ডাক্তার কমছে, ধুঁকছে হাসপাতাল

চোদ্দো হাজার রেলকর্মী। সঙ্গে আরও ২১ হাজার অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী। এই বিশাল সংখ্যক রেলকর্মী ও তাঁদের পরিবারের চিকিৎসা ভরসা য়ে রেলওয়ে হাসপাতালে, সেখানে চিকিৎসক রয়েছেন মোটে ছ’জন! তাঁদের মধ্যে এক জন সিএমএস, অর্থাৎ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্মের দায়িত্বে তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আদ্রা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
Share:

চোদ্দো হাজার রেলকর্মী। সঙ্গে আরও ২১ হাজার অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী। এই বিশাল সংখ্যক রেলকর্মী ও তাঁদের পরিবারের চিকিৎসা ভরসা য়ে রেলওয়ে হাসপাতালে, সেখানে চিকিৎসক রয়েছেন মোটে ছ’জন! তাঁদের মধ্যে এক জন সিএমএস, অর্থাৎ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্মের দায়িত্বে তিনি।

Advertisement

কার্যক্ষেত্রে বাকি পাঁচ চিকিৎসকের ভরসায় চলছে প্রায় ২০০ শয্যার আদ্রা রেলওয়ে ডিভিশনাল হাসপাতাল। চিকিৎসকের অভাবেই সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে শল্য ও অস্থি ওয়ার্ড। সব মিলিয়ে রেলের স্বাস্থ্য দফতরের স্বাস্থ্যই পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে আদ্রায়।

বৃহস্পতিবারই রেল হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ করা ও পরিকাঠামোর উন্নয়নের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে রেলকর্মী সংগঠন মেনস কংগ্রেস। সংগঠনের আদ্রা ডিভিশনের নেতা সুব্রত দে বলেন, ‘‘ভগবানের ভরসায় চলছে আদ্রার রেল হাসপাতাল। কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গেলে কর্মরত রেলকর্মীদের ন্যূনতম চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই হাসপাতালে।”

Advertisement

তবে ওই দিনই দুপুরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্রিন্সিপাল চিফ মেডিক্যাল ডিরেক্টর পূরণ মাল আদ্রা ডিভিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, স্থায়ী চিকিৎসক না পাওয়া পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। তবে তার আগে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রেলের অন্য ডিভিশনাল হাসপাতাল থেকে শল্য বিশেষজ্ঞদের পালা করে আদ্রার রেল হাসপাতালে রোগী দেখতে পাঠানো হচ্ছে।

ঝাঁ চকচকে দোতলা হাসপাতাল। মেল মেডিক্যাল, ফিমেল মেডিক্যাল, প্রসূতি বিভাগ এমনকী, আইসিইউ পর্যন্ত আদ্রার রেল হাসপাতালে রয়েছে। নেই শুধু চিকিৎসক। হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত মাস পর্যন্ত সপ্তাহে দুই-তিন দিন করে খড়্গপুর ডিভিশন থেকে এক জন অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ আদ্রায় আসতেন। বর্তমানে সেই চিকিৎসক অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন।

আর শল্য চিকিৎসক গত মাসেই অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়াতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেই বিভাগটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাঁচ চিকিৎসকই এখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে রোগী দেখেন। তাঁদের মধ্যে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের বদলির চিঠি এসে গিয়েছে। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না এলে, স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগও বন্ধ হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।

রেলকর্মী সংগঠনগুলির অভিযোগ, নামেই বিভাগীয় হাসপাতাল। কিন্তু জ্বর, মাথা ব্যাথার মতো সামান্য রোগের চিকিৎসা-ছাড়া আর কিছুই মেলে না। কোনও রোগীর অবস্থা সামান্য বাড়াবাড়ি হলেই, তাঁকে স্থানান্তর করে দেওয়া হয় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর হাসপাতাল গার্ডেনরিচে।

রেলের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরেই আদ্রায় স্থায়ী চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়াতেই এই সমস্যা চলছে। মাঝে চুক্তির ভিত্তিতে কয়েকজন চিকিৎসক নিয়োগ করার পরে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কিছুটা ফিরেছিল।

কিন্তু ওই চিকিৎসকেরা অন্যত্র স্থায়ী কাজ পেয়ে চলে যাওয়াতে পুরনো অবস্থা ফিরে এসেছে। প্রসূতি, মেডিসিন, শল্য, চক্ষু-সহ অন্তত আট জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। আরেক রেলকর্মী সংগঠনের নেতা গৌতম মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘কর্মরত অবস্থায় কোনও রেলকর্মী দুর্ঘটনায় পড়লে তাঁর ন্যূনতম চিকিৎসা করারও ব্যবস্থা নেই এই হাসপাতালে।’’

এ ছাড়া চিকিৎসকদের বদলি করা হলে, তাঁদের বদলে কেন চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছে না, তা নিয়েও ক্ষুব্ধ রেলকর্মীরা। রেলকর্মী সংগঠনের নেতারা জানাচ্ছেন, আগেও অনেক চিকিৎসক বদলির পরে পরিবর্ত চিকিৎসক দেওয়া হয়নি। তেমনটাই হয়েছে এ বার শল্য চিকিৎসক বদলির পরেও। আদ্রায় অন্তত আট জন সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ স্থায়ী চিকিৎসক দ্রুত নিয়োগ না করা হলে এই হাসপাতালের হাল আরও করুণ হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কায় রেল কর্মীরা।

সূত্রের খবর, হাসপাতালের ২০০টি শয্যা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৩০ জন রোগী ভর্তি আছেন। কেন? মন্তব্য করতে চাননি আদ্রার সিএমএস এম কে মহান্তি। তবে রেলের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর দফতর গার্ডেনরিচ, খড়গপুরের মতো ডিভিশনগুলি থেকে আদ্রায় স্থায়ী চিকিৎসক এলে সমস্যাটা অনেকটাই কমবে। কিন্তু ওই ডিভিশনগুলি থেকে চিকিৎসক আদ্রায় পাঠানো হচ্ছে না।

যদিও স্থায়ী চিকিৎসক পাওয়ার আশা এখন নেই। আদ্রার ডিআরএম শারদকুমার শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘আমরা আদ্রায় ইন্টারভিউ নিয়ে চুক্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের চেষ্টা করছি। এ জন্য বাঁকুড়া ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজগুলির সঙ্গে যোগাযোগ
করা হচ্ছে।”

কিন্তু তাঁরা অন্যত্র স্থায়ী চাকরি পেলে চলে যাবেন তো? তখন কী হবে? সদুত্তর মেলেনি রেল-কর্তাদের কাছে। ডিআরএম-এর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘আদ্রার হাসপাতালের সামগ্রিক সমস্যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন