কালোবাজারি সারে, নালিশ

মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়া মাত্রই বিষয়টি কৃষি দফতরকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেব।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:১৪
Share:

কয়েকজন অভিযোগ করেন, ধানের জন্য সার কিনতে গেলে বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে।

খোলাবাজারে সারের ‘কালোবাজারি’ হচ্ছে— ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে গিয়ে চাষিদের কাছ থেকে এমনই অভিযোগ শুনলেন পুরুলিয়ার পাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক উমাপদ বাউড়ি। তার পরেই সারের কালোবাজারি রুখতে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায় যুব তৃণমূল। কৃষি দফতরকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর।

Advertisement

মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়া মাত্রই বিষয়টি কৃষি দফতরকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেব।” নির্দেশ পেয়ে তাঁরা তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানাচ্ছেন রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সহকারী কৃষি অধিকর্তা মুক্তেশ্বর সর্দার। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার থেকেই দফতরের কর্মীরা সারের দোকানগুলি পরিদর্শনে যাচ্ছেন।’’

বুধবার সন্ধ্যায় উমাপদবাবু রঘুনাথপুর ২ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েতের কাশীবেড়িয়া গ্রামে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে জনসংযোগে যান। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই কৃষিজীবী। কয়েকজন অভিযোগ করেন, ধানের জন্য সার কিনতে গেলে বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিধায়ক বলেন, ‘‘কাশীবেড়িয়া গ্রামে কিছু চাষি জানিয়েছেন, সারের প্যাকেটে যা দাম, তার থেকে ব্যবসায়ীরা বেশি টাকা নিচ্ছেন। অভিযোগ শোনার পরেই প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

Advertisement

রঘুনাথপুর ২ ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি স্বপন মেহেতা জানান, এ দিন তাঁরা মহকুমাশাসকের কাছে সারের কালোবাজারি বন্ধের ব্যাপারে লিখিত ভাবে আর্জি জানিয়েছেন। স্বপনবাবুর দাবি, ‘‘রঘুনাথপুর এলাকায় কিছু সারের দোকানে ইউরিয়া-সহ অন্য কিছু সারের দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে। চাষিরা জানিয়েছেন, ইউরিয়া সারের দাম বস্তাপিছু ২৫০-২৭০ টাকা। সেখানে বাজারে চাষিদের ওই সার চারশো থেকে সাড়ে চারশো টাকায় কিনতে হচ্ছে। ডিএপি সারের দাম বস্তা পিছু ১,১০০ টাকা। কিন্তু বাজারে সেই সার বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়।’’

চাষিরা জানাচ্ছেন, এ বছর চাষের অবস্থা মোটেই ভাল নয়। উঁচু জমিতে আমন ধানের চাষ কার্যত হয়নি বললেই চলে। যেটুকু জমিতে চাষ করা গিয়েছে, সেখানে ফলন পেতে গেলে সারের প্রয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে বলেই মত চাষিদের। ফলে এই অবস্থায় চড়া দামে সার কিনতে হওয়ায় চাষের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রঘুনাথপুর ২ ব্লকের চাষিদের একাংশের।

কাশীবেড়িয়া গ্রামের চাষি তারাপদ মাজি, শালগোড়া গ্রামের তপন মেহেতারা বলছেন, ‘‘বৃষ্টির অভাবে এমনিতেই চারা রোওয়ার খরচ বেড়েছে। বেশি বয়সের চারা লাগাতে হয়েছে শুধু জলের অভাবে। ফলে প্রত্যাশামতো ফলন পেতে গেলে সার দেওয়া প্রয়োজন।’’ তাঁদের অভিযোগ, সমবায় থেকে ন্যায্য মূল্যে সার পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই তাঁদের খোলা বাজার থেকে চড়া দামে সার কিনতে হচ্ছে। তারাপদবাবুর অভিযোগ, ‘‘কেন বেশি দাম দেব প্রশ্ন করলেও সদুত্তর মিলছে না। এমনকি, সার কেনার পরে রশিদও দিচ্ছেন না দোকানদারেরা।”

যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ রঘুনাথপুর এলাকার কয়েকজন সার ব্যবসায়ী। তাঁদের দাবি, বাজারে সারের দাম ওঠানামা করছে। সারের দাম গত বারের থেকে কিছুটা চড়া। অনেক সময় তাঁদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে চাষিদের কাছেও বেশি দাম নিতে হচ্ছে। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের এক কৃষি সমবায় সমিতির কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, এ বছর তাঁদের সমবায়ে সার দেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা চাষিদের ন্যায্য মূল্যে সার দিতে পারছেন না। সমস্যাটি গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন