কেরলে জলবন্দি কাকুটিয়ার যুবক

এতে চিন্তায় বিশ্বাস পরিবারের সকলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০২:১৩
Share:

পেক্ষা: কাকুটিয়া গ্রামের সুশীল বিশ্বাসের পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।

বানভাসি কেরল থেকে কাকুটিয়ার বাড়িতে ফোন করেছিলেন সুশীল বিশ্বাস। ভাইকে বলেছিলেন— ‘একটা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে। চার দিকে শুধু জল। খাবার নেই। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না।’’ ৪৮ ঘণ্টা কেটেছে তার পরে। বারবার সুনীলবাবুর ফোনে শোনা গিয়েছে একটাই কথা— ‘সুইচড অফ’। এতে চিন্তায় বিশ্বাস পরিবারের সকলে।

Advertisement

একই পরিস্থিতিতে রয়েছে কাকুটিয়ার আরও ৮-১০ জন যুবকের পরিবার। উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে সমর বাড়ৈ, কাঙাল বৈদ্যদের বাড়ির লোকেদের। ঘরের ছেলেদের সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি। বানভাসি কেরলের কোন প্রান্তে তাঁরা রয়েছেন, তারও কোনও ধারণা নেই কারও। কোন জেলা, কোন শহর বা গ্রামের কোন প্রান্তে, কী ভাবে রয়েছেন সমর, কাঙালরা— কিছুতেই মিলছে না তার উত্তর।

সোমবার দুপুরে বোলপুর থেকে কিলোমিটার পনেরো দূরের কাকুটিয়ার বড়বাগানে পৌঁছে দেখা মিলল উৎকণ্ঠায় থাকায় সে সব পরিবারের লোকেদের।

Advertisement

তবে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই কিছুটা হলেও আশ্বাস জুগিয়েছে হরিচাঁদ দাসের ফোন। এ দিনই দুপুরে বাড়িতে ফোন করে তিনি জানান, আপাতত ভাল আছেন। যেখানে রয়েছেন, সেখানে বন্যা পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ হয়নি।

গ্রামবাসীদের একাংশ জানান, রোজগারের জন্য প্রতি বছরই কেউ কেউ ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন। তাঁদের মধ্যেই কেউ তিন বছর ধরে রয়েছেন কেরলে, কেউ বা গিয়েছেন ৬ মাস আগে। সময় বদলেছে। ঘরে ঘরে স্মার্টফোন। সুনীলবাবুর ভাই সুকান্তবাবু জানান, কথা বলার পাশাপাশি ‘ভিডিও কল’-এ তাঁর দাদার সঙ্গে কথা হত। কিন্তু টানা ৪৮ ঘণ্টা তাঁর সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করতে না পেরে চিন্তায় পড়েছেন সকলে।

কেরলের কোন প্রান্তে গিয়েছিলেন তাঁদের বাড়ির ছেলেরা— এ কথা স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি কোনও পরিবারই। শুধু জানিয়েছেন, কেউ সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, কেউ আসবাবপত্র তৈরি করেন। তবে বন্যা পরিস্থিতির ভিন্ন বর্ণনা শুনে বোঝা যায় তাঁরা সকলে এক জায়গায় থাকেন না। এ প্রসঙ্গে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘মহকুমাশাসক এবং ব্লক উন্নয়ন অধিকারিকদের বলা হয়েছে ওই সব পরিবারের পাশে থাকতে। তাঁদের সাহায্য করতে। নবান্ন থেকে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। তার মাধ্যমে কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে।’’

এ দিকে, কেরলের বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সংগ্ৰহে এগিয়ে এল বিশ্বভারতীর একদল পড়ুয়া। শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে তাঁরা ত্রাণ সংগ্রহ করেন। পড়ুয়াদের পক্ষে স্বপ্ননীল সাহা এবং অমিত দে জানান, তাঁদের কিছু বন্ধু কেরলে রয়েছেন। ত্রাণ সংগ্রহ শেষ হলেই তাঁদের সাহায্য নিয়ে কেরলে পৌঁছে যাবেন পড়ুয়াদের একটি দল। কেরলে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে রামপুরহাট শহরের রাস্তায় ত্রাণ সংগ্রহে নামল সিপিএম। সোমবার সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম, জেলা নেতৃত্বের তরফে গৌতম ঘোষ, সঞ্জীব বর্মন, সঞ্জীব মল্লিক, অমিতাভ সিংহ ওই অভিযানে যোগ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন