সিউড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সনৎ ভট্টচার্য। —নিজস্ব চিত্র
ভিড় এড়াতে সকাল সকাল গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক খোলার আগেই দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর ধকল নিতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন পেনশনের টাকা তুলতে আসা এক প্রাক্তন সেনাকর্মী।
মঙ্গলবার সকালে বীরভূমের ময়ূরেশ্বর থানার কোটাসুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ওই ঘটনায় সনৎ ভট্টাচার্য নামে ওই বৃদ্ধ বর্তমানে সিউড়ি সদর হাসপাতালে আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। তবে, বিপদ এখনও কাটেনি।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সেনাবাহিনীর সুবেদার পদে কাজ করে বছর পনেরো আগে অবসর নিয়েছিলেন বছর ৬৫-র সনৎবাবু। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে নিজের ময়ূরেশ্বরের ভাবঘাটি গ্রামের বাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন। তিন কিলোমিটার দূরে স্থানীয় কোটাসুরের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় তিনি পেনশন তোলেন। সনৎবাবুর স্ত্রী লক্ষ্মীরানি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোনও রকমে মুখে মুড়ি দিয়ে সকাল সকাল ব্যাঙ্কের পাশবই ও বাজারের থলি নিয়ে কোটাসুরে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন পেনশন তুলে বাজার করে ফিরবেন।’’ পৌনে ৯টা নাগাদ ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ান তিনি। সাড়ে ১০টা নাগাদ যখন নম্বর প্রায় কাছে চলে এসেছে, তখনই প্রচণ্ড বুকে ব্যাথা করেন সনৎবাবু।
এ দিন সিউড়ি হাসপাতালে দাঁড়িয়ে সনৎবাবুর বড় মেয়ে লীনাদেবীর স্বামী উজ্জ্বল সরকার বলেন, ‘‘ওই অবস্থাতেই আমার স্ত্রীকে ফোন করেন উনি। কোনও রকমে বলেন, ‘আমার খুব বুকে ব্যাথা। ব্যাঙ্কে পড়ে গিয়েছি। আমাকে নিয়ে যা। আমি আর বাঁচব না’। তা শুনেই আমোদপুরের বাড়ি থেকে আমরা ওই ব্যাঙ্কে ছুটে যাই।’’ তাঁরা ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখেন সনৎবাবু অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। ব্যাঙ্কের ডেকে আনা অ্যাম্বুল্যান্সে চড়িয়ে তাঁকে প্রথমে কাছের সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে সনৎবাবুকে সিউড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। প্রাক্তন সেনাকর্মী উজ্জ্বলবাবু বলেন, ‘‘দিব্যি সুস্থ সবল ছিলেন। প্রতিবার নিজেই ব্যাঙ্কে গিয়ে পেনশন তুলেছেন। এ বার দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকায় হয়তো এমন অবস্থা হল।’’ বর্তমানে শ্বশুরমশাইকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর কথা ভাবছেন তাঁরা।
এ দিকে, গোটা ঘটনায় প্রশ্নের মুখে ওই ব্যাঙ্কের পরিষেবা। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাঙ্কে প্রবীণ নাগরিক এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক কাউন্টার থাকার কথা। সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কে ভিড় হলেও প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের তার ধকল সইতে হয় না। কিন্তু কোটাসুরের ওই ব্যাঙ্কে তিনটি কাউন্টার থাকলেও প্রতিবন্ধী বা প্রবীণদের জন্য পৃথক কাউন্টার খোলা হয়নি। তাই আর পাঁচ জনের সঙ্গে লাইন দিয়েই তাঁদেরও ব্যাঙ্কের পরিষেবা নিতে হয়। অন্য সময় তেমন অসুবিধা না হলেও নোট বাতিলের বর্তমান পরিস্থিতিতে চরম সমস্যায় পড়েছেন প্রতিবন্ধী ও প্রবীণেরা। সব সময় লাইনে শতাধিক মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। রাস্তায় রোদে দীর্ঘক্ষণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তাই অনেকেই ভিড় এড়াতে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন ব্যাঙ্ক খোলার অপেক্ষায়।
পরিষেবা নিয়ে খামতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার নবকুমার রাহাও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের হাতে প্রয়োজনীয় কর্মী বা পরিকাঠামোও, কোনওটাই নেই। তার জন্যই প্রবীণ নাগরিক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কাউন্টার খোলা সম্ভব হয়নি।’’ তবে, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বলে তাঁর দাবি। নবকুমারবাবু বলেন, ‘‘সনৎবাবুও বাঙ্কের ভিতরে ঢোকার পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়িতে খবর পাঠিয়ে, অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে ওই গ্রাহকের পাশে থাকার জন্য সব রকম চেষ্টা আমরা করেছি।’’