Drainage System

গলির জঞ্জালে বুজছে নিকাশি

সিপিএম থেকে তৃণমূল দীর্ঘদিন ধরে এই পুরসভা শাসন করে এসেছে।

Advertisement

অভিজিৎ অধিকারী

সোনামুখী শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

—ফাইল চিত্র

১৩৪ বছরের প্রাচীন শহর। এপাড়া-ওপাড়াকে জুড়েছে অলিগলি। আর সেই সঙ্কীর্ণ পথের পাশেই ডাঁই হয়ে জমে থাকছে আবর্জনা। পায়ে পায়ে তা ঢুকে পড়ছে ঘরে। পুরভোটের মুখে বাঁকুড়ার সোনামুখী শহরে তাই জঞ্জাল-সাফাই নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভকে হাতিয়ার করতে চাইছেন বিরোধীরা। যদিও তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্জ্য নিষ্কাশনের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই তাঁরা এগোচ্ছেন।

Advertisement

সিপিএম থেকে তৃণমূল দীর্ঘদিন ধরে এই পুরসভা শাসন করে এসেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আবর্জনা সাফাই নিয়ে ভোগান্তি কিন্তু কমেনি। ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশ কয়েকটি পাড়া বেশ ঘিঞ্জি। ফলে, সেখানে আবর্জনা সাফাই নিয়ে সমস্যা বেশি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কৃষ্ণবাজার, শ্যামবাজার, হরনাথপল্লি, থান্ডারপাড়া, লালবাজার, ডাঙাপাড়া, তাঁতিপাড়া, ধীবরপাড়া, লোহারপাড়া, বাউরি পাড়া, গয়লাপাড়া মালিপুকুর থেকে বড় আখড়া, মহিষগোঠ, কার্তিকতলা প্রভৃতি জায়গায় রাস্তার পাশে দিনের পর দিন আবর্জনা পড়ে থাকে। অথচ, পুরসভার সাফাই কর্মীদের নিয়মিত দেখা মেলে না।

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, দিনের দিন নোংরা তুলে ফেলার ব্যবস্থা থাকলে স্তূপাকারে আবর্জনা জমত না। পাঁচ-সাত দিন অন্তর রাস্তা থেকে আবর্জনা তোলাতেই এই সমস্যা বলে তাঁদের অভিযোগ। দিনের পর দিন রাস্তার পাশে জমতে জমতে ময়লা গিয়ে পড়ছে নিকাশি নালায়। ফলে, নালা বুজে যাওয়ার জোগাড়। বৃষ্টি হলেই জল উপচে নোংরা ভাসে রাস্তায়। তখন ওই পথে যাতায়াত করা কার্যত দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

Advertisement

লালবাজারের বাসিন্দা ভূতনাথ ধনী বলেন, “শীতের সকালে রোদ পোহাতে বাইরে বসা অভ্যাস। কিন্তু যা চার পাশে জমে থাকা আবর্জনার দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে। প্রতিদিন যদি পুরসভার সাফাইকর্মীরা ময়লা তুলে নিয়ে যেতেন, এই কষ্ট থেকে বাঁচতাম।’’ ধীবরপাড়ার পরেশনাথ ধীবর, সন্ধ্যা ঘোষের মতো অনেকেই দাবি করেন, গলি, রাস্তার পাশ থেকে প্রতিদিন আবর্জনা তোলা হোক। তাঁরা বলেন, “সব জায়গায় ডাস্টবিন নেই। রাস্তার পাশেই ফেলা হয় জঞ্জাল। বাড়ি থেকে বেরোলেই নোংরা আবর্জনা পায়ে ঠেকে। এ ভাবে বাঁচা যায়! এর থেকে গ্রাম অনেক ভাল।’’

সোনামুখীর প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের কুশল বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “শহরের বিভিন্ন এলাকায় জমে থাকা আবর্জনা কয়েকদিন অন্তর অন্তর সাফ করা হচ্ছে। নজরদারি থাকলে এমনটা হত না। আমার দশ বছর পুরসভা চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এখন কর্মীদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব চোখে পড়ছে। এলাকায় কোনও মৃত প্রাণী পড়ে থাকলে আগে তৎক্ষণাৎ সরিয়ে ফেলা হত। এখন কর্মীদের মধ্যে গাছাড়া মনোভাব।’’

ঢিলেমির অভিযোগ উড়িয়ে সোনামুখী পুরপ্রধান তৃণমূলের সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “বর্তমানে সাফাইয়ের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আদববাজার এলাকায় ১৮ বিঘা জমিতে এখন আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ওই জায়গার সঙ্গে আরও কয়েক বিঘা জমি নিয়ে ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ তৈরির কথা ভাবা হয়েছে।’’ বিজেপির সোনামুখী নগর মণ্ডল সভানেত্রী শম্পা গোস্বামীর মন্তব্য, ‘‘এই শহরের কোথায় ডাম্পিং গ্রাউন্ড? সাফাইকর্মীরা নালা থেকে ময়লা তুলে পাশে রাখছেন। আবার নালায় পড়ছে। পুরপ্রধানকে জানিয়েও লাভ হয়নি।’’

বাসিন্দাদের দাবি, কাছাকাছি ওয়ার্ডের আবর্জনা এক প্রকার নিয়মিত তুলে নিয়ে গেলেও গাড়ির তেল খরচ বাঁচাতে সাফাইকর্মীরা দূরের ওয়ার্ডগুলির আবর্জনা রোজ নেন না। ফলে, ওই সব এলাকার আবর্জনা জমতে জমতে ডাঁই হচ্ছে। যদিও পুরপ্রধানের দাবি, সাফাই নিয়মিত করা হয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ডাস্টবিন থাকলেও অনেকে দূর থেকে নোংরা ছুড়ে দেন। সেটা নালায় গিয়ে পড়ে। এতে জল নিকাশির অসুবিধা হচ্ছে।’’

তবে, পুরভোটের মুখে শহরের এই সাফাই নিয়ে ক্ষোভ যাতে ভোট-বাক্সে না পড়ে, সে দিকে তৎপর পুরকর্তৃপক্ষ। তাই সাফাইয়ের কাজ যাতে আর ভাল করে হয়, সে দিকে নজর রাখতে নেমে পড়েছেন শাসক দলের অনেক কাউন্সিলরই। তাঁদের কথায়, ‘‘মানুষ যাতে পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগে আমাদের থেকে মুখ না ফেরান, সে কথাটা মাথায় রাখতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন