ কুমার জানান, একটি শিশুকে দত্তক নিলে তার খাওয়া দাওয়া, লেখাপড়া এবং প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ভাল পরিবেশ দিতে হয়। সেই ভাবে তাঁরা কাঁটাগোড়া গ্রামের সমস্ত বাসিন্দাদের আয় বাড়ানো থেকে তাঁদের সুঅভ্যাস গড়ে তুলে গ্রামে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরির কাজ শুরু করেছেন।

Advertisement

কাঁটাগোড়া গ্রামকে কেন বেছে নেওয়া হল?

কুচিয়া ও গুড়পানা শিবিরের মধ্যবর্তী এলাকার এই কাঁটাগোড়া গ্রাম বেশ প্রত্যান্ত। ১১০০ বাসিন্দার মধ্যে বেশির ভাগই আদিবাসী। সকলেই বিপিএল তালিকাভুক্ত। চাকরিবাকরি নামমাত্র কয়েকজন করেন। অবস্থানগত সুবিধার জন্য দুই শিবিরের রক্ষীরাও কাজের দেখাশোনা করতে পারবেন।

কুচিয়া শিবিরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট মনোজ পান্ডে এবং গুড়পানা শিবিরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডান্ট টি ভগত সিং বলেন, ‘‘সমীক্ষা চালিয়ে এই গ্রামের চাহিদা কী জেনে বিভিন্ন কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের আলাদা ভাবে চিহ্নিত করেছিলাম।’’

তাঁরা জানান, ১০ জানুয়ারি দত্তক ঘোষণার দিন চাষিদের ডেকে তাঁদের হাতে নানা ধরনের ফসলের বীজ, সার এবং কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়েছেন। ফসলের পরিমাণ ও মান বাড়ানোর ব্যাপারে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। মহিলাদের স্বাবলম্বী গড়ে তুলতে সেলাই এবং তরুণ-তরুণীদের কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ শিবির চলছে। সোমবার গ্রামে কাজ পরিদর্শন করতে এসে বাহিনীর কর্তারা স্বনির্ভর দলের হাতে শালপাতা তৈরির মেশিন তুলে দেন। ফুটবলারদের খেলার জুতো, মোজা, জার্সি, ফুটবল ও নেট দেওয়া হয়। বাসিন্দাদের হাতে কম্বল, মশারি, রান্নার হাঁড়ি ও ছাত্রদের হাতে সৌর বাতি প্রভৃতি দেওয়া হয়েছে ।

ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যশিবির করে কয়েকজনকে চশমা, শ্রবণ যন্ত্র ও হুইল চেয়ার দেওয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছে। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে। বাসিন্দাদের জন্য স্কুলের বাইরে জলের সংযোগের জন্যে দু’টি আলাদা পয়েন্ট রাখা হয়েছে।

এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে ডাস্টবিন তৈরি করা হয়েছে। সবার জন্য শৌচাগারও হয়েছে। সোমবার সেখানে উপস্থিত থাকা বিডিও (বান্দোয়ান) মহাদ্যুতি অধিকারী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকেও সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’’ স্বনির্ভর দলের সদস্য মালতি সিংহ, উর্মিলা সিংহ, অহল্যা মাহাতো বলেন, ‘‘এ রকম সহযোগিতা পেলে কয়েক বছরের মধ্যে গ্রামের ছবি বদলে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন