বক্রেশ্বরের ছাইয়ের যথার্থ ব্যবহার, দাবি

দিনতিনেক আগে পানুরিয়ায় বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইপুকুর থেকে হু হু করে ছাই উড়ে এসে পড়ে কয়কেটি গ্রামে। বিপর্যস্ত হয় সেখানকার জনজীবন। প্রতিবাদে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৮ ০১:১৪
Share:

দূষণ: তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইপুকুরে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। —নিজস্ব চিত্র।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপন্ন ছাইয়ের পুনর্ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। শুক্রবার বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইপুকুর পরিদর্শনে এসে তিনি জানিয়েছেন, ১৪ মার্চের মধ্যেই তিনি এ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করবেন।

Advertisement

দিনতিনেক আগে পানুরিয়ায় বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইপুকুর থেকে হু হু করে ছাই উড়ে এসে পড়ে কয়কেটি গ্রামে। বিপর্যস্ত হয় সেখানকার জনজীবন। প্রতিবাদে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। ছাই সরানোর কাজ থামিয়ে, জল দিয়ে ছাই ভিজিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ। আইন মোতাবেক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বদলে ক্ষণস্থায়ী এই সমাধানসূত্রেই আপত্তি সুভাষবাবুর। দিল্লি যাওয়ার আগে সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধিকারিক ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে তা জানিয়েছেন তিনি।

এ দিন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার পুষ্পেন্দু সেন না থাকায় উচ্চপদস্থ কয়েক জন আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেন সুভাষবাবু। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উমাশঙ্কর এসের সঙ্গেও কথা হয় তাঁর। সুভাষবাবু বক্তব্য, গোটা দেশেই তাপবিদ্যুৎ নিয়ে একই সমস্যা। এ রাজ্যে বিদ্যুৎ চাহিদার ৯৭ শতাংশ মেটায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিই। বিদ্যুৎ তৈরিতে বিপুল পরিমাণ ছাই উৎপন্ন হচ্ছে। কয়লার গুণগত মান খারাপের জন্য ছাইয়ের পরিমাণ বাড়ছে। আইন মেনে ছাইয়ের পরিকল্পিত ও বাধ্যতামূলক ব্যবহার দূষণ থেকে মুক্তি দিতে পারে। বাঁচে পরিবেশ। সে জন্যই দেশের সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার ভাবনা।

Advertisement

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি ইউনিট ২৪ ঘন্টা চালু থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ২১০ মেগাওয়াট। প্রতি ঘণ্টায় কয়লার খরচ ১১০ টন। দিনে ছাই উৎপন্ন হয় ৮০০ টন। ওই ছাইয়ের দু’টি ভাগ রয়েছে— ফ্লাই অ্যাশ ও বটম অ্যাশ। বটম অ্যাশ উৎপাদিত মোট ছাইয়ের ২০ শতাংশ। যা জলের সঙ্গে মিশে ছাইপুকুরে জমা হয়। বক্রেশ্বরে ৫টি কেন্দ্র চালু। কত পরিমাণে ছাই উৎপাদিত হয় তা এই হিসেবেই স্পষ্ট।

সুভাষবাবু জানান, আইন অনুযায়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি নির্মাণ ফ্লাই-অ্যাশ ইট দিয়ে নির্মাণ করার কথা। একটি নির্মাণও কৃষি জমির উপরিভাগ থেকে নেওয়া মাটি থেকে তৈরি ইটে করা চলবে না। সিমেন্ট প্ল্যান্টে এখন ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার ৩০-৩৫ শতাংশ। গুণমান এক রেখে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে সেই সিমেন্ট প্ল্যান্টেই ৫০ শতাংশ ছাই ব্যবহার করা সম্ভব। তাঁর সংযোজন,
শুধু এই দু’টি ক্ষেত্রে ছাইয়ের ব্যবহার বাড়ানো গেলেই বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত ছাইয়ের ব্যবহার বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। বটম-অ্যাশ ছাইপুকুর থেকে তুলে খনি ভরাট, রাস্তা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু তা সঠিক ভাবে করা হচ্ছে না। সে জন্য পরিবেশ, খনি, নগরোন্নয়ন, বিদ্যুৎ, শিল্প-বাণিজ্য, হাইওয়ে অথরিটি দফতরের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

দূষণের জেরে অতীতেও পরিবেশ আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে। কেন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে জরিমানা করা হবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছিল আদালত। সুভাষবাবুই ২০১৪ সালের শেষ দিকে বক্রেশ্বরে ভরে যাওয়া ছাইপুকুর থেকে ছাইমিশ্রিত জল চন্দ্রভাগা নদীতে মিশে দূষণ ছড়াচ্ছে বলে মামলা ঠুকেছিলেন। আদালতের নির্দেশে নদী থেকে ছাই পরিষ্কার করার পাশাপাশি দ্বিতীয় ছাইপুকুর তৈরির কাজও শুরু হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন