‘বিধিভঙ্গ’, নোটিস অনুব্রতকে

এমন কোনও নোটিস তিনি এখনও হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন অনুব্রত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৮:০৯
Share:

বক্তা: সিউড়ির সভায় তৃণমূল জেলা সভাপতি। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগে নোটিস গেল জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কাছে। অভিযোগ, গত সপ্তাহে নানুরের একটি কর্মিসভা থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের উদ্দেশে হুমকিমূলক বক্তব্য পেশ করেছিলেন অনুব্রত। সেই কারণেই জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসক সোমবার অনুব্রতকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও এমন কোনও নোটিস তিনি এখনও হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন অনুব্রত।

Advertisement

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু এ দিন বলেন, ‘‘নানুরে একটা সভায় অনুব্রতের বক্তব্য নিয়ে নির্বাচন কমিশনের এনজিএস (ন্যাশনাল গ্রিভান্স সার্ভিসেস) পোর্টালে একটি অভিযোগ দায়ের হয়। সে ব্যাপারে ওঁর কী বক্তব্য জানতে চেয়ে, নোটিস দেওয়া হয়েছে। ৭২ ঘন্টা সময় দেওয়া হয়েছে। কী উত্তর আসে, সেটা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

তৃণমূল সূত্রে খবর, শুক্রবার বীরভূমের নানুরে ব্লকে বুথভিত্তিক কর্মী সম্মেলন করছিলেন দলের জেলা সভাপতি। অন্যান্য কর্মিসভার মতই কোন বুথে সংগঠনের কী হাল, তা নিয়ে কর্মীদের ‘ক্লাস’ নিচ্ছিলেন অনুব্রত। সেখানেই এক কর্মীর কাছে জানতে চান, এলাকায় ভোট কেমন হবে। কর্মী জানান, এখনও কিছুটা সিপিএম আছে। অভিযোগ, কোন কোন গ্রামে সিপিএমের প্রভাব রয়েছে, জানার পরে অনুব্রত বলেন, ‘‘ব্যবস্থা করতে পারছিস না। ভালবাসা দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, যুক্তি দিয়ে পরামর্শ দিয়ে বোঝা। গিয়ে কথা বলে কিংবা চোখ বুজিয়ে দিয়ে, অনেক রকম তো হয়!’’

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘটনার পরেই অনুব্রতর বক্তব্য নিয়ে এনসিএস পোর্টালে অভিযোগ জানান স্থানীয় কেউ। তার প্রেক্ষিতেই জেলা নির্বাচনী আধিকারিক হিসাবে পদক্ষেপ করতে হল জেলাশাসককে। বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অনুব্রত ‘বেফাঁস’ কথা এর আগেও অনেক বার বলেছেন। সে জন্য গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁকে নির্বাচন কমিশন নজরবন্দি পর্যন্ত করে রেখেছিল। নানুরের সভায় অনুব্রতের মন্তব্য প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল আসলে আতঙ্কিত নিজেরই দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে। দলের কত লোক আড়ালে বিজেপি করেছে, সেটাও তিনি জানেন না। সেই আতঙ্ক থেকেই এমন ভুল বকছেন।’’

যদিও ঘটনা হল, জেলা প্রশাসন যাই নোটিস পাঠাক না কেন, অনুব্রত কিন্তু সভা করছেন নিজের চেনা মেজাজেই। কখনও বিজেপি-সিপিএম, কখনও বা ভোটের কাজে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁর তোপের মুখে পড়ছে। সোমবারই সিউড়ি ২ ব্লকের পুরন্দরপুরে প্রথম নির্বাচনী জনসভা থেকে যেমন তাঁর নিশানায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। অনুব্রত বলেন, ‘‘তৃণমূলকে ভোট দিন। চুপি চুপি নয়, দেখে দিন। কিসের ভয়? কাকে ভয়? কাউকে ভয় করতে হবে না।’’ এর পরই তাঁর সংযোজন, ‘‘সেন্ট্রাল ফোর্স তোমরা অন্যায় করছো। নির্বাচন করাতে এসেছো। সব মানুষকে সমান ব্যবহার দেবে। মোদী বাবুর চামচাগিরি করবে না। আমরা জানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নোংরামি করতে পারে। ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আইনত মোকাবিলা করব। বুঝিয়ে দেব, অন্যায় করলে ছাড় পাবে না। আমাদের ভোট আমরা নেব।’’

কেন এমন কথা বলেছেন পরে অবশ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি। তাঁর যুক্তি, সংবাদমাধ্যমেই তো দেখাচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী কলকাতায় ধমক দিচ্ছে। সে অধিকার ওদের নেই। সব দলের জন্য বাহিনী এসেছে। ‘‘তাই বলেছি আইনগত ভাবে মোকাবিলা হবে।’’—মন্তব্য অনুব্রতের। লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে সংগঠন গুছিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ব্লকে ব্লকে জনসভার শুরুটা গত বছর নভেম্বরে এই পুরন্দরপুর থেকেই করেছিলেন অনুব্রত। ব্লকে ব্লকে বুথ-ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনের শুরুও সিউড়ি ২ ব্লকের এই এলাকা থেকেই। সেটা ১৩ ফেব্রুয়ারি। লোকসভা নির্বাচনে কী কায়দায় ভোট করাতে হবে, ১৩ তারিখের সভায় দলের কর্মীদের সেই ‘গাইড-লাইন’ দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনী নির্ঘণ্ট এবং দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে এ বার তাঁর লক্ষ্য প্রতিটি ব্লকে নির্বাচনী সভা। তার সূচনা তিনি করলেন পুরন্দরপুর থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement