পাসবই নকল, উঠে গেল টাকা

মানবাজার থানার রাঙ্গাটাঁড় গ্রামের বাসিন্দা ছুটুলাল মাহাতো নামের ওই ব্যক্তির সামান্য জমি রয়েছে। ছাগল কেনাবেচার ছোটখাটো ব্যবসাও করেন তিনি। সে সব করেই তিল তিল করে ব্যাঙ্কের খাতায় সঞ্চয় জমা করিছেলন।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৮
Share:

দু’টি পাসবই। দু’টিতেই নাম, বাবার নাম, ঠিকানা থেকে অ্যাকাউন্ট নম্বর— হবহু এক। ফটোর উপরে ব্যাঙ্কের শিলমোহরও রয়েছে। শুধু ছবি দু’টিই আলাদা। নিপুণ ভাবে জালিয়াতি করা নকল পাসবইয়ের সাহায্যে নামের মিল দেখিয়ে এক গ্রাহকের পাসবই থেকে কয়েক দফায় ১ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হল! মানবাজার হাইস্কুল এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এই ঘটনায় অনেকেই তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন। এতে ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশেরও জড়িত থাকার ব্যাপারে সন্দেহ করছেন অনেকে। প্রতারিত গ্রাহক বৃহস্পতিবার বিডিও-র (মানবাজার ১) কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।

Advertisement

মানবাজার থানার রাঙ্গাটাঁড় গ্রামের বাসিন্দা ছুটুলাল মাহাতো নামের ওই ব্যক্তির সামান্য জমি রয়েছে। ছাগল কেনাবেচার ছোটখাটো ব্যবসাও করেন তিনি। সে সব করেই তিল তিল করে ব্যাঙ্কের খাতায় সঞ্চয় জমা করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী কাজল মাহাতো বুধবার ব্যাঙ্কে পাসবই ‘আপডেট’ করাতে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের এতদিনের জমিয়ে রাখা টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘স্বামী ব্যবসার কাজে বাইরে ঘোরাঘুরি করেন। তাই ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। ‘আপডেট’ করে ব্যাঙ্কের কর্মী যখন বলেন, অ্যাকাউন্টে মাত্র ১৩৬৩ টাকা পড়ে রয়েছে, শুনেই মাথা ঘুরে গিয়েছিল। স্বামী জানিয়েছিল, ব্যাঙ্কে ১ লক্ষ ৩৫ হাজারের কিছু বেশি টাকা জমা থাকার কথা। মেয়ের বিয়ের জন্যে জমাচ্ছিলাম। সব শেষ
হয়ে গেল!’’

তিনি জানান, ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, গত অগস্ট মাস থেকে প্রথম চার বার এই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলা হয়েছে। শেষ দু’বার মানবাজার থানার ইচাডি গ্রামের কাস্টমার সার্ভিস প্রোভাইডার-এর (ব্যাঙ্ক মিত্র) মাধ্যমে টাকা তোলা হয়েছে। ওই ব্যাঙ্ক মিত্র সন্তোষ প্রামাণিক ব্যাঙ্কে এসে জানান, একই নামের ওই গ্রামের এক বাসিন্দা তাঁর কাছ থেকে দু’দফায় টাকা তুলেছেন। তখন সেই ব্যক্তিকে ডেকে পাঠানো হয়। দেখা যায়, দু’টি পাসবই হুবহু এক। শুধু ছবি আলাদা।

Advertisement

কাজলদেবীর দাবি, ওই ব্যক্তি দাবি করেছেন, এই ব্যাঙ্কে তাঁর কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা তাঁকে ওই পাসবই তৈরি করে দেন। পরিবর্তে তুলে ফেলা টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা ওই নেতাকে দিতে হয়েছে। ওই ব্যক্তি দাবি করেন, ‘‘২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ হাজার টাকা বাদে বাকি সব টাকা জমা করব বলে ব্যাঙ্কে মুচলেকা দিয়ে এসেছি। আর কখনও এমনটা করব না।’’

তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়নি কেন? ব্যাঙ্কের ম্যানেজার মনোজ ঠাকুর বলেন, ‘‘আমরা আগে টাকাটা উদ্ধারের চেষ্টা করছি। পরে অভিযোগ জানাব।’’

যদিও স্থানীয়দের অনেকেই এই প্রতারণায় কিছু ব্যাঙ্ক কর্মীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। প্রতারিত ছুটুলাল মাহাতোর ছেলে পীতাম্বর মাহাতোর প্রশ্ন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে গেলে সই বা টিপছাপ মেলানো হয়। সেই সঙ্গে গ্রাহকের ছবিও মেলানো নিয়ম। পাসবই জাল করা হলেও ওই ব্যাপারগুলি খুঁটিয়ে দেখলেই প্রতারণা ঠেকানো যেত।’’ নকল পাসবই কী ভাবে তৈরি হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের দাবি, ‘‘আমরা কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করছি না। এই ঘটনায় ব্যাঙ্ক কর্মীদের কেউ জড়িত থাকলে, তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।’’

বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকার বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে টাকা রেখে প্রতারিত হওয়ার একটা অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন