অভিনেতার দৃষ্টি ফেরাতে নাটক রামপুরহাটে

রামপুরহাট ‘অনামী’ নাট্যসংস্থার বিশিষ্ট শিল্পী বিজয় ব্রজবাসী সম্প্রতি দুটি চোখের দৃষ্টি হারাতে বসেছেন। সহকর্মীর চোখের আলো ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে দলেরই শিল্পীরা।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০০:৪৩
Share:

মঞ্চে: সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে বিজয় ব্রজবাসী (বাঁ দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

সম্পর্কটা তিরিশ বছরেরও বেশি। সেই সম্পর্কের মধ্যেই শেষবার সহকর্মীকে দলের অন্য সদস্যরা দেখেছিল মাপা গন্ডির মধ্যে কাজ করতে। তাঁরা দেখতে পেয়েছিল, জোরালো আলো সহ্য করতে না পেরে ছায়ার সঙ্গে কথা বলছে সহকর্মী। তবুও সেই সহকর্মীর অভিনয় ক্ষমতায়, মঞ্চের ব্যবহারে মুগ্ধ দর্শক। এমন সহকর্মীর চোখের আলো ফেরাতে উদ্যোগ নিল এ বার দলেরই সদস্যরা।

Advertisement

রামপুরহাট ‘অনামী’ নাট্যসংস্থার বিশিষ্ট শিল্পী বিজয় ব্রজবাসী সম্প্রতি দুটি চোখের দৃষ্টি হারাতে বসেছেন। সহকর্মীর চোখের আলো ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে দলেরই শিল্পীরা। গত ২৬ জুন প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ‘অনামী’ নাট্যসংস্থা আয়োজন করে থিয়েটার সন্ধ্যা। রামপুরহাট রেলওয়ে ইনস্টিটিউট রঙ্গমঞ্চে ওই দিন অনামী পরিবেশন করল ‘পুতুলনাচের কাব্যি’ নাটকের ৮৬ তম প্রযোজনা। এ ছাড়াও কলকাতার ‘এসো নাটক শিখি’ তাদের নাটক ‘খোয়াইস’ নাটকটি মঞ্চস্থ করে বিজয়বাবুকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে।

‘অনামী’র কর্ণধার তথা পরিচালক সৈয়দ টুলু বলেন, ‘‘৮৬ সালে দলের জন্ম লগ্ন থেকে বিজয় অভিনয় করে আসছেন। উত্তরপ্রদেশে বাপ-ঠাকুরদার আদি বাড়ি হলেও সে জন্মসূত্রে রামপুরহাটে বড় হয়েছে। এবং যেভাবে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে অভিনয় ক্ষমতা গুনে রামপুরহাটের নাট্যচর্চাকে একটা উচ্চমার্গে পোঁছে দিয়েছে, সেটা নাট্যপ্রেমী মানুষজন চিরদিন মনে রাখবে। এমন একজন শিল্পী সম্প্রতি দু’চোখের দৃষ্টি হারাতে বসেছেন। সেই সহকর্মীর চোখের আলো ফেরাতে আমরা দলের সহকর্মীরা এবং রামপুরহাটের সংস্কৃতি অনুরাগী মানুষ সংকল্প নিয়েছে।’’

Advertisement

নাটকের দল হিসাবে নাটক করে উঠে কিছুটা আর্থিক সাহায্য তাঁরা চিকিৎসার জন্য তুলে দিয়েছেন।

রবিবার বিজয়বাবুর হাতে শহরের স্বয়ম সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, নৃত্য নিকেতন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং আরও দু’জন সাংস্কৃতিক কর্মীর দেওয়া মোট তিন হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বিজয় ব্রজবাসীর চোখের চিকিৎসার জন্য রামপুরহাট পুরসভা থেকে ১০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হবে বলে জানান উপ-পুরপ্রধান সুকান্ত সরকার। রামপুরহাট দেশবন্ধু রোডের বাড়িতে বসে বিজয় বললেন, ‘‘এই সেদিনও দলের হয়ে বিশ্ব নাট্য দিবসে নাটক করেছি। তবে মঞ্চের ব্যবহার করতে গিয়ে মেপে মেপে অভিনয় করতে হয়েছে। সহ-শিল্পীদের কথা শুনে জোরালো আলো এড়িয়ে অভিনয় করলেও দর্শকের প্রচুর হাততালি কুড়িয়েছি। এখনও নাটকের জন্য মনকেমন করে। তাই প্রতি সন্ধ্যায় দলের রিহার্সাল শুনতে যাই।’’

‘অনামী’র এই উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেছেন নাট্যকর্মী প্রিয়ব্রত প্রামাণিক। বললেন, ‘‘বিজয় অভিনীত প্রতিটি নাটকই দেখেছি। কিন্তু ‘গাব্বু খেলা’ নাটকে অভিনয় এখনও ভেসে উঠে।’’ আর এক নাট্যকর্মী বলেন, ‘‘নাটকের টিকিট বিক্রির পয়সা নাটকের খরচাতেই প্রায় শেষ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে একজন নাট্যকর্মীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য আরও অনেক সহানুভূতিশীল মানুষের এগিয়ে আসা দরকার।’’

রবিবার নাটক দেখতে এসে একজন নাট্যকর্মীর সাহায্যে নাট্যদলের এই উদ্যোগী ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, এসডিও সুপ্রিয় দাস এবং এসডিপিও ধৃতিমান সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন