সার, জলসেচের পাঠ কৃষক-বিজ্ঞানী সমাবেশে

কৃষকদের এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন কৃষি-বিজ্ঞানীরা। ঠিক এ রকমই একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব দেখা গেল ‘কৃষক-বিজ্ঞানী সমাবেশ’-এ। তাঁদের সব প্রশ্নের উত্তর ঠিক করে মেলায় বেজায় খুশি কৃষকেরাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৫
Share:

কৃষকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। ছবি: দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

‘এখন তো আমগাছে মুকুল আসার সময়। কী করলে ভাল ফলন হবে?’ কিংবা ‘তিলের কোন বীজটা বেশি ভাল?’, ‘আচ্ছা রাতের বেলায় ছাগলের মতো করে গাছের পাতা খেয়ে নিচ্ছে এটা কী পোকা?’ এক জন তো সমস্যা বোঝাতে অসুবিধা হওয়ায় বলেই দিলেন, ‘‘আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটা দিয়ে দিন স্যার। ছবি তুলে আপনাকে পাঠিয়ে দেব। তার পর দেখে বলে দেবেন কী করতে হবে।’’

Advertisement

কৃষকদের এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন কৃষি-বিজ্ঞানীরা। ঠিক এ রকমই একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব দেখা গেল ‘কৃষক-বিজ্ঞানী সমাবেশ’-এ। তাঁদের সব প্রশ্নের উত্তর ঠিক করে মেলায় বেজায় খুশি কৃষকেরাও। শুক্রবার বিশ্বভারতীর পল্লিশিক্ষা ভবনের অন্তর্গত শস্যবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে এবং নাবার্ডের সহযোগিতায় তিন দিনের জাতীয় আলোচনাসভার উদ্বোধন হয়। প্রাকৃতিক সম্পদগুলির সুষ্ঠভাবে ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে কৃষকের আয়বৃদ্ধি, পুষ্টিসুরক্ষা এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এই বিষয়টি নিয়েই তিন দিন আলোচনা চলেছে।

গাছে সার ব্যবহারের পদ্ধতি, আগাছানাশ, জলসেচ, মাটিতে জিঙ্কের ঘাটতি সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু থেকে আলোচনাসভায় যোগ দিতে গবেষক পড়ুয়ারা এসেছিলেন। এই জাতীয় আলোচনাসভার শেষ দিনে ‘কৃষক-বিজ্ঞানী সমাবেশ’ নামে একটি অংশ রাখা হয়েছিল। রবিবার এই সমাবেশেই যোগ দেন বোলপুর থেকে শুরু করে বীরভূম জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা প্রায় ৫৫ জন কৃষক। চোখের সামনে কৃষিবিজ্ঞানীদের পেয়ে চাষের বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন তাঁরা।

Advertisement

এই সমাবেশে কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেবব্রত দাশগুপ্ত, তৃষিত চক্রবর্তী, কাজল সেনগুপ্ত প্রমুখ। ধান, তিল, ছোলা, মুগ, পিঁয়াজ চাষ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ফলের মধ্যে আম, নারকেল নিয়েও আলোচনা হয়। তিলচাষের ক্ষেত্রে পোকা লাগার পরে নয়, বরং আগে থেকেই পোকা যাতে না লাগে সেই ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ ছাড়াও আলুচাষের পরে সেই জমিতে ডালশস্য না লাগিয়ে তৈলজাতীয় কিছু লাগানোর কথা বলেন।

আমগাছের ক্ষেত্রে মুকুল এল মানেই বেশি জল দেওয়া শুরু হয়ে গেল এমন করতেও নিষেধ করেছেন। কৃষিবিজ্ঞানীরা জানান, মুকুল আসার পর বিষ প্রয়োগ না করাই ভাল। তবে আগে জিঙ্ক, বোরন দেওয়া না থাকলে মুকুল আসার পরেও দেওয়া যেতে পারে। নারকেল এবং কলাগাছে প্রচুর পরিমাণে জল প্রয়োজন হয় তাই ভাল ফল পেতে গেলে এই গাছগুলিতে পর্যাপ্ত জল লাগবে। নারকেল গাছে ঠিক ভাবে ফল ধরতে আট-নয় বছর সময় লাগে তাই প্রথম কয়েক বছরে ফল না হলে চিন্তার কোনও কারণ নেই বলেই কৃষিবিজ্ঞানীরা জানান।

রবিবার আলোচনা সভায় এসেছিলেন গোপীনাথপুর গ্রামের মনোজ গড়াই, দীনবন্ধু ভাণ্ডারী, বিনুরিয়া গ্রামের অধীরকুমার গড়াই, বাহাদুরপুর গ্রামের শুকদেব ঘোষরা। তাঁরা বললেন, ‘‘খুবই ভাল লেগেছে এই আলোচনাসভায় এসে। অনেক সমস্যার সমাধানের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। এ বছর বিশ্বভারতী থেকে বীজ পাওয়ায় দারুণ চাষ হয়েছে। আমরা খুব খুশি।’’ জাতীয় আলোচনাসভার আহ্বায়ক অরুণকুমার বারিকের কথায়, ‘‘কৃষকেরা সরাসরি বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে সমস্যার সমাধান পেয়ে যান, এমনটা ভেবেই এই সমাবেশের আয়োজন করেছিলাম আমরা। ওঁরা উপকৃত হয়েছেন তাতে আমরা খুশি।’’

পল্লিশিক্ষা ভবনের পড়ুয়াদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘জাতীয় আলোচনাসভা বলতেই আমরা বুঝি গবেষক ছাত্রছাত্রী কিংবা কোনও বিখ্যাত ব্যক্তি বক্তব্য রাখবেন। কিন্তু কৃষকদের নিয়ে আলোচনাসভার একটা অংশে যে কৃষকেরাও যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, এতে আমরা খুব খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন