বেআইনি লগ্নি সংস্থা

ধৃতদের নিয়ে ফের তল্লাশি

শ্বাশত গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্টিজ নামে ওই লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে গত বছর কলকাতার লেক থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন এক আমানতকারী। পরে আরও কিছু অভিযোজ জমা পরে ডিইও-র কাছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আদ্রা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৪২
Share:

তদন্ত: আবাসনের নিচে চলছে নথিপত্র খতিয়ে দেখা। নিজস্ব চিত্র

ধৃত দুই ডিরেক্টরকে নিয়ে ফের আদ্রার বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সিমেন্ট কারখানা ও নার্সিংহোমে তল্লাশি চালাল ডিরেক্টরেট অফ ইকনমিক অফেন্সেস (ডিইও)। বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী অফিসার তথা ডিইও-র ডিএসপি প্রিয়ব্রত বক্সীর নেতৃত্বে চার জনের একটি দল আদ্রা থানার পুলিশের সাহায্যে ওই অভিযান করে। পরে লগ্নি সংস্থার মূল কর্তা সত্যরঞ্জন চৌধুরীর খোঁজে তাঁর আদ্রার রগুড়ি গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু এ দিনও বাড়িতে পাওয়া যায়নি সত্যরঞ্জন ও তাঁর স্ত্রী কল্পনা চৌধুরীকে। তবে কারখানা এবং নার্সিংহোম থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি এ দিন উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি ডিইও-র।

Advertisement

শ্বাশত গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্টিজ নামে ওই লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে গত বছর কলকাতার লেক থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন এক আমানতকারী। পরে আরও কিছু অভিযোজ জমা পরে ডিইও-র কাছে। তদন্তে জানা যায়, আরবিআই বা সেবি-র অনুমতি ছাড়া এ রাজ্য এবং পাশের বিহার ও ওড়িশা থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলেছে সংস্থাটি। গত ২৯ অগস্ট ডিইও-র এডিজি বিভূতিভূষণ দাসের নেতৃত্বে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে সংস্থার সিমেন্ট কারখানা ও আদ্রার নার্সিংহোমে অভিযান চালিয়ে সেগুলি সিল করে দেওয়া হয়। সংস্থার সম্পত্তি ও নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই সময়েই গ্রেফতার হন সংস্থার দুই ডিরেক্টর প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায় ও মানস দাঁ। রঘুনাথপুর থানার নন্দুকা গ্রামের প্রশান্ত সত্যরঞ্জনের আত্মীয়ও হন। পরে আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের আট দিনের ডিইও হেফাজতের নির্দেশ দেন। পরে কলকাতার বাগুইহাটির অশ্বীনিনগর থেকে জয়দেব বিশ্বাস নামে আর এক ডিরেক্টরকে গ্রেফতার করা হয় বলে ডিইও সূত্রে জানা গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার প্রশান্ত এবং মানসকে নিয়ে জেলায় তল্লাশি করতে আসে ডিইও। ডিইও সূত্রের খবর, ওই দুই ডিরেক্টরকে জেরা করে বেশ কিছু নথির কথা জানা গিয়েছে। অভিযান করে সেগুলিই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ আদ্রার নার্সিংহোমে আসে ডিইও-র দলটি। ধৃত দু’জনকে নিয়ে নার্সিংহোমের পাশে সংস্থার আবাসনে যাওয়া হয়। আবাসেনর একটি ঘরে সংস্থার মূল কর্তা সত্যরঞ্জনের অফিস ছিল। সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সংস্থার কর্মীদেরও জেরা করা হয়েছে।

Advertisement

তবে শ্বাশত গ্রুফ অফ ইন্ড্রাস্টিজ সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে সংস্থার মূল কর্তা সত্যরঞ্জন চৌধুরীর নাগাল পেতে চাইছে ডিইও। সূত্রের খবর, সত্যরঞ্জনই ওই সংস্থার মূল মাথা। তাঁকে না পাওয়ায় আরও কোথায় কোথায় সম্পত্তি কেনা হয়েছে, বেআইনি ভাবে তোলা অর্থ কোথায় লগ্নি করা হয়েছে— এই সমস্ত বিষয়ে বিশদে তথ্য পাচ্ছে না ডিইও। অগষ্ট মাসে যে দিন আদ্রা এবং রঘুনাথপুরে অভিযান হয়েছিল সে দিন সস্ত্রীক সত্যরঞ্জন হায়দরাবাদে রয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছিল। তাঁর গতিবিধি এখনও স্পষ্ট নয় ডিইও-র কাছে।

ধৃত তিন জন ডিরেক্টর লগ্নি সংস্থা সম্পর্কে বিশদ তথ্য দিতে পারেননি। তবে ডিইও জানতে পেরেছে, তোলা টাকার বেশির ভাগ নার্সিংহোম তৈরিতে খরচ করেছিলেন সত্যরঞ্জন। ওই কাজ্য খরচ হয়েছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

সূত্রের খবর, সত্যরঞ্জনের খোঁজ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাজ্য ভূমি দফতরের মাধ্যমে জেলার ভূমি দফতরের কাছে ইতিমধ্যেই ওই বেআইনি লগ্নি সংস্থার সম্পত্তি কেনাবেচার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ডিইও। রঘুনাথপুর ও আদ্রা এলাকায় যে সমস্ত ব্যাঙ্কে শ্বাশত গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্টিজের অ্যাকাউন্ট ছিল, সেই ব্যাঙ্কগুলিকে ওই সমস্ত অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করার জন্যও জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন