পাকিজা বিবি। নিজস্ব চিত্র
এত দিন ডাকঘর থেকে মানি-অর্ডার মারফত পৌঁছে যেত পেনশন। স্বামীর মৃত্যুর পরে প্রায় দু’দশক ধরে এ ভাবেই টাকা পেতেন ওই বৃদ্ধা। কিন্তু চার মাস ধরে পেনশনের টাকা পৌঁছচ্ছে না সিউড়ি ২ ব্লকের বনশঙ্কা গ্রামের বছর পঁচাশির পাকিজা বিবির কাছে। তাতে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
ছেলেকে একাধিক বার ট্রেজারি, ডাকঘরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু পেনশন না পাওয়ার কোনও সদুত্তর কোথাও মেলেনি। অসহায় বৃদ্ধার প্রশ্ন— ‘‘প্রাপ্য টাকা কেন আমি পাব না?’’ তাঁর ছেলে মহম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘‘সিউড়ি ট্রেজারি অফিসের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ডাকঘরে মায়ের পেনসনের টাকা য়ময়মতোই পাঠানো হয়েছে। ট্রেজারি অফিসের আধিকারিকরা আমার সঙ্গে সিউড়ি প্রধান ডাকঘরে গিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। কেন টাকা দিচ্ছে না ডাকঘর, তা বুঝতে পারছি না।’’ ওই ঘটনার কথা মেনেছেন অতিরিক্ত ট্রেজারি অফিসার জয়দীপ চক্রবর্তী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিজাবিবির স্বামী মহম্মদ আনিসুর রহমান সিউড়ি ২ ব্লকের জামুরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ২০ বছর আগে তিনি মারা যান। তার পর থেকে পেনসনের টাকা পান তাঁর স্ত্রী। কিন্তু গত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত কোনও টাকা পাননি। বৃদ্ধার কথায়, ‘‘টাকা না পেয়ে খুব কষ্টে আছি।’’
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ইলেকট্রেনিক ক্লিয়ারিং সিস্টেম’ (ইএসআই) মারফত পেনসন প্রাপকদের ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যায়। অসুস্থ কোনও প্রবীণ, শারিরীক প্রতিবন্ধকতা থাকা ব্যক্তি যাঁরা ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা তুলতে পারেন না বা ‘কেওয়াইসি’ তথ্য দাখিলে সমস্যা রয়েছে— তাঁদের জন্য ডাকঘরের মাধ্যমে ‘ইলেকট্রনিক মানি অর্ডার’ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সে ভাবেই টাকা পেতেন পাকিজাবিবি।
অতিরিক্ত ট্রেজারি অফিসার জয়দীপবাবু জানান, ওই পদ্ধতিতে পেনসন প্রাপকদের টাকা সিউড়ি হেড পোস্টমাস্টারকে চেক মারফত দেওয়া হয়। পরে নির্দিষ্ট ডাকঘরের শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট পেনশন প্রাপকেরা টাকা পেয়ে থাকেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন পাকিজাবিবি টাকা পাচ্ছেন না তা বোঝা যাচ্ছে না। আমিও দু’বার সিউড়ি হেড পোস্টমাস্টারের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।’’
ট্রেজারি আধিকারিকেরা জানান, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রশান্ত অধিকারী এ নিয়ে পোস্টাল সুপারিন্টেডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার পরেও সমস্যা মেটেনি। তাঁদের প্রশ্ন— ‘সরকারি টাকার হাল কেন এমন হবে?’’
বীরভূমের পোস্টাল সুপারিন্টেডেন্ট কাশীনাথ ঘোষ জানান, বর্তমানে ডাকঘরে সিএসআই (কোর সিস্টেম ইন্টেগ্রেটর) ব্যবস্থা চালু হয়েছে। যে সব ডাকঘরে ‘ইলেকট্রেনিক মানি অর্ডার ইনফরমেশন’ ব্যবস্থা নেই বা রেডিস্টার্ড নয়, সেই ডাকঘরের নামে ইএমও গেলে তা প্রাপককে দেওয়া যাচ্ছে না। সেগুলি হেড পোস্টঅফিস থেকে অর্ডিনারি মানিঅর্ডার হিসেবে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। বেশ কয়েকটি সমস্যা মেটানো হয়েছে। পাকিজাবিবির বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। পোস্টাল সুপারিন্টেডেন্ট বলছেন, ‘‘অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) যোগাযোগ করেছিলেন। ডাকবিভাগের এই সমস্যার কথা জানিয়েছি। যে যে ডাকঘরে এমন সমস্যা রয়েছে, সেখানে এমন কত জন পেনশন প্রাপক রয়েছেন সেই তালিকা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট দফতরকে সে কথা চিঠি দিয়ে জানানোর কথা।’’