চিনপাই গ্রামে সিদ্ধেশ্বরীর মেলায় মঞ্চ মাতাবেন ওঁরা

এখন দুপুর গড়ালেই একটু অবসর খুঁজছেন ওঁরা। গৃহকর্মের ফাঁকে ফাঁকে সংলাপ ঝালিয়ে নিচ্ছেন। ঠিক করে নিচ্ছেন চরিত্রের আদলে হাঁটা-চলা! ওঁরা দুবরাজপুরের চিনপাই গ্রামের বধূ। এ বার গ্রামের কালী পুজোয় ওঁরা নাটক করছেন দল বেঁধে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৬
Share:

মহড়া চলছে নাটকের। দুবরাজপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

এখন দুপুর গড়ালেই একটু অবসর খুঁজছেন ওঁরা। গৃহকর্মের ফাঁকে ফাঁকে সংলাপ ঝালিয়ে নিচ্ছেন। ঠিক করে নিচ্ছেন চরিত্রের আদলে হাঁটা-চলা!

Advertisement

ওঁরা দুবরাজপুরের চিনপাই গ্রামের বধূ। এ বার গ্রামের কালী পুজোয় ওঁরা নাটক করছেন দল বেঁধে। পুজো যতো এগিয়ে আসছে, জোর চলছে রিহার্সাল। গ্রামের সব চেয়ে প্রাচীন ও বড় পুজো মা সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের পাশে মঞ্চে সম্পূর্ণ মহিলাদের যোগদানে একটি নাটক মঞ্চস্থ করতে এ বার ডাক পেয়েছেন নবনীতা ঘোষ, দেবী ঘোষ, ইন্দিরা কর্মকার, বনশ্রী ঘোষ, তনুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দিরা কর্মকারেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘সকাল থেকেই দ্রুত ঘর-সংসার সামলে উদগ্রীব হয়ে থাকি কখন রিহার্সালে যোগ দেব। দায়িত্ব যখন নিয়েছি, সুনাম তো রাখতেই হবে।’’

চিনপাই গ্রামে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরে কালীপুজোতে মেলা বসে প্রতিবার। প্রচুর মানুষের ভিড় জমে। সেবাইত থাকলেও দেখাশোনা করে মন্দিরের পাশের সাত দশকের বেশি পুরোনো ক্লাব নবারুণ সঙ্ঘ। খেলা সংস্কৃতি শরীর চর্চা-সহ একধিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বছরভর জড়িয়ে থাকে ক্লাবটি। একটি যাত্রাও হয় কলী পুজোয়। যোগ দেন ক্লাবের সদস্যরা। গ্রামের যে বধূরা এ বার নাটক করছেন তাঁদের স্বামীরা ক্লাবের সদস্য। ক্লাবের সদস্য স্ত্রীরাও। হঠাৎ শুধুমাত্র মহিলাদের নাটক কেন?

Advertisement

ইন্দিরা, বনশ্রী, তনুশ্রীরা বলছেন, বছর দশেক আগেও মহিলাদের যোগদানে নাটক হয়েছিল বটে কিন্তু সেটা বজায় রাখা যায়নি। অনেকদিন আগে থেকেই তাই চিন্তা ভাবনায় ছিল। ‘‘আচ্ছা আমরা পাড়ার বউ-মেয়েরা মিলে নাটক করলে কেমন হয়! সেই ভাবনা থেকেই গত সরস্বতী পুজোয় একটা নাটক মঞ্চস্থ করি। খুব জনপ্রিয় হয়েছিল আমাদের সেই নাটক। সকলেই খুব প্রশংসা করে। এরপরে কালী পুজোতেও যখন নাটক করার প্রস্তাব পেলাম, না করিনি!’’ বলছিলেন ইন্দিরারা। জানালেন, এ বারের নাটক— হত দরিদ্র অবস্থা থেকে কী ভাবে নিজের মেয়েকে বড় করে প্রতিষ্ঠিত করছেন এক মা— সেই কাহিনি অবলম্বনে।

আসলে তাঁদের নাটক করার ভিতরের ইচ্ছেটাকে আরও জাগিয়ে দিয়েছেন এক জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

সনৎবাবু গ্রামেরই মানুষ। নিজে আগে বহু নাটকে অভিনয় করেছেন। যাত্রা করতেন। বর্তমানে অবশ্য সিউড়িতে থাকেন। কিন্তু নাটকের প্রতি অদ্ভুত টান অনুভব করেন। গত সরস্বতী পুজোয় নাটকটির নির্দেশনায় তিনিই ছিলেন। এ বারও একই দায়িত্বে। কেমন করে সংলাপ বলা হবে। কোথায় দাঁড়াতে হবে। অভিনয়ের খুঁটিনাটি দেখিয়ে দিচ্ছেন তিনিই। আর সেটা অক্ষরে অক্ষের পালন করছেন মেয়েরা। কালীপুজোর পরের দিনই মঞ্চস্থ হবে নাটক। রোজকার রিহার্সালের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে নবনীতা বলছেন, ‘‘সংসারে কাজের মধ্যে আমরা নিজেরাও আনন্দ পাব। অন্যদের আনন্দ দিতে পারব। আর সবচেয়ে বড় কথা মায়েরা যদি সংস্কৃতি চর্চায় যুক্ত হয় তাহলে আগ্রহী হয় সন্তানরাও। তাই নাটক ভাল করতে সাধ্য মতো চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ গাঁয়ের বধূদের এমন চেষ্টায় খুশি সনৎবাবু। বলছেন, ‘‘সকলেই ভাল কাজ করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন