‘দলের সভায় না যাওয়ায় ঘর দেওয়া হয়নি’, ক্ষোভ

মঙ্গলবার বিষ্ণুপুর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালগঞ্জ-ষষ্ঠীবটতলা এলাকার ওই শিবিরের বিক্ষোভকে ঘিরে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৪০
Share:

বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জ-ষষ্ঠীবটতলা এলাকায় বিক্ষোভের মুখে এসডিও। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী

রাজ্যের শাসকদলের সভায় যাননি বলে সরকারি প্রকল্পে তাঁরা বাড়ি পাননি— ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির প্রথম দিন শিবিরে আসা এসডিও-কে এমনই অভিযোগ জানিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরের কিছু মহিলা। শেষে এসডিও তাঁদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেওয়ায় বিক্ষোভকারীরা শান্ত হন।

Advertisement

মঙ্গলবার বিষ্ণুপুর পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালগঞ্জ-ষষ্ঠীবটতলা এলাকার ওই শিবিরের বিক্ষোভকে ঘিরে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির রাজ্য নেতা তথা বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকারের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প, অথচ তা-ও এ রাজ্যের তৃণমূল সরকার দলীয় কাজে ব্যবহার করছে। বিষ্ণুপুরের ওই ঘটনা, একটা নমুনা মাত্র। সারা জেলায় এই কাণ্ড ওরা করছে। মানুষ ভোটে এর জবাব দেবেন।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বলেন, ‘‘রাজ্যে অনেক কাজ হয়েছে। আরও কিছু বাকি আছে কি না, তা জানতে মুখ্যমন্ত্রী ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এমন সাহস দেখাতে পারবেন? বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার কাজ না করে, মানুষকে নানা ভাবে শুধু বিপদে ফেলছে। অভিযোগ শোনার দম নেই ওদের।’’

Advertisement

এ দিন ওই শিবির পরিদর্শন করে এসডিও (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত বেরিয়ে যাওয়ার মুখে মহিলাদের একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তাঁদের বেশির ভাগই পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান বলে

দাবি করেন।

তাঁদের মধ্যে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ঝর্না লোহার, রবি লোহার, সুষমা কর্মকার, বনলতা লোহারেরা বলেন, “আমরা পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাই। মাটির ভাঙা বাড়িতে থাকি। কয়েকবছর আগে সবাই সরকারি প্রকল্পে পাকা বাড়ির জন্য আবেদন করেছিলাম। তালিকাতেও আমাদের নাম আছে। তা-ও বাড়ি পাইনি। অথচ, এলাকায় যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে, তাঁরা সরকারি প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন।”

কেন তাঁরা ঘর পাননি? ওই মহিলাদের অভিযোগ, “বিষ্ণুপুর পুরসভার তৃণমূল নেতারা আমাদের তৃণমূলের মিটিংয়ে যেতে বলেন। কিন্তু সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা লোকের দুয়ারে কাজ করি। যাব কখন? মিটিংয়ে যেতে পারিনি বলেই আমাদের বাড়ি করে দেননি তাঁরা।’’ এসডিও বলেন, “ওই মহিলাদের সমস্যা শুনেছি। শিবিরে সেই সমস্যা নথিভুক্তও করা হয়েছে। শীঘ্রই পদক্ষেপ করা হবে।’’

ওই মহিলাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ দুর্ভাগ্যজনক। আগে কেউ আমাদের নজরে এই অভিযোগ আনেননি। মানুষের সমস্যা মেটাতেই রাজ্য সরকারের এই কর্মসূচি। দলমত নির্বিশেষে পরিষেবা দেওয়া হয়।’’

ইঁদপুরে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির শিবির কোথায় হবে তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকারি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল শিবির হবে ইঁদপুরের গোয়েঙ্কা উচ্চবিদ্যালয়ে। তাই এ দিন সকালে অনেকে ওই স্কুলের সামনে ভিড় করেন। পরে তাঁরা জানতে পারেন, শিবির হচ্ছে কয়েকশো মিটার দূরের ইঁদপুর পঞ্চায়েত অফিসে।

ইঁদপুরের হীরাশোল গ্রামের বাসিন্দা রাজু তন্তুবায় বলেন, “শিবিরের জায়গা নিয়ে আমরা বিভ্রান্ত হলাম। সময়ও নষ্ট হল।’’ শিবিরে ইঁদপুরের ধরমপুর গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা গোরাচাঁদ পাত্র দাবি করেন, বারবার আবেদন করেও বার্ধক্যভাতা পাননি। স্থান নিয়ে এই বিভ্রান্তির জন্য ব্লক প্রশাসনকে দুষছেন ইঁদপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শম্ভুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরাও শুনেছিলাম ওই স্কুলে শিবির হবে। ব্লক প্রশাসন আমাদের আগাম জানালে মানুষকে বিভ্রান্ত হত না।”

বিডিও (ইঁদপুর) মনীশ নন্দী বলেন, “জেলা প্রশাসনের নির্দেশেই শিবিরের জায়গা বদল করা হয়েছে।”

সোনামুখী ও পাত্রসায়র ব্লকের শিবির পরিদর্শনে যান জেলা শাসক এস অরুণপ্রসাদ। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রের, এ দিন জেলার ২২টি ব্লক ও তিনটি পুর এলাকায় মোট ২৭টি শিবির হয়।

বিকেল পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা যায়, জেলা জুড়ে প্রায় ১৩,২০০ মানুষ শিবিরে গিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ও সরকারি সুবিধার আবেদন জমা করেছেন।

ভিড়ে নিরাপদ দূরত্ব-বিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। এ দিন বাঁকুড়া শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ময়রাবাঁধ মহামায়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিবিরে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের বাইরে অপেক্ষায় প্রায় আড়াইশো জন মানুষ। স্কুলের ভিতরে আরও প্রায় পঞ্চাশ জন। বেশির ভাগই মাস্ক পরেননি।

শিবিরে আসা স্থানীয় প্রবীন বাসিন্দা মথুর কর্মকার, পুষ্প মাল, জ্যোৎস্না মাল বলেন, ‘‘এখানে এলে মাস্ক পরতে হবে, এমন নির্দেশ শুনিনি। শহরে করোনা সংক্রমণ তো কমে গিয়েছে।”

জেলাশাসক বলেন, “লোকজন যাতে মাস্ক পরে শিবিরে আসেন ও নিরাপদ দূরত্ববিধি মেনে চলেন, তা নিয়ে প্রচার করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য-বিধি মানার ব্যাপারে বিডিওদের নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন