সিআইডি তদন্তের দাবি যুব নেতার

অভিযোগে যাদের নাম ছিল তাদের সকলকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অথচ তারপরেও রাইপুরের ব্লক তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি অনিল মাহাতো খুনের ঘটনায় পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অনিলবাবুর অনুগামীরাই। দলের তরফে এলাকায় পোস্টার দেওয়া হল সিআইডি তদন্তের দাবিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাইপুর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২১
Share:

রাইপুর থানার দেওয়ালেই পড়ল পোস্টার। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।

অভিযোগে যাদের নাম ছিল তাদের সকলকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অথচ তারপরেও রাইপুরের ব্লক তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি অনিল মাহাতো খুনের ঘটনায় পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অনিলবাবুর অনুগামীরাই। দলের তরফে এলাকায় পোস্টার দেওয়া হল সিআইডি তদন্তের দাবিতে। যদিও জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে। খুনের প্রকৃত কারণ খুঁজে পেতে যা যা করণীয় পুলিশ তাই করছে।”

Advertisement

গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে মটগোদায় নিজের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন অনিলবাবু। ওই ঘটনায় রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিনাথ মণ্ডল, বনভূমি কর্মাধ্যক্ষ অসিতবরণ মাহাতো-সহ দলেরই অনিলবাবুর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী তৎকালীন ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর ঘনিষ্ঠ সাত তৃণমূল নেতা ও কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন নিহত নেতার স্ত্রী সুলেখা মাহাতো। পুলিশ ধাপে ধাপে সব অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করে। ধৃতেরা এতদিন পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। বৃহস্পতিবার ধৃত সাতজনকে ফের খাতড়া আদালতে পেশ করা হলে সবাইকে ১৪ দিনের জেলা হাজতের নির্দেশ হয়।

ইতিমধ্যে ব্লক সভাপতির পদ জগবন্ধুবাবুর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে দল ওই পদে বসিয়েছে সুলেখাদেবীকে। অভিযুক্ত সাতজনের গ্রেফতারি এবং সুলেখাদেবীকে ব্লক সভাপতি করা হওয়ায় কিছুটা হলেও অনিল-গোষ্ঠীর ক্ষোভ কমে।

Advertisement

কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই ফের রাইপুরের ছবি পাল্টে গেল। খুনের পরেই সিআইডি তদন্তের দাবি তুলেছিলেন জগবন্ধুবাবু। আর এ দিন রাইপুরের বিভিন্ন এলাকায় অনিলবাবু খুনের ঘটনায় সিআইডি তদন্তের দাবি তুলে পোস্টার পড়ল রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূল ও ফুলকুসমা অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রসের তরফে। পোস্টারে লেখা হয়েছে— ‘অনিল মাহাতো খুনের তদন্ত অন্যপথে পরিচালিত হচ্ছে কেন? পুলিশ প্রশাসন জবাব দাও’। থানার দেওয়ালেও পোস্টার পড়ছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করার পরেও কেন পুলিশ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে? জবাবে অনিলবাবুর ঘনিষ্ঠ তথা রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি রাজকুমার সিংহ অভিযোগ করেন, “পুলিশ সঠিক পথে তদন্ত করছে না। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ খুনের পিছনে যে সব সূত্র খুঁজে পেয়েছে তা খতিয়ে না দেখে অনিলদার গাড়ির চালককে তিনদিন ধরে থানায় আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার নামে নির্যাতন চালিয়েছে।” তাঁর দাবি, তদন্ত বেপথে চালিত করতে চাইছে পুলিশ। তাঁর দাবি, অনিলদার গাড়ির চালককে অহেতুক থানায় আটকে রেখে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেই প্রমাণ এ বার তদন্ত অন্যপথে চালিত করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা পুলিশের উপর আস্থা হারিয়েছি বলেই সিআইডি তদন্ত চাইছি।”

তবে পুলিশের উপরেই আস্থা রাখছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা নিহতের স্ত্রী সুলেখাদেবী। এ দিন সন্ধ্যায় তিনি বলেন, “পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে বলে আমি খুশি। খুনিদের ধরা পুলিশের কাজ। পুলিশের উপরেই আমি সব ছেড়ে দিয়েছি।” কিন্তু রাজকুমারবাবু যে আস্থা হারিয়েছেন? সুলেখাদেবীর বক্তব্য, “এখনও আমি শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি। রাজকুমার হয়তো তদন্তে কিছু খামতি পেয়ে থাকতে পারেন। তাই সিআইডি তদন্তের দাবি তুলছেন।”

গ্রেফতারির পরে পুলিশি তদন্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন জেলা সভাধিপতি তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী। কিন্তু এ দিন পোস্টার-পর্বের পরে তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন