ঝালদা ১

আবাস যোজনায় দুর্নীতি, নিশানায় তৃণমূল

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে। এক জন গ্রাহকের আরএইচএসআইডি (রুরাল হাউসহোল্ড আইডেন্টিটি) নম্বর ব্যবহার করে অন্য জনকে এই প্রকল্পে বাড়ি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝালদা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

ঝালদার গ্রামে চোখ তালিকায়।— নিজস্ব চিত্র

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল তৃণমূল পরিচালিত ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে। এক জন গ্রাহকের আরএইচএসআইডি (রুরাল হাউসহোল্ড আইডেন্টিটি) নম্বর ব্যবহার করে অন্য জনকে এই প্রকল্পে বাড়ি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের। বিপিএল তালিকায় নামই নেই, এমন লোকেদের নামে বাড়ি বরাদ্দ করে প্রকল্পের অর্থ মঞ্জুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। ঠিক কী হয়েছে জানতে জেলাশাসকের কাছে তদন্ত দাবি করেছেন বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো।

Advertisement

অভিযোগের প্রাপ্তি স্বীকার করেছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী। তাঁর সাফ জবাব, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঘটনাটি ঝালদা ১ ব্লকের ঝালদা-দঁড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের। ঝালদা-দঁড়দা গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এই প্রকল্পের সুবিধা প্রাপকদের তালিকা তাদের নজরে আসতেই গোটা বিষয়টি সামনে আসে। নেপালবাবুর অভিযোগ, ‘‘এক জন বা দু’জন নয়, এই প্রকল্পে শুধুমাত্র একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই এখনও পর্যন্ত এ রকম ৩৯ জনের সন্ধান মিলেছে। যাঁদের আরএইচএসডি ব্যবহার করে অন্য জনকে প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ দুর্নীতির শেষ এখানেই নয়— বিধায়কের দাবি, ‘‘একই আরএইচএসডি নম্বর ব্যবহার করে একই ব্যক্তিকে দু’বারও টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

এই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ তাহেজামাল বলেন, ‘‘এই পঞ্চায়েত এলাকায় এই প্রকল্পে কারা সুবিধা পাবেন, সেই মর্মে সমস্ত সিদ্ধান্তই নিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি। আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। অর্থ বরাদ্দ হওয়ার পরে প্রকল্পের সাইট দেখে আমরা গোটা বিষয়টি জানতে পারি।’’ তালিকা দেখে বিষ্মিত স্থানীয় হুসেনডি গ্রামের শেখ হুসেন আহমেদ। তাঁর অভিব্যক্তি, ‘‘এটা কী হল! এ ভাবে গরিব মানুষের টাকা নয়ছয় করা হবে।’’ শেখ হুসেন আহমেদের দাবি, ‘‘শুধু আমাদের পঞ্চায়েত এলাকা থেকেই ৩৯ জনের সন্ধান মিলেছে। যাঁদের নম্বর ব্যবহার করে দুর্নীতি করা হয়েছে।’’

কংগ্রেসের দাবি, এই গ্রামে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কম নয়। কাঁটাডি গ্রামের শেখ আবদুল ভিক্ষে করে দিন চালান। ঘরদোর ভেঙে যাওয়ায় রাস্তার ধারে ত্রিপল টাঙিয়ে কোনও রকমে রাত কাটান। বৃদ্ধের প্রশ্ন, ‘‘স্ত্রী-র মৃত্যু হয়েছে চার বছর আগে। অথচ ওর নামে বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। কী ভাবে হল?’’ শেখ সাদিকের দিন চলে দিনমজুরি করে। পঞ্চায়েত থেকে তিনি জেনেছেন তাঁর নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ প্রকল্পের সুবিধে পেয়েছেন! তাঁর কথায়, ‘‘কেন এমনটা হল, বিডিও অফিসে তা বলার জন্যে গিয়েও কোনও ফল হয়নি। আমার কথা শোনাই হয়নি।’’

একই অভিজ্ঞতা কাঁটাডি গ্রামের শেখ সুলতান কিংবা হুসেনডি গ্রামের শেখ মজিবুলের। তাঁদের পেশাও দিনমজুরি। কাঁটাডি গ্রামের শেখ আইনুলেরও দিন চলে ভিক্ষে করেই। তিনিও শুনেছেন তাঁর নাম ব্যবহার করে অন্য লোককে বাড়ি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এঁরা সকলেই বিডিও কাছে প্রকৃত তদন্তের জোরালো দাবি করেছেন। এঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস। নেপালবাবুর প্রশ্ন, ‘‘একটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এত পরিমাণ দুর্নীতি বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ সভাপতির প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া কী ভাবে সম্ভব হল?’’

ঝালদা ১ ব্লকের বিডিও পূর্ণদেব মালাকার মানছেন অসঙ্গতি থেকে গিয়েছে। তাঁর যুক্তি, ‘‘আসলে যাঁদের নামে বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছে, আর যাঁদের নামের আরএইচএসডি নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলি প্রায় এক। সে কারণেই সমস্যা হয়েছে।’’ সে যুক্তিকে উড়িয়ে নেপালবাবুর প্রশ্ন, ‘‘নাম এক হতেই পারে, কিন্তু বিভিন্ন নথি পরীক্ষা করে তবেই তো অর্থ বরাদ্দ করা হয়! তা ছাড়া কম্পিউটারেও সে সব ত্রুটি তো ধরা পড়ার কথা! তেমনটা হল না কেন?’’ সদুত্তর দিতে পারেননি ব্লক অফিসের কেউই। দুর্নীতির অভিযোগ দানা বেঁধেছে এখানেই।

বিপিএল তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে একাধিক ভুয়ো ব্যক্তির নামে অর্থ বরাদ্দ হল? এক ব্যক্তি একাধিকবার প্রকল্পের অর্থই বা পেলেন কী করে? প্রশাসনের কাছে জবাব নেই সে সব প্রশ্নেরও।

কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ, দুর্নীতির ছবি জলের মতো পরিস্কার হয়ে গিয়েছে। এক নেতার কথায়, ‘‘দরিদ্র মানুষের মাথা গোঁজার অর্থ আত্মসাত করা অপরাধ। আশা করি প্রশাসন দ্রুত তদন্ত শেষ করে ব্যবস্থা নেবে।’’ দ্রুত প্রতিকার না হলে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখছে কংগ্রেস। ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুলু মুড়ার অবশ্য দাবি, ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনও ভুল করা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘একটা অভিযোগ উঠেছে ঠিকই। তবে এটাও ঠিক যে, এই তালিকায় যাঁরা সুবিধা পাননি পরে তাঁরা সুবিধা পাবেন। তাঁদেরও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।’’ কিন্তু, কী করে এমন ভুল হল? সদুত্তর দিতে পারেননি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন