নতুন করে: বাম আমলের শেষে আগুনে পুড়ে গিয়েছিল এই কটেজগুলি। গত বছরের গোড়ায় নতুন করে তৈরি শুরু হয়। ৯৫ লক্ষ টাকায় তিনটি কটেজ গড়ে উঠেছে একেবারে আগের চেহারায়। নিজস্ব চিত্র
সব হয়েছে। শুধু পাঁচিলটা বাকি। বন দফতরের দাবি, এই জন্য চালু করা যাচ্ছে না দুয়ারসিনির কটেজগুলি। দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, পাঁচিল তৈরি শেষ হতে হতে মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার পরে দরজা খুলবে দুয়ারসিনি।
অন্তত এখনও পর্যন্ত তা-ই বলা হচ্ছে।
পুজোর আগেই ওই কটেজ চালু হয়ে যাবে বলে বিস্তর আশ্বাস মিলেছিল। পুজো পেরিয়ে গিয়েছে। চলে এসেছে নতুন বছর। শীতের পর্যটনে জমজমাট পুরুলিয়ায় থেকেও না থাকার সামিল এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি। দুয়ারসিনিতে বন দফতরের তিনটি কটেজ রয়েছে। বাম আমলের শেষে আগুনে পুড়ে গিয়েছিল সেগুলি। গত বছরের গোড়ায় নতুন করে তৈরির উদ্যোগ হয়। বন দফতরের জেলা অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বান্দোয়ানের দুয়ারসিনিতে তিনটি কটেজ ও কুইলাপাল বন আবাস নির্মাণের জন্য প্রায় ৯৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। তা থেকে দুয়ারসিনিতে তিনটি কটেজ গড়ে ওঠে একেবারে আগের চেহারায়।
কটেজের ভিতর থেকে শোনা যায়, পাথরে কলতান তুলে বয়ে চলেছে সাতগুড়ুম নদী। ছবির মতো নিসর্গ। পুজোর আগেই বন দফতরের থেকে আশার কথা শুনে প্রচুর পর্যটক কটেজগুলি বুক করার জন্য খোঁজখবর করছেন। আর নিরাশ হচ্ছেন।
সম্প্রতি দুয়ারসিনিতে গিয়ে দেখা গেল, কটেজের সামনে দাড়িয়ে বেহালার বাসিন্দা ব্যবসায়ী নীলেশ দত্ত। পরিবার নিয়ে ঝাড়খণ্ডের গালুডি গিয়েছিলে। ফেরার পথে দুয়ারসিনি। বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম দু’টো দিন এখানে থেকে যাব। কিন্তু দেখলাম এখনও চালুই হয়নি। কবে হবে সেটাও কেউ বলতে পারছেন না।’’
এখন কী অবস্থা?
কটেজে থাকার মতো সমস্ত কিছু রয়েছে। রান্নার জন্য স্বনির্ভর দল তৈরি বললেই চলে। জেনারেটরও বসছে। বাকি পাঁচিল। পুরুলিয়ার ডিএফও (দক্ষিণ) অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুয়ারসিনিতে সীমানা পাঁচিলের জন্য প্রায় ১১ লক্ষ টাকার একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। এমনিতে কটেজের ভিতরে আসবাব ও অন্য কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ কিন্তু পাঁচিল এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে কেন? বন দফতরের একটি সূত্রের দাবি, ফাঁকা এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই পাঁচিল তৈরি পর্যন্ত অপেক্ষা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছরের প্রথম দিন বাঘমুণ্ডির অয্যোধ্যায় প্রায় দেড় লক্ষ পর্যটক এসেছিলেন। জেলার অন্য পর্যটনকেন্দ্র নিতুড়িয়ার পঞ্চকোট, কোটশিলার মুরগুমা জলাধার, হুড়ার ফুটিয়ারি জলাধার, মানবাজারের দোলাডাঙা, বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্ক— সর্বত্র প্রচুর ভিড় হয়েছিল। এই সময়ে দুয়ারসিনি চালু থাকলে অনেকটাই সুবিধা হত বলে প্রশাসনের কিছু কর্তাই মনে করছেন।
বন দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, দুয়ারসিনির আকর্ষণ আরও বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যেই আরও কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাহাড়, ঝর্না, গহন জঙ্গল তো রয়েছেই। তার মধ্যে দিয়ে ট্রেকিং-এর ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হয়েছে। জ্যোৎস্না ধোয়া কটেজ চত্বরে পর্যটকদের জন্য আদিবাসী শিল্পীদের নাচের ব্যবস্থা করার কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে তার আগে দরকার কটেজ চালু হওয়া। পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তিনি বনদফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।