দাঁতে চাষির দেহ ফুঁড়ে দিল হাতি

হাতির হানায় মৃত্যু মিছিল লেগেই রয়েছে বাঁকুড়ায়। শনিবার খুব ভোরে হাতির হামলায় পাত্রসায়র এলাকায় মৃত্যু হল আরও এক জনের। মৃতের নাম জগন্নাথ ঘোষ (৪৭)। বাড়ি পাত্রসায়র থানার কেশবপুর গ্রামে। মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোরে জমিতে জল সেচ করতে গিয়ে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ০১:১০
Share:

হাতির হানায় মৃত্যু মিছিল লেগেই রয়েছে বাঁকুড়ায়। শনিবার খুব ভোরে হাতির হামলায় পাত্রসায়র এলাকায় মৃত্যু হল আরও এক জনের। মৃতের নাম জগন্নাথ ঘোষ (৪৭)। বাড়ি পাত্রসায়র থানার কেশবপুর গ্রামে। মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোরে জমিতে জল সেচ করতে গিয়ে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এই ঘটনা নিয়ে গত পাঁচ মাসে শুধু পাত্রসায়র এলাকাতেই হাতির আক্রমণে প্রাণ গেল মোট পাঁচ জনের। পাত্রসায়র রেঞ্জ আধিকারিক পৃথ্বীশ ঘোষ জানান, শুক্রবার রাতে বনবীরসিংহ, মরাচৈতার জঙ্গল থেকে পাঁচটি হাতি নারায়ণপুর ও হামিরপুর পঞ্চায়েত এলাকায় ঢুকে পড়ে। সেই দলে রয়েছে একটি দাঁতাল। সেটিই কেশবপুর গ্রামে ঢুকে জগন্নাথবাবুকে মারে। পৃথ্বীশবাবু জানান, হাতিগুলি যাতে লোকালয়ে না ঢুকে পড়ে সে দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে বনকর্মীদের।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত নভেম্বর মাসের পর থেকেই প্রায় দিনই পাত্রসায়র থানার হামিরপুর, নারায়ণপুর, বেলুট-রসুলপুর, জামকুড়ি, কুশদ্বীপ পঞ্চায়েত এলাকায় হাতির দল ঢুকে পড়ে হামলা চালাচ্ছে। ফসল নষ্ট করার পাশাপাশি প্রাণহানিও করছে হাতির দল। পরপর এই ঘটনায় আতঙ্কিত জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির মানুষ। নভেম্বর মাসে হামিরপুর, চাঁপাবনি ও কামারবেড়া গ্রামে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে হাতির আক্রমণে। ফেব্রুয়ারি মাসে নতুনগ্রামে এক খেতমজুরের মৃত্যু হয়েছে। একই হাতির দল এই কাজ করেছে বলে বন দফতরের অনুমান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় চাষি জগন্নাথবাবুর বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। মৃতের ছেলে বছর ষোলোর সুমন ঘোষ বলে, “মাঝরাতে বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে জমিতে জল দিতে গিয়েছিলেন। রাত দু’টো নাগাদ গ্রামে হঠাৎ হাতির দলটি ঢুকে পড়ে গ্রাম লাগোয়া জমিতে হানা দেয়। সেখানেই বাবাকে হাতিটা শুঁড়ে করে জড়িয়ে ধরে জমিতে আছাড় মারে। দাঁত দিয়ে শরীর ফুঁড়ে পালিয়ে যায়।” এদিন ভোরে জমিতে পড়েছিল জগন্নাথবাবুর দেহ। খবর পেয়ে গ্রামের বাসিন্দারা এবং পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে পাত্রসায়র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জগন্নাথবাবুকে মৃত বলে জানান। শনিবার বিষ্ণুপুর জেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালে দেহটির ময়নাতদন্ত করা হয়। এলাকার বাসিন্দা তথা বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য তাপস বাড়ী বলেন, “হাতিরা ঘনঘন জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। ফসল নষ্ট হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রাণহাণি আটকানোর জন্য বনদফতরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু মানুষের আতঙ্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে।’’ পাত্রসায়র রেঞ্জ আধিকারিক বলেন, “খাবারের সন্ধানে জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে হাতিরা। তাদের ক্রমাগত তাড়িয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু হাতি ঢুকে পড়লেই এলাকার বাসিন্দারা তাদের ক্রমাগত উত্যক্ত করছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাতিরা প্রাণহানি ঘটাচ্ছে।’’ তিনি জানান, অযথা হাতিদের উত্যক্ত না করা এবং হাতির পিছু পিছু না যাওয়ার জন্য এলাকায় প্রচার চালানো হচ্ছে। বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার দলটি শালি নদী পেরিয়ে দামোদরের দক্ষিণ পাড়ে বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েত এলাকার শালখাঁড়া এবং মামুদপুর গ্রাম ও লাগোয়া এলাকায় ছিল। পরে বর্ধমানের গলসি এলাকায় যায়।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন