মাঠে অপেক্ষায় ওঁরা, এলেন না মুখ্যসচিব

মুখ্যসচিবের জেলা সফর বাতিল হওয়ায় হতাশ স্থানীয় মানুষ এবং আদিবাসী গাঁওতার নেতৃবৃন্দ।

Advertisement

পাপাই বাগদি

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:০৯
Share:

সরেজমিনে: হরিণশিঙায় পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষায় ছিলেন ওঁরা। ওঁরা মানে, মহম্মদবাজারের পাঁচামি এলাকার আদিবাসী মানুষজন। অপেক্ষায় ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিবের। তাঁরা শুনেছিলেন, বৃহস্পতিবার ডেউচা-পাঁচামি প্রস্তাবিত কয়লাখনি এলাকা পরিদর্শনে আসার কথা মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের। শেষ পর্যন্ত মুখ্যসচিবের জেলা সফর বাতিল হওয়ায় হতাশ স্থানীয় মানুষ এবং আদিবাসী গাঁওতার নেতৃবৃন্দ।

Advertisement

ডেউচা-পাঁচামি খনি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করতে এ দিন সিউড়িতে আসার কথা ছিল মুখ্যসচিব, বিদ্যুৎ সচিব, ভূমি সচিব -সহ রাজ্য সরকারের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের। শোনা গিয়েছিল, তাঁরা পাঁচামিও যাবেন প্রস্তাবিত খনি অঞ্চল দেখতে। সেই মতো এ দিন সকাল থেকেই এলাকায় পুলিশি ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। গোটা এলাকা কার্যত ছেয়ে গিয়েছিল পুলিশে। রাস্তার যানজট এড়াতে সকাল থেকেই বন্ধ করা হয়েছিল ওই এলাকার সমস্ত পাথার খাদান ও ক্রাশার। গাঁওতা নেতৃত্বের কাছে খবর থাকলেও স্থানীয় আদিবাসীদের বড় অংশই মুখ্যসচিব তাঁদের এলাকায় আসতে পারেন বলে জানতেন না। হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এলাকায় পরপর পুলিশের গাড়ি ঢুকতে দেখে অবাক হন স্থানীয়েরা। ।

পরে লোকমুখে খবর ছড়ায়, এলাকায় মুখ্যসচিব আসছেন। সেই মতো স্থানীয় বাসিন্দারা হরিণশিঙা মতিলাল মারান্ডি ফুটবল মাঠে জমায়েত হয়ে সকাল থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন মুখ্যসচিবের। তাঁরা আশায় ছিলেন, সরকারের শীর্ষ আমলার মাধ্যমে নিজেদের দৈনন্দিন সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছনোর। স্থানীয় নীলু টুডু, সাড়া হেমব্রম, সোনামণি কিস্করা বলছিলেন, ‘‘সকালে এত পুলিশ দেখে একটু ভয়ই পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো, কয়লাখনির কাজ শুরুর জন্য পুলিশ এসেছে। এ বার আমাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে হবে। পরে জানতে পারলাম কোনও এক মন্ত্রী আসছেন এখানে। তাই আমাদের সমস্যার কথা জানানোর জন্য একটি জায়গায় জড়ো হয়েছি।’’

Advertisement

বেলা ১১টা নাগাদ জানা যায়, কোন কারণে মুখ্যসচিবের জেলা সফর বাতিল হয়েছে। নীলু, সোনামণিরা বলেন, ‘‘এখন জানতে পারলাম উনি আসবেন না। আমরা ওঁর কাছে একটাই কথা বলতে চাই যে আমরা আমাদের জমি-বাড়ি ছাড়ব না। আমরা যেমন আছি, তেমনই কাজকর্ম করে বেঁচে থাকতে চাই। এই বিষয়টি জানানোর জন্যই আমরা অপেক্ষায় বসেছিলাম মুখ্যসচিবের জন্য।’’

তবে, এ দিন হরিণশিঙা গিয়ে বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। স্থানীয়েরা পুলিশ সুপারকে নিজেদের সমস্যার কথা জানান। আদিবাসী গাঁওতার সম্পাদক সুনীল সরেন বলেন, ‘‘মুখ্যসচিব আসবেন জেনে আমরা এলাকার সমস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলি। আমরা দেখেছি, মুখ্যমন্ত্রী দিঘার একটি অনুষ্ঠান থেকে এই এলাকায় খোলামুখ কয়লাখনি হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তিনি তো এখানে এসে কিছু দেখেননি। তাই এ দিন মুখ্যসচিব আসবেন শুনে প্রতিটি এলাকা থেকে লোক জমায়েত হয়েছিল।’’ সুনীল জানান, মুখ্যসচিবকে এলাকার মানুষের দাবিদাওয়া সংক্রান্ত স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিল। মূল দাবি, তাঁরা জমিহারা হতে চান না। তাঁরা তাঁদের জমিবাড়ি ও চাষবাস নিয়ে বেঁচে থাকতে চান।

গাঁওতার আর এক নেতা রবীন সরেনের বক্তব্য, সরকারি ভাবে এই অঞ্চলে খোলামুখ কয়লা খনি শিল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে বহু মানুষকে সরাতে হবে। সরকার ঘোষণা করেছে, যাঁদের সরানো হবে, তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। কিন্তু এ বিষয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন আছে। রবীনের কথায়, ‘‘পুনর্বাসন কী ভাবে দেওয়া হবে এবং কোথায় দেওয়া হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জমির বদলে চাকরির ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু সেই চাকরি সরকারি নাকি বেসরকারি, জানা নেই। জমির জন্য টাকার হিসেব কী হবে। এই প্রশ্নগুলো আমরা মুখ্য সচিবের কাছে তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছিলাম। হঠাৎ জানতে পারলাম তিনি আসছেন না। তাই এই সব প্রশ্নের উত্তরও জানা গেল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন