তাঁর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার কোনও যোগত্যাই নেই। তাই অন্য এক টেকনিশিয়য়ানকে সামনে রেখেই নিজে মালিক হিসেবে বাঁকুড়া শহরের কেন্দুয়াডিহিতে নিজের বাড়িতেই ক্লিনিক খুলেছিলেন। দিন কয়েক আগেই নানা অনিয়মের কারণে তাঁর ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। অথচ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তার পরেও চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা বধূকে ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত সুদর্শন মাঝি।
বুধবার সারেঙ্গা থেকে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে আসা এক পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে ক্লিনিকের ভিতরেই ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে সুদর্শনের বিরুদ্ধে। পুলিশের দাবি, নিজের অপরাধ স্বীকারও করেছেন সুদর্শন। এর পরেই তাঁর ক্লিনিক সম্পর্কে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা গেল ওই মারাত্মক তথ্য! বাঁকুড়ার স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “পরিকাঠামো ও বেশ কিছু জিনিস ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্টের পরিপন্থী হওয়ায় গত শুক্রবারই ওই ব্যক্তির ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতরের দল ওই ক্লিনিক পরিদর্শন করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।’’
তার পরেও ক্লিনিক চালু রেখে সুদর্শন আইনবিরোধী কাজই করেছেন বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। এ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর আলাদা ভাবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে কিনা, জানতে চাওয়ায় প্রসূনবাবুর উত্তর, “গোটা ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে। আমাদের কী করণীয়, তা নিয়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।’’ কোনও রকম ডাক্তারি ডিগ্রি ছাড়াই কী ভাবে ক্লিনিক খুললেন সুদর্শন? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “নিজের ডাক্তারি ডিগ্রি না থাকলেও অন্য কোনও চিকিৎসক তাঁর ক্লিনিকে বসবেন বলে জানিয়ে ক্লিনিক খোলার ছাড়পত্র পাওয়া যায়।’’ তিনি জানাচ্ছেন, ক্লিনিকের মালিকের ডাক্তারি ডিগ্রি না থাকলে কখনওই তিনি আল্ট্রাসোনোগ্রাফি বা অন্য পরীক্ষা করার কাজ করতে পারবেন না। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি বা ওই ধরনের পরীক্ষা করতে গেলে সে বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে তার শংসাপত্র পেতে হয়। কোনও ডাক্তার আলট্রাসোনোগ্রাফি করতে পারেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সুদর্শনের ওই প্রশিক্ষণ ছিল না। তিনি অন্য এক আল্ট্রাসোনোলজিস্টকে দিয়ে কাজ করাবেন বলে লিখিয়ে নিজে মালিক হিসেবে ক্লিনিক চালানোর ছাড়পত্র জোগাড় করেছিলেন।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য ওই ক্লিনিকের বেশ কিছু জিনিসপত্র সংগ্রহ করেছে। ক্লিনিকের রেজিস্টার খাতার হদিস চালাচ্ছে পুলিশ। ঘটনার সময় বধূর সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী ও বাবা। ক্লিনিকের রুমের ভিতর থেকে ওই বধূর চিৎকার শুনে তাঁরাই দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে তাঁকে উদ্ধার করেন। পুলিশের তরফে শীঘ্রই ওই বধূর স্বামী ও তাঁর বাবার জবানবন্দি নেওয়া হবে। জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “আমরা সব দিক খতিয়ে দেখেই তদন্ত করছি।”
শুক্রবার বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকান থেকে আড্ডার ঠেক সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ঘটনাটি। সুদর্শনের পড়শিরা অবশ্য প্রকাশ্যে এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রায় এক দশক ধরে এলাকায় ক্লিনিক চালাচ্ছেন সুদর্শন। এর আগে এমন অভিযোগ ওঠেনি। তবে সকলেই চাইছেন, ঘটনার তদন্ত হোক এবং অভিযুক্ত দোষী হলে শাস্তি পাক।