প্রদর্শনীতে ‘মানিদা’র সৃষ্টি কলাভবনে

কলাভবনের শতবর্ষ উদযাপনের সঙ্গেই কে জি সুব্রহ্মণ্যমের ৯৫ বছরের জন্মদিনও উদযাপিত হবে এই প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে। তিনি বেঁচে থাকাকালীনই প্রতি বছর তাঁর জন্মদিন ৫ ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:০০
Share:

শিল্পকীর্তি: প্রদর্শনীর প্রস্তুতি। সোমবার কলাভবনে। নিজস্ব চিত্র

কলাভবনের শতবর্ষ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে আজ, মঙ্গলবার কলাভবনের ‘নন্দন’-এ একটি চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন হতে চলেছে। কলাভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, কলাভবনের প্রাক্তন অধ্যাপক কে জি সুব্রামনিয়ান ১৯৮৭-৮৮ সালে জলরং এবং বলপেন ও জলরংয়ে আঁকা ১৩৫টি ছবি স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। শান্তিনিকেতন তাঁকে চেনে ‘মানিদা’ নামে। ১৯৮৮ সালে তিনি গবেষক হিসেবে অক্সফোর্ডে যান। সেখানে প্রায় ন’মাস ছিলেন। প্রদর্শনীতে থাকা বেশিরভাগ ছবিই সেই সময়ে আঁকা। কলকাতার সিগাল ফাউন্ডেশন থেকে কে জি সুব্রামনিয়ানের আঁকা এই ছবিগুলি সহ তাঁর বেশ কিছু কবিতার বই, স্কেচের বই এবং ছোটদের জন্য বই-ও এসে পৌঁছেছে কলাভবনে।

Advertisement

কলাভবনের শতবর্ষ উদযাপনের সঙ্গেই কে জি সুব্রহ্মণ্যমের ৯৫ বছরের জন্মদিনও উদযাপিত হবে এই প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে। তিনি বেঁচে থাকাকালীনই প্রতি বছর তাঁর জন্মদিন ৫ ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হত। ২০১৬ সালের ২৯ জুন কে জি সুব্রামনিয়ানের মৃত্যুর পরেও একই ভাবে তাঁর জন্মদিনেই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। গত বছর প্রদর্শনীতে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সময়ে তাঁর বলপেনে আঁকা ৮৪টি ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল।

কলাভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৪৪ সালে কেরলের মাহে থেকে তাঁর দাদার চিঠি সঙ্গে নিয়ে শান্তিনিকেতন আসেন কে জি সুব্রামনিয়ান। সেই সময় কলাভবনের ছাত্র থাকাকালীন তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজকে। বয়সের পার্থক্য কম থাকায় অধ্যাপক হওয়া সত্ত্বেও বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কলাভবনের পড়াশোনা শেষ করে পরবর্তীতে বড়দা আর্ট কলেজের ডিন হিসেবে যোগ দেন। এর পরে আমদাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজাইনের বোর্ড মেম্বারও ছিলেন। ১৯৮০ সাল নাগাদ ভিজিটিং ফেলো হিসেবে কলাভবন আসেন। পরে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হন। এক সময় পেন্টিং বিভাগের প্রধানও ছিলেন। ১৯৮৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তবে কলাভবনেই থেকে যান ২০০৪ সাল পর্যন্ত। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সময় কাটাতেন তিনি।

Advertisement

কলাভবনের একটি বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছেন কে জি সুব্রামনিয়ান। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কলাভবনে চারটি দেওয়ালচিত্র করেন। তার মধ্যে তিনটি কাজ এখনও রয়েছে। করবী ছাত্রীনিবাসের ভিতরে একটি ম্যুরালও রয়েছে। শুধু কলাভবন বা শান্তিনিকেতন বলে নয় নয়াদিল্লি, মুম্বই, বড়দা সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সৃষ্টি ছড়িয়ে রয়েছে। মৃত্যুর কয়েক মাস আগেই ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি পূর্বপল্লিতে থাকা তাঁর বাড়িটি বিশ্বভারতীকে দান করেন। জানা গিয়েছে, সেখানে তৈরি হবে বিনোদবিহারী রিসার্চ সেন্টার।

নন্দন সংগ্রহালয়ের ভারপ্রাপ্ত কিউরেটর অমিতকুমার দণ্ড জানান, প্রদর্শনী চলবে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তিনি নিজেই প্রায় ১৪ বছর কে জি সুব্রামনিয়ানের পূর্বপল্লির বাড়িতে থেকেছেন। একসঙ্গে অনেক কাজ করেছেন। অমিতবাবু আরও জানান, আগামী ১২ মার্চ থেকে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের কাজ নিয়ে একটি প্রদর্শনী নন্দনে শুরু হবে। বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে মৃণালিনী মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে বেশ কিছু কাজ এসে পৌঁছেছে। সেগুলি থেকেই নির্বাচিত কাজগুলি প্রদর্শিত হবে। এর পরে কলাভবনের প্রথম শিক্ষক অসিত হালদারের আঁকা ৩২টি তৈলচিত্র যেগুলি তাঁর ছেলে আদেশ হালদার নেদারল্যান্ডস থেকে পাঠিয়েছেন, সেই চিত্রগুলি নিয়েও একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করবে কলাভবন। কলাভবনের অধ্যক্ষ গৌতম দাস বলেন, ‘‘শতবর্ষ উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে এমন বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন