মানতে নারাজ প্রশাসন

ইঞ্জিনিয়ারের প্রাণ নিল ডেঙ্গি

গায়ে ধুম জ্বর নিয়ে মালদহ থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন। টানা পাঁচ দিন জ্বরে ভুগে হঠাৎই থমকে গেল এক তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের জীবন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৮
Share:

মৃত হাসিবউদ্দিন সরকার।

গায়ে ধুম জ্বর নিয়ে মালদহ থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন। টানা পাঁচ দিন জ্বরে ভুগে হঠাৎই থমকে গেল এক তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের জীবন।

Advertisement

বুধবার গভীর রাতে মাড়গ্রামের ওই ঘটনায় পরিবারের দাবি, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েই হাসিবউদ্দিন সরকার নামে ওই তরুণের মৃত্যু হয়েছে। রামপুরহাটের একটি বেসরকারি প্যাথোলজি ল্যাবরেটরিতে তাঁর রক্তের নমুনা এনএস-১ পজিটিভ হয়েছে। যদিও কোনও সরকারি হাসপাতালে মৃত যুবকের রক্তের অ্যালাইজা টেস্ট করানো হয়নি। তাই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েই ওই ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যু হয়েছে, তা মানতে নারাজ প্রশাসন।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার হাসিব বর্তমানে মালদহে একটি বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ইংরেজবাজার থানা এলাকার চুড়িপট্টি এলাকার একটি বাড়িতে স্ত্রী এবং তিন বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে ভাড়ায় থাকতেন। মৃত ইঞ্জিনিয়ারের বাবা সমীরউদ্দিন জানান, শনিবার সকাল ১১টা নাগাদ পুত্রবধূ তাঁকে ফোনে খবর দেন, শুক্রবার গভীর রাত থেকে প্রবল জ্বরে পড়েছেন হাসিব। স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখানোর পরেও জ্বর ছাড়েনি শুনে রবিবার পুত্রবধূকে ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসার পরামর্শ দেন তিনি। ওই দিন সন্ধ্যায় গায়ে ধুম জ্বর নিয়েই সপরিবারের মাড়গ্রামে সরকার পাড়ায় নিজের বাড়ি ফেরেন ওই ইঞ্জিনিয়ার।

Advertisement

সোমবার সকালে ছেলেকে রামপুরহাটে নিয়ে গিয়ে এক চিকিৎসককে দেখান সমীরউদ্দিন। তাঁর পরামর্শে স্থানীয় এক বেসরকারি প্যাথোলজি ল্যাবরেটরিতে হাসিবের রক্তের নমুনা পরীক্ষাও করানো হয়। সমীরউদ্দিনের দাবি, ‘‘পরীক্ষার ফলে ছেলের রক্তের নুমনা এনএস-১ পজিটিভ ধরা পড়ে। প্লেটলেটের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৬২ হাজার। বুধবার রক্ত পরীক্ষায় প্লেটলেট কমে ১ লক্ষ ৪০ হাজার হয়েছিল। অন্যান্য পরীক্ষায় লিভারের অবস্থাও খারাপ পাওয়া যায়।’’ অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিন সন্ধ্যাতেই হাসিবকে রামপুরহাট জেলা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়কে দেখায় পরিবার। অসুস্থ হাসিবকে পরীক্ষা করে তখনই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ বা কলকাতার কোনও হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করার পরামর্শ দেন অরিন্দমবাবু। অরিন্দমবাবুর কথায়, ‘‘ওই যুবকের দেহে প্রচণ্ড জ্বর ছিল। লিভারের অবস্থাও খারাপ ছিল। মস্তিষ্কে ভাইরাস সংক্রামিত হওয়ায় খিঁচুনির উপসর্গ ছিল। তাই ওঁকে বাইরের হাসপাতালে রেফার করেছিলাম।’’

যদিও সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন রোগীর পরিবারের লোকেরা। সে দিন রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করে বৃহস্পতিবার সকালে রোগীকে কলকাতা বা বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবেন সমীরবাবুরা। যদিও রাতেই হাসিবের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। সমীরবাবু বলেন, ‘‘বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার পথে ছেলের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। ওকে বাড়িতে নিয়ে চলে আসি।’’ গভীর রাতে মাড়গ্রামের বাড়িতে হাসিবের সম্পর্কে ভাই, পেশায় চিকিৎসক এমএস আতিক রোগীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সমীরবাবুর দাবি, ‘‘ছেলে মালদহে যে বাড়িতে ভাড়া থাকত, তার মালিকের দুই মেয়েও সম্প্রতি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিল। তার পরে ছেলেও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’’

যদিও ওই তরুণের মৃত্যু ডেঙ্গিতে হয়েছে না হয়নি, তা বলা সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন রামপুরহাট ২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিএমওএইচ অভিজিৎ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘রোগী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত কিনা, তা যাচাইয়ের জন্য অ্যালাইজা টেস্ট করানো দরকার ছিল। সেই ধরনের পরীক্ষা ওই যুবকের করানো হয়নি।’’ তাই এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ দেখছে না প্রশাসনও। রামপুরহাট ২ বিডিও প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গি প্রতিরোধে এলাকায় সচেতনতা শিবির করা হয়েছে। এখনও সেই কর্মসূচি চালু আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা বাইরে থেকে জীবাণু বহন করে এখানে শেষ মুহূর্তে চিকিৎসা করছেন।’’ হাসিবের মৃত্যুর ক্ষেত্রে দেরিতে চিকিৎসা শুরু হওয়াকেও দুষছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের একাংশের মতে, সময় মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে ওই তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের এমন করুণ পরিণতি নাও হতে পারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন