পাহাড়ে মাটি কাটার গাড়ি, কাজ বন্ধ

পাহাড় কাটা যাবে না বলে আগেই গোঁ ধরেছিলেন বাসিন্দারা। জীবন-জীবিকা ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে তাঁরা আন্দোলন করে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন। তখন ঠিক হয়েছিল, কাশীপুরের বড়রা পঞ্চায়েতের ধনারডি গ্রামের অদূরের ওই পাহাড়ের আশপাশের এলাকায় খনন কাজ হবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাশীপুর শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩১
Share:

মাটি কাটার মেশিনের কাচ ভাঙার পরে। কাশীপুরের ধনারডির কাছে তোলা নিজস্ব চিত্র।

পাহাড় কাটা যাবে না বলে আগেই গোঁ ধরেছিলেন বাসিন্দারা। জীবন-জীবিকা ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে তাঁরা আন্দোলন করে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন। তখন ঠিক হয়েছিল, কাশীপুরের বড়রা পঞ্চায়েতের ধনারডি গ্রামের অদূরের ওই পাহাড়ের আশপাশের এলাকায় খনন কাজ হবে না। কিন্তু কাজের বরাতপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাটি ফের পাহাড়ের নীচে মাটি খুঁড়তে শুরু করেছে। এই অভিযোগ তুলে শনিবার মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। অভিযোগ, মাটি কাটার জন্য আনা জেসিবি মেশিনের কাচ ভাঙচুর করা হয়। খুলে দেওয়া হয় ট্রাক্টরের চাকার হাওয়া। তবে ওই সংস্থার তরফে পুলিশের কাছে ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ জানানো হয়নি। ঘটনাস্থলে যায়নি পুলিশ বা প্রশাসনের কর্তারাও।

Advertisement

কাশীপুরের বড়রা পঞ্চায়েতের পলসড়া মৌজায় পাহাড় কেটে পাথর বের করার কাজ গত বছরে শুরু করেছিল রাজ্যের মাইনিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন (ডব্লইউবিএমডিটিসি)। তারা আবার কাজের বরাত দিয়েছিল কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থাকে। কিন্তু পাহাড় কাটা হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, মূলত এই দাবিতে পাহাড় বাঁচাতে গত বছরের জুন মাসে আন্দোলনে নামেন স্থানীয় ধনারডি, মুরলু, রাঙ্গুনীগোড়া-সহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। ওই গ্রামগুলির বাসিন্দারা আবার আদিবাসী সম্প্রদায়ের। আন্দোলনের জেরে কাজ বন্ধ করে দেয় ওই সংস্থা। পরে পলসড়ার এই প্রকল্প ঘিরে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে তৎকালীন সময়ে শাসকদলের বিরোধ বেঁধেছিল। সমস্যা মেটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে। নবান্নে কমিটির নেতাদের ডেকে ২৪ সেপ্টেম্বর আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী। আলোচনায় স্থির হয়েছিল প্রকল্প আপাতত স্থগিত থাকবে। তবে পাহাড় বাদ দিয়ে অন্যত্র মাটি খুঁড়ে পাথর বের করার কাজ করতে পারবে এমডিটিসি।

গত বছরের ওই বৈঠকের পরে প্রকল্পের সমস্ত কাজই বন্ধ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শনিবার ধনারডি গ্রামের পাহাড়ের নীচে একটি জেসিবি ও ট্রাক্টর পাঠিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করে ওই বেসকরারি সংস্থা। খবর চাউর হতেই মহিলা-সহ শদুয়েক লোকজন পাহাড়ের কাছে গিয়ে গাড়ি দু’টি আটকে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ।

Advertisement

ধনারডির বাসিন্দা তথা কমিটির অন্যতম নেতা জয়ধন মান্ডির দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে স্থির হয়েছিল পাহাড় সহ পাহাড়ের এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকায় কোনও রকম খনন কাজ হবে না। কিন্তু শনিবার ওই সংস্থা পাহাড়ের নিচেই মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু করে। গ্রামবাসী সেই কাজ আটকেছে।” তবে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা মানতে চাননি জয়ধনবাবুরা।

এ দিকে, ওই সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, বৈঠকের পরে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পরে শনিবার রাস্তা করার জন্য মাটি সমতল করতে দু’টি গাড়ি পাঠানো হয়েছিল। পাহাড় কাটার জন্য গাড়ি যায়নি।

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও ওই বৈঠকে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে স্থির হয়েছিল পাথর বের করার জন্য পাহাড় কাটা হবে না। শনিবার কেন ওই সমস্যা ফের হয়েছে সেই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।” তাঁর মতে, ওই সংস্থার সঙ্গে স্থানীয়দের কোনও ভুল বোঝাবুঝিও হয়ে থাকচে পারে। প্রয়োজনে স্থানীয় লোকজন ও সংস্থাকে নিয়ে ফের আলোচনায় বসা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন