রামনবমীর মিছিল নিয়ে জেলায় শুরু টানাপড়েন

বিজেপি সূত্রের খবর, কড়িধ্যায় রামনবমী পালন গতবার থেকেই হচ্ছে না। বহু বছর ধরে হচ্ছে। গতবার জেলায় প্রথমবার মিছিল হয় রামপুরহাট, নলহাটি, সাঁইথিয়া, বোলপুর, দুবরাজপুর ও ভীমগড়ে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

রামনবমীর মিছিল হবে। তবে আগের বছরের মতো ‘অস্ত্রের ঝন‌্‌ঝনানি’ থাকবে না। ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে শাসকদলের হাতে ‘অস্ত্র’ তুলে দেব না বলেই এমন কৌশল’’— রাখঢাক না রেখেই বলছেন বীরভূম জেলা বিজেপি-র এক নেতা। নেতৃত্বের আশঙ্কা, অস্ত্র নিয়ে মিছিল হলে ভোটের আগে পুলিশকে ‘কাজে লাগিয়ে’ তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হতে পারে। পুলিশ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। ‘প্রচার টানার কৌশল’ বলে বিজেপির আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতারাও।

Advertisement

গতবারই প্রথম এ রাজ্য রামনবমী পালনের হিড়িক দেখা গিয়েছিল। বিজেপি নেতারা আড়ালে বলছেন, ‘‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ বা রামনবমী উদ্‌যাপন কমিটি— রামনবমী পালনের উদ্যোক্তা যেই হোক, নেপথ্যে রয়েছে সঙ্ঘ। তাই সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বহু বিজেপি নেতা, কর্মী-সমর্থক পথে নেমেছিলেন। সাড়া দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষও।’’ ব্যাতিক্রম ছিল না বীরভূমও। অস্ত্র হাতে ধর্মীয় শোভযাত্রায় পা মেলাতে দেখা গিয়েছিল খুদে পড়ুয়াদেরও। সিউড়ি ঘেঁষা কড়িধ্যায় রামনবমীর দিন অস্ত্র-মিছিল হয়েছিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা ও উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে পুলিশ। তার জের গড়ায় হনুমানজয়ন্তীর দিন ধর্মীয় মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ, শাসকদলের শান্তিমিছিল, বিজেপির প্রতিবাদ মিছিল পর্যন্ত।

এ বার সে পথে হাঁটতে নারাজ বিজেপি। দলীয় সূত্রের খবর, সঙ্ঘই এ বার অস্ত্র নিয়ে মিছিলে যোগ দিতে নিষেধ করেছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘‘গতবার যে ধারায় মামলা হয়েছিল, শাসকদলের উষ্কানিতে ভোটের আগে ফাঁসিয়ে দিতে এ বার তার চেয়ে আরও শক্ত ধারায় বিজেপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে পুলিশ। তেমনটা হলে পঞ্চায়েত ভোটে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরাই কঠিন হবে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘এটা দলীয় কর্মসূচি নয়। তবে এক জন হিন্দু হিসেবে আমি ও দলের অন্য নেতারা রামনবমী পালনে যোগ দেব। এটাই স্বাভাবিক। তবে নির্বাচনের আগে ঝামেলা কেউই চাই না।’’

Advertisement

বিজেপি সূত্রের খবর, কড়িধ্যায় রামনবমী পালন গতবার থেকেই হচ্ছে না। বহু বছর ধরে হচ্ছে। গতবার জেলায় প্রথমবার মিছিল হয় রামপুরহাট, নলহাটি, সাঁইথিয়া, বোলপুর, দুবরাজপুর ও ভীমগড়ে। এ বারও এই এলাকায় শোভাযাত্রা আয়োজন হচ্ছে। তবে এ বারই প্রথম গেরুয়া শিবিরের পাল্টা মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসকদল তৃণমূলও। জেলার যে যে প্রান্তে গেরুয়া শিবিরের ধর্মীয় মিছিল হবে সেখানেই পাল্টা মিছিল করা হবে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।

বিজেপি নেতারা এখন থেকেই বলতে শুরু করেছেন, ২৫ তারিখ রামনবমীর মিছিলের অনুমতি পাওয়ার জন্য পক্ষপাত শুরু হয়েছে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘অনুমতির জন্য আবেদন জমা দিতে গেলেই প্রশাসন এবং পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আপনারা পরে আবেদন করলেন, রামনবমী পালনের জন্য অন্য দল ইতিমধ্যেই আবেদন জমা করেছে।’’ অনুমতি দেওয়া হবে হবে না, নাকি দু’পক্ষকেই মিছিল করতে দেওয়া হবে— এই নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি প্রশাসনের কর্তারা।

এত কিছুর মধ্যে একটা প্রসঙ্গ সব কিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। তা হল, গেরুয়া শিরির না হয় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে রামনবমী পালন করবে। শাসকদলও কী সেই পথেই হাঁটবে? ‘‘কী ভাবে দিনটি উদ্‌যাপিত হবে তা জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ঠিক করবেন’’—বলছেন সিউড়ি শহর সভাপতি অভিজিৎ মদুমজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন