হঠাৎ ঝড়ে উড়ল চালা, পড়ল গাছও

বাঁকুড়ার আবহাওয়া পরিমাণ কেন্দ্র সূত্রে খবর, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত শহরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৬.১ মিলিমিটার। পুরুলিয়াতেও বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হয়। জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে, বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৮.৪ মিলিমিটার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০১:১৬
Share:

বিপত্তি: গঙ্গাজলঘাটির দুর্লভপুরে অল্প ঝড়ে পড়েছে গাছ। নিজস্ব চিত্র

চৈত্রের তাপে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া পুকুরে জল জমেছে। বৈশাখী তাপপ্রবাহ থেকেও নিস্তার মিলেছে। শুক্রবারের সকাল থেকে বৃষ্টিতে এই পর্যন্ত প্রাপ্তিতে খুশি দুই জেলার মানুষ। কিন্তু সেই সঙ্গেই মনে খচখচ করছে ঘুর্ণিঝড় ফণী কী রূপ নেবে। তবে, দুপুর প্রায় ২টো নাগাদ কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে লন্ডভন্ড অবস্থা হয় গঙ্গাজলঘাটির দুর্লভপুর এলাকার কয়েকটি পাড়ার।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই বাঁকুড়ার আকাশের মুখ ছিল ভার। কখনও ভারী বর্ষণ আবার কখনও ইলশে গুঁড়ির মত বৃষ্টিও হয়েছে দফায় দফায়। মাঝে মাঝে বৃষ্টি থেমেছে। আবার শুরু হয়েছে। বাঁকুড়ার আবহাওয়া পরিমাণ কেন্দ্র সূত্রে খবর, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত শহরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩৬.১ মিলিমিটার। পুরুলিয়াতেও বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হয়। জেলা কৃষি দফতর জানিয়েছে, বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৮.৪ মিলিমিটার।

এরই মধ্যে দুপুরে দুর্লভপুর চটি থেকে আচমকাই ঝড় বয়ে যায় নিধিরামপুরের দিকে। তাতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ঝড়ের দাপটে ওই এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ির টিনের চালা উড়ে কয়েকশো মিটার দূরে গিয়ে পড়ে।

Advertisement

সতর্ক: বাঁকুড়া শহরে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের প্রস্তুতি। শুক্রবার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল গোস্বামী বলেন, “হঠাৎ হেলিকপ্টারের মত তীব্র আওয়াজ তুলে ঝড় আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিমেষে এলাকার কিছু টিনের ছাউনি-সহ বেশ কিছু গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে যায়।’’ বিডিও (গঙ্গাজলঘাটি) সুশান্তকুমার বসু জানান, ওই গ্রামের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট নিতে ব্লক দফতরের তরফে লোকজন পাঠানো হয়েছে। যাঁদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অসীমকুমার বিশ্বাস বলেন, “দুপুর পর্যন্ত জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিকই রয়েছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে গঙ্গাজলঘাটির ঘটনাটি ছাড়া কোথাও কোনও রকম সমস্যা হচ্ছে বলে খবর আসেনি। এখন দেখার রাতে কি হয়! তবে আমরা সবরকম ভাবেই প্রস্তুত।”

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল জানাচ্ছেন, সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কাঁচা বাড়িতে যাঁরা বসবাস করেন তাঁদের উপর বিশেষ নজর রাখার। ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হলেই দ্রুত সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনাও করা হয়েছে।

এ দিকে, দিনভর বৃষ্টি এবং ঝড়ের আশঙ্কায় এ দিন দুই জেলাতেই রাস্তাঘাট তুলনায় ফাঁকা ছিল। পুরুলিয়া জেলা বাসমালিক সংগঠনের সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘রুটে বাস থাকলেও সকাল থেকে যাত্রী খুবই কম ছিল। দুপুরের পর বৃষ্টি বাড়ায় যাত্রী আরও কমে যায়। বাসগুলি কার্যত ফাঁকাই ছুটেছে।’’

যদিও এ দিন দুপুরে মানবাজার বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে পুঞ্চার বাসিন্দা অমিয় পতি বলেন, ‘‘একটাও বাস দেখছি না। কী ভাবে বাড়ি ফিরব বুঝতে পারছি না।’’ বান্দোয়ানে সকাল থেকেই বৃষ্টি নেমেছিল। বাসস্ট্যান্ডের খাবারের দোকানি পঙ্কজ পরামানিক বলেন, ‘‘লোকজন নেই। বিক্রিবাট্টাও নেই।’’ একই ছবি আদ্রা, কাশীপুর, রঘুনাথপুর, বলরামপুর-সহ প্রায় সর্বত্রই।

পুরুলিয়া শহরের সাহেববাঁধে শিকারা এ দিন বন্ধ রাখা হয় বলে জানিয়েছেন পুরসভার কাউন্সিলর বিভাস দাস। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুরসভার কর্মীদের প্রস্তত থাকতে বলেছি। গাছ উপড়ে পড়লে কেটে সরানোর জন্য দড়ি ও করাত মজুত রাখা হয়েছে।’’

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পুরুলিয়া জেলার তরফেও জানানো হয়েছে, সারা জেলা জুড়েই তাঁদের কর্মীরা বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন। ঝালদা পুরসভার তরফে মাইকে ঘোষণা করা হয়, অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সমস্যায় পড়লে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বিকেলে বলেন, ‘‘এখনও কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। প্রশাসন পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে।’’

এ দিকে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় এ দিনই বাঁকুড়ার কয়েকটি বহুতলের বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে চলে যান। শহর সংলগ্ন বিকনা এলাকার একটি আবাসনের বাসিন্দা মানু কর্মকার এ দিনই আবাসন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়িতে চলে যান।

তিনি বলেন, “ঝড়ের তীব্রতার যেমন পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, তাতে বহুতলের আবাসনে থাকতে ভরসা পাচ্ছি না। তাই ঝুঁকি না নিয়ে সপরিবারে দেশের বাড়ি লক্ষ্মীসাগরে চলে যাচ্ছি।” মানুদেবীর মত আরও বেশ কিছু আবাসনের বাসিন্দাই এ দিন নিজেদের বাড়ি ফিরে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। জেলাবাসীর এখন একটাই কথা শুক্রবারের রাতটা ঠিকঠাক পার হলে বাঁচা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন