মেয়ের বিয়ে, মাথায় হাত

নোটকাণ্ডে সরকারি বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে কিছু রসিকতাও মানুষ জনের মুখে মুখে ঘুরছে। তেমনই একটি রসিকতা হল, এক যুবক ব্যাঙ্কে গিয়ে নিজের বিয়ের কার্ড দেখিয়ে আড়াই লক্ষ টাকা চেয়ে বসেন। ম্যানেজার কিছুতেই তাকে বুঝিয়ে উঠতে পারেন না, আড়াই লক্ষ টাকা তুলতে হলে তাঁর অ্যাকাউন্টে সেই পরিমাণ টাকা থাকতে হবে!

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২৭
Share:

ডাকঘরে হতাশ কাজলবাবু।

নোটকাণ্ডে সরকারি বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে কিছু রসিকতাও মানুষ জনের মুখে মুখে ঘুরছে। তেমনই একটি রসিকতা হল, এক যুবক ব্যাঙ্কে গিয়ে নিজের বিয়ের কার্ড দেখিয়ে আড়াই লক্ষ টাকা চেয়ে বসেন। ম্যানেজার কিছুতেই তাকে বুঝিয়ে উঠতে পারেন না, আড়াই লক্ষ টাকা তুলতে হলে তাঁর অ্যাকাউন্টে সেই পরিমাণ টাকা থাকতে হবে!

Advertisement

হাটেবাজারে ভেসে বেড়ানো এই ধরণের রসিকতা নির্মম ভাবে বাজছে খয়রাশোলের কৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি কাজলকান্তি পালের কানে। আগামী শুক্রবার তাঁর একমাত্র মেয়ের বিয়ে। শুধু এই দিনটার জন্য অনেক কষ্টে জমানো টাকা রয়েছে তাঁর অ্যাকাউন্টে। তিল তিল করে ওই টাকা জমাতে কাজলবাবুর মাথা থেকে অনেক বাড়তি ঘাম ঝরে পড়েছে পায়ে। সেই সমস্ত ব্যক্তিগত ইতিহাস এখন টাকার সঙ্গে আটকে রয়েছে খয়রাশোল উপ-ডাকঘরের অ্যাকাউন্টে।

বস্তুত, জেলার অনেক ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এবং উপ-ডাকঘরে গত কয়েক দিন ধরে আটকে রয়েছে অনেক মানুষজনের মাসের মাইনের টাকা, ছেলেমেয়ের বিয়ের টাকা, সংসার খরচের টাকা। সেরকমই একজন হলেন কাজলবাবু। এক সপ্তাহ আগে সমস্ত নথিপত্র জমা করে টাকা তোলার আবেদন করেছিলেন উপ-ডাকঘরে। সেখান থেকে বিডিও-র কাছে। তারপর এলাকার জনপ্রতিনিধি। তাঁরা আবেদনে সই করে লিখে দেন, সত্যি ওই ব্যক্তির মেয়ের বিয়ে রয়েছে—অ্যাকাউন্টে জমা নিজের টাকা তাঁর সত্যি প্রয়োজন। আবেদন নিয়ে ফের যেতে হয় পোস্টাল সুপারের কাছে। তিনিও ছাড়পত্র দেন। সমস্ত সইসাবুদ নিয়ে ডাকঘরে গিয়ে দেখা যায় টাকাই নেই। বিয়ের টাকা তো অনেক বড় ব্যাপার, সংসার খরচের সামান্য টাকাও পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। সেই থেকে রোজ ছ’ কিলোমিটার উজিয়ে ডাকঘরে যাচ্ছেন কাজলবাবু। সারাদিন বসে থাকছেন, কখন টাকা আসে সেই আশা নিয়ে। শনিবার দুপুরে ডাকঘরের সিঁড়িতে বসে তিনি বলেন, ‘‘কোথায় যাব, কী করব—কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।’’

Advertisement

একই রকমের চিন্তায় রয়েছেন পরিবারের অন্যরাও। কাজলবাবুর স্ত্রী দীপাদেবী বলেন, ‘‘গ্রামের আটশো জন নিমন্ত্রিত। এখনও মণ্ডপ হয়নি, খাওয়াদাওয়ার আয়োজন বাকি। শাড়ি গয়না পর্যন্ত কেনা হয়নি। কী ভাবে কী হবে ভেবে কান্না পাচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে বিয়েটাই না ভেস্তে যায়!’’

সমস্যা কোথায়? খোঁজ নিতে গিয়ে জল গড়াতে গড়াতে সটান গিয়ে ঠেকল রিজার্ভ ব্যাঙ্কে। খয়রাশোল উপ-ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মিলনকুমার সৌমণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘আমার কাছে যদি উপায় থাকত ওঁকেই সবার আগে টাকা দিয়ে দিতাম। কিন্তু কী করব! গত চার দিন কোনও টাকাই আসেনি।’’ ওই উপ-ডাকঘর থেকে টাকা তুলতে এসে সবাইকেই গত কয়েক দিন ধরে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। শুধু খয়রাশোল নয়, সিউড়ির অধিকাংশ উপ-ডাকঘরের ছবিটা এরকমই।

সিউড়ি মূখ্য ডাকঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অবস্থার জন্য দায়ী একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিউড়ি শাখা। ৩০ নভেম্বর থেকে কোনও টাকা তারা ডাকঘরে পাঠায়নি। ফলে টাকা পাঠানো যায়নি উপ-ডাকঘরগুলিতে। ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার অমরেশ ঝা অবশ্য বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

তবে সমস্যার মূল যে একটি ব্যাঙ্কের একটি শাখায় নেই সে কথা বলছেন জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দীপ্তেন্দ্রনারায়ণ ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘ওই ব্যাঙ্ক ডাকঘরে টাকা দেবে কী করে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে এই জেলার কোনও চেস্টেই টাকা আসেনি। কোনও ক্রমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কিছু ব্যাঙ্ক।’’ তাঁর অভিযোগ, অন্য অনেক জেলায় টাকা ঢুকলেও বীরভূম বাদ পড়ছে। দীপ্তেন্দ্রবাবু জানান, শনিবার পর্যন্ত তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। মঙ্গলবার টাকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে কাজলবাবুর জন্য কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছেন জেলা পোস্টাল সুপারিনটেন্ডেন্ট পরিমল মিত্র। তিনি জানান, অনেক চেষ্টা চরিত্র করে সিউড়ির ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে কিছু টাকা পাওয়া গিয়েছে। তার থেকে কাজলবাবুর সমস্যা মেটানো যায় কি না দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন