রাজনৈতিক তাপ যতই থাক, সাধারণ ধর্মঘটের প্রভাব কিন্তু বিশেষ পড়ল না রাঢ়বঙ্গের এই দুই জেলার শিল্পাঞ্চলে।
রঘুনাথপুর শিল্পাঞ্চলের নিতুড়িয়ার কয়লাখনি এলাকা থেকে সাঁওতালডিহি বিদ্যুৎকেন্দ্র বা ভোজুডি কোল ওয়াশারি— সর্বত্রই কাজ হয়েছে স্বাভাবিক ভাবে। তবে, বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঠিকা শ্রমিকদের একটি বড় অংশ না আসায় এ দিন নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ ছিল সেখানে। তবে অন্য বারের মতো ধর্মঘটীরা প্রকল্পের মূল গেট বন্ধ করার পথে হাঁটেননি। তাই স্বাভাবিক কাজ হয়েছে প্রকল্পের ডিভিসি এবং বেসরকারি সংস্থার অফিসগুলিতে। কর্মী, আধিকারিকদের হাজিরার হারও ছিল স্বাভাবিক।
যে কোনও বন্ধ বা ধর্মঘটে রঘুনাথপুর মহকুমার শিল্পাঞ্চল এলাকায় বন্ধ সফল করতে ধর্মঘটীদের বাড়তি উদ্যোগ চোখে পড়ে। পিকেটিং, মিছিল করে বন্ধ সফল করতে মাঠে নামেন সমর্থকরা। এ বার ধর্মঘটে শ্রমিক সংগঠনগুলির একাংশ সামিল হলেও সেই ছবিটা ছিল অনুপস্থিত। সকালের দিকে ডিভিসি-র প্রকল্পের মূল গেটের সামনে কয়েকটি ব্যানার, ফেস্টুন ঝুলিয়ে চলে গিয়েছিল ধর্মঘটের সমর্থনে থাকা শ্রমিক সংগঠনগুলি। নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ি, পাড়া এলাকায় স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলিতেও স্বাভাবিক কাজ হয়েছে। অবশ্য স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলিতে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের প্রভাবও বেশি রয়েছে। সাঁওতালডিহিতেও এ দিন জনজীবন ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকায় এ রাজ্যের একমাত্র কোল ওয়াশারিতে কর্মীদের হাজিরাও ছিল স্বাভাবিক। এলাকায় দোকানপাট সকাল থেকেই খুলে গিয়েছিল। দোকান বন্ধ করাতে পথে নামতে দেখা যায়নি বাম বা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। নিতুড়িয়ার দুই কয়লাখনিতেও উৎপাদন-সহ অন্য কাজ হয়েছে স্বাভাবিক গতিতে। ইসিএল সূত্রে বলা হয়েছে, এ দিন পারবেলিয়া ও দুবেশ্বরী, দুই কয়লাখনিতেই কর্মীদের উপস্থিতি হার ছিল ৮০ শতাংশের বেশি। পারবেলিয়া বাজারও খোলা ছিল।
একই ছবি বাঁকুড়ার শিল্পাঞ্চলে। বৃহস্পতিবার জেলার বড়জোড়া, মেজিয়া ও দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলের কলকারখানাগুলি চালু ছিল। বন্ধ পালনে বাধ্য করতে কোথাও কর্মীদের নিয়ে কারখানার দরজার সামনে জমায়েতও করেনি ধমর্ঘটীরা। তবে, কারখানাগুলিতে শ্রমিকদের উপস্থিতির হার ছিল কম। বন্ধ রুখতে বুধবার থেকেই সক্রিয় হয়েছিল আইএনটিটিইউসি। বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে কথাও বলেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। এ দিনও শিল্পাঞ্চল ঘুরে দেখেন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি স্বপন বাউরি। তিনি বলেন, “শিল্পের উপরে বনধের কোনও প্রভাব পড়েনি। প্রতিদিনই কিছু কর্মী নানা কারণে কাজে যোগ দেন না। এ দিনও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তা বলে কোথাও উৎপাদন ব্যহত হয়নি।’’ যদিও সিটু-র জেলা সভাপতি কিঙ্কর পোশাকের দাবি, “শিল্পে গা জোয়ারি আমাদের পছন্দ নয়। তাই কোথাও জোর করে বন্ধ করিনি আমরা।’’ বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পাদক (শিল্প) প্রবীর ঘোষ বলেন, “জেলার কোনও প্রান্তেই কারখানা বন্ধ থাকেনি। পরিবহণ অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম। শ্রমিকেরাও কম উপস্থিত ছিলেন। তবে শিল্পে বন্ধের প্রভাব পড়েনি।’’