তালিকাটা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে!
এ বার ছেলের সামনেই বাবাকে আছড়ে মারল হাতির দল। সোমবার সকালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির লাগোয়া জঙ্গলে গিয়েছিলেন মাধব দাস (৫৬)। তিনি টের পাননি ঠিক পিছনেই রয়েছে সাক্ষাৎ মৃত্যু। অতর্কিতে পাঁচ হাতির দলটি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে শুড়ে জড়িয়ে পিষে মারে! বিষ্ণুপুর থানার ভড়া অঞ্চলের তেঁতুলাড়া গ্রামের ঘটনা।
বিষ্ণুপুর হাসপাতালে মর্গের সামনে সেই মুহূর্তের বিবরণ দিতে গিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন মাধবাবাবুর ছেলে বছর পঁচিশের কৃষ্ণচন্দ্র। বললেন, ‘‘মাত্র ২০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে দেখলাম পাঁচ দাঁতাল বাবাকে ঘিরে ফুটবলের মতো ছোঁড়াছুড়ি করল। কিছুই করতে পারলাম না।’’ চিৎকার শুনে দু-একজন জুটলেও হাতিদের সামনে ঘেঁষতে পারেননি কেউই।
রবিবার গভীর রাতে হাতির হানায় আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে। বন দফতর সূত্রের খবর, রাত একটা নাগাদ ওই হাতির দলটি বিষ্ণুপুর জঙ্গল থেকে দ্বারকেশ্বর পার হয়ে বসন্তপুর গ্রামে ঢোকে। বাড়ির দাওয়ায় শুয়ে থাকা সন্তোষ ভট্টাচার্য (৫৩) নামের এক গ্রামবাসীকে শুঁড়ে জড়িয়ে আছাড়ে মারে। তারপরে দেহ উঠোনে ছুঁড়ে ফেলে লাগোয়া ভড়ার জঙ্গলে গা ঢাকা দেয় হাতির দলটি।
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে জোড়া মৃত্যুতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। গ্রামবাসীর ক্ষোভ, অত্যন্ত চুপিসারে রাতের অন্ধকারে লোকালয়ে ঢুকছে হাতি। বন দফতরের নজরদারি না থাকায় মাঠ ভর্তি ফসল তো বটেই যাচ্ছে প্রাণও। উবেছে রাতের ঘুম। স্থানীয় সূত্রের খবর, দ্বারকেশ্বর নদের উল্টো দিকে গোঁসাইপুর গ্রামে গত মাসেই হাতির হানায় এক জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার কিছুদিন পরেই জঙ্গলে পাতা কুড়োতে যাওয়া দুই মহিলাকে মেরে দেহ দুটি ছিন্নভিন্ন করে দেয়। তার আগেও বহু জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ দিকে, অকালে স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মাধববাবুর স্ত্রী বিজলাদেবী। বললেন, ‘‘ছেলের ছোট্ট মুদিখানার দোকান। তেমন চলে না। স্বামীই নাম সংকীর্তন করে কিছুটা উপার্জন বাড়াবার চেষ্টা করতেন। সব শেষ হয়ে গেল!’’ আর পেশায় কৃষিজীবী বসন্তপুরের সন্তোষবাবু থাকতেন ভাইপোর সংসারে। তাঁর ভাইপো সুশান্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গরমের কারণে কাকা বাড়ির দাওয়ায় মশারি খাটিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। কিন্তু হাতি যে ঘরের উঠোনে ঢুকে এমন কাণ্ড করবে ভাবতেও পারিনি। ঘরের ভেতর থেকে কাকার চিৎকার শুনে পাড়ার লোকজন জোগার করি। ততক্ষণে সব শেষ।’’
একের পর এক মৃত্যুর পরেও কোনও আশ্বাস বাক্য শোনাতে পারেনি বন দফতর। এলাকাটি বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের রাধানগর রেঞ্জের অন্তর্গত। ওই রেঞ্জের আধিকারিক অলোক আচার্য বলেন, ‘‘বন দফতরের দেওয়া বিদ্যুতের বেড়া টপকাতে না পেরে নতুন রুটে বসন্তপুর দিয়ে ঢুকেছে ওই দলটি।’’ কর্মী কম থাকায় নজরদারিতে সমস্যা হচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘‘ওই দলের একটি হাতির আচরণ সন্দেহজনক। আমরা তার পায়ের ছাপ সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছি।’’
তত দিনে ফের দুর্ঘটনা ঘটে গেলে? নিরুত্তর ওই বন-কর্তা।