Subhash Chakraborty

ঝুমুরের সুরে শেষ বিদায়

শনিবার বেলায় তাঁর মেয়ে অর্পিতা চক্রবর্তীর ‘ফেসবুক’ পোস্ট থেকে মেলে শিল্পীর মৃত্যু-সংবাদ। পোস্টে শিল্পীর দেহ কিছু সময়ের জন্য রবীন্দ্রসদনে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৭
Share:

শ্রদ্ধা জানাতে হাজির অনুরাগীরা। রবীন্দ্রসদনে শনিবার। নিজস্ব চিত্র

ঝুমুর গানের মাধ্যমে বাঙালির মনে পাকা জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। ‘লাল পাহাড়ির দ্যাশ’ খ্যাত সুভাষ চক্রবর্তীকে তাঁর গাওয়া ঝুমুর গানেই শেষ বিদায় জানালেন গুণমুগ্ধেরা।

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরে অসুস্থ হয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শিল্পী। সমাজ মাধ্যমে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা গুঞ্জনও রটে। শনিবার বেলায় তাঁর মেয়ে অর্পিতা চক্রবর্তীর ‘ফেসবুক’ পোস্ট থেকে মেলে শিল্পীর মৃত্যু-সংবাদ। পোস্টে শিল্পীর দেহ কিছু সময়ের জন্য রবীন্দ্রসদনে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি। পরে, বিকেলে শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে হাজির হয়েছিলেন অসংখ্য অনুরাগী। ধামসা বাজিয়ে সুভাষের গাওয়া ‘লাল পাহাড়ির দ্যাশে যা’, ‘বাঁকুড়ার মাটিকে পেনাম করি দিনে দুপুরে’ গেয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। সেখানে ছিলেন রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। শিল্পীর মৃত্যুতে শোক জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

রাতে পৈতৃক বাড়ি বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে নিয়ে আসা হয় শিল্পীর দেহ। সেখানে সুভাষকে শেষ বার দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন অগণিত মানুষ। বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাঁকুড়া এক কৃতী শিল্পীকে হারাল। ঝুমুর গেয়ে শ্রোতাদের কাছে বাঁকুড়াকে বিশেষ পরিচিতি দিয়েছিলেন তিনি।” পরে, কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শিল্পীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

Advertisement

সত্তরের দশক থেকে বাংলার লোকসঙ্গীত জগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন সুভাষ। নিজে ঝুমুর গান লিখে সুর করার পাশাপাশি লোককবি অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় বা চারণকবি বৈদ্যনাথের মতো অনেকের কবিতা তাঁর সুরে জীবন্ত হয়ে ওঠে। ‘লাল পাহাড়ি’র কবি অরুণ চক্রবর্তীর আক্ষেপ, “বাংলা ছাড়িয়ে ত্রিপুরা, অসমেও সুভাষের গানের জনপ্রিয়তা ছিল। লাল পাহাড়ী অ্যালবাম ওই সব রাজ্যেও বিক্রিতে রেকর্ড করেছিল। ওঁর সঙ্গে আরও কাজ হলে অনেক অনবদ্য সৃষ্টি করা যেত। তা হল না।”

বর্তমান প্রজন্মের লোকশিল্পীদের কাছেও সুভাষ এক দৃষ্টান্ত। বাঁকুড়ার ঝুমুরশিল্পী রবি বাগদি বলেন, “সুভাষদা বয়সে বড় হলেও প্রায় একই সময়ে সঙ্গীতজগতে আমাদের পথচলা শুরু। তবে ওঁর প্রতিভার কোনও বিকল্প হতে পারে না। নিমেষে গান লিখে তাতে সুর দেওয়ার অসামান্য দক্ষতা ছিল। ঝুমুরে নিজস্ব ঘরানা তৈরি করেছেন সুভাষদা। বহু যুগ ধরে সেই ঘরানা শ্রোতাদের মুগ্ধ করে যাবে।”

ঝুমুর নিয়ে নানা জায়গায় কর্মশালাও করতেন শিল্পী। সে কথা টেনে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির ঝুমুরশিল্পী তাপস মাল বলেন, “বেশ কিছু কর্মশালায় ওঁর কাছ থেকে সরাসরি ঝুমুরের নানা আঙ্গিককে চেনার সৌভাগ্য হয়েছিল। এখনও যে কোনও অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের তরফে সুভাষদার গান গাওয়ার অনুরোধ আসবেই। ব্যান্ড থেকে শুরু করে আধুনিক শিল্পীরা এখন যে ঝুমুর গান গাইছেন, এর পিছনে সুভাষদার ভূমিকা সব চেয়ে বড়।” বাঁকুড়ার সঙ্গীতশিল্পী শ্রী মহাদেবও জানান, হারমোনিয়াম, তবলাতেই মঞ্চ কাঁপানোর ক্ষমতা ছিল শিল্পীর। ওঁর অভাব মেটার নয়।

অর্পিতার আক্ষেপ, “কয়েক মাস আগে বাবা নতুন গান, 'বাঁকড়ি দেশের মানুষ আমি, গাইব ঝুমুর গান' রেকর্ড করেছিলেন। ভেন্টিলেশনে যাওয়ার ঠিক আগে আগেই সেটি প্রকাশ করতে বলেছিলেন। তিনি যখন ভেন্টিলেশনে, গানটি ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়। আর কখনও গান গাইবে না বাবা!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন