রাশ টানতে মরিয়া পুলিশ

চকলেট চাই? পুরুলিয়ায় থলে হাতে হাজির কিশোর

পুরুলিয়া শহরেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে কালীপুজোর আগে গ্রামাঞ্চলে নিষিদ্ধ চকলেট বোমা বিক্রির পরিস্থিতি কী পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা সহজেই কল্পনা করা যাচ্ছে বলে বাসিন্দাদের একাংশের মত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share:

পুলিশের চোখ এড়িয়ে চলছে বিকিকিনি। —নিজস্ব চিত্র।

চকলেট আছে?

Advertisement

প্রশ্নের উত্তরে দোকানদারের আত্মীয় এক মহিলার কাছ থেকে পাল্টা প্রশ্ন ধেয়ে এল—“কেন থাকবে না? চকলেট বিক্রি করতে মানা আছে না কি?”

ঘটনাস্থল, পুরুলিয়া সদর থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটি গলির দোকান। পুরুলিয়া শহরেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে কালীপুজোর আগে গ্রামাঞ্চলে নিষিদ্ধ চকলেট বোমা বিক্রির পরিস্থিতি কী পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা সহজেই কল্পনা করা যাচ্ছে বলে বাসিন্দাদের একাংশের মত। গলির ওই দোকানেই মিলল দু’টি ব্র্যান্ডের চকলেট বোমা। সাধারণ ব্র্যান্ডের এক ডজন বোমা মিলছে ৫০ টাকায়। আর নামী ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে দামটা ২৪০ টাকা প্রতি প্যাকেট। দামের এত ফারাক কেন? দোকানদারের উত্তর, ‘‘পরেরটার ক্ষেত্রে শব্দের গ্যারান্টি দিতে পারি। বলতে পারি, একটাও মিস হবে না। আর আওয়াজ নিয়ে কিছুই বলার নেই।’’

Advertisement

রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছেন, শব্দবাজি এ বারও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। বাজার ঘুরলে কিন্তু অন্য ছবি। বিক্রেতারা নিষেধ মানতে খুব একটা ইচ্ছুক নন। কালীপুজো আসতে এখনও দিন তিনেক বাকি। বিক্রেতাদের মতে, শব্দবাজি বিক্রির এটাই মোক্ষম সময়। ঘটনা হল, ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা পুরুলিয়ায় নিষিদ্ধ শব্দবাজির আমদানির বেশির ভাগটাই আসে পড়শি রাজ্য থেকে। পুরুলিয়া, আদ্রা, রঘুনাথপুরের বাজি বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই জেলায় চকলেট, দোদমা বা এক সঙ্গে কান ফাটানো আওয়াজে ফাটে, এই ধরনের শব্দবাজি আসে ধানবাদের ঝরিয়া, চিরকুন্ডা ও বোকারোর চাষ থেকে। কলকাতায় ধরপাকড় শুরু হওয়ার পরে সেখান থেকে শব্দবাজির আমদানি গত কয়েক বছর ধরে কমেছে। সেই শূন্যস্থানটা পূরণ করেছে ঝাড়খণ্ড।

পুলিশি ধরপাকড়ে অবশ্য গত দুই-তিন বছর ধরে পুরুলিয়ায় কালিপুজো বা দিওয়ালিতে শব্দবাজির উপদ্রব অনেকটাই কম। পুলিশের দাবি, দুর্গাপুজোর সময়েই ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে প্রচুর শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। ওই অভিযানে পুরুলিয়া শহর থেকে পাঁচ ও রঘুনাথপুর থেকে এক, মোট ছয় বাজি বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফলে কালীপুজোর আগে শব্দবাজি বিক্রিতে অনেকটাই রাশ টানা গিয়েছে।

ভূক্তভোগীদের অবশ্য দাবি, দিওয়ালির রাত এলে এখনও শব্দবাজির দাপট মালুম হয়। মুহূর্মুহূ চকলেট বোমায় এখনও কেঁপে ওঠেন বয়স্ক কিংবা শিশুরা। পুরুলিয়া শহরেরই চকবাজার এলাকায় বাজির পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। সদর থানা লাগোয়া ওই এলাকায় চকলেট বোমার খোঁজ করতেই কয়েক জন বিক্রেতা জানালেন, তাঁরা রাখছেন না। এমন সময় মঞ্চে এক কিশোরের আর্বিভাব। চকলেট চাই? প্রশ্ন করল সে। ঘাড় নাড়তেই কিছুটা দূরে রাখা একটা থলি নিয়ে ফের হাজির ওই কিশোর। থলি থেকে বেরোলে সেই কম দামি চকলেট। বাজি বিক্রেতাদেরই একাংশ জানালেন, ওই কিশোররা কোনও এক জায়গায় বসে বাজি বিক্রি করে না। বাজির দোকানের আশপাশে তারা ঘুরঘুর করে। খদ্দের কোনও দোকানে চকলেটের খোঁজ করলেই এরা হাজির হয়। পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে এ ভাবেই দিব্যি নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি চলেছে পুরুলিয়ায়।

রঘুনাথপুর, আদ্রা, নিতুড়িয়ার মতো এলাকাতেও শব্দবাজি হিসাবে চকলেট বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেনি পুলিশ। রেলশহর আদ্রায় ফি বছরই দীপাবলির রাতে দেদার চকলেট ফাটে। শহরের উত্তর বা দক্ষিণ প্রান্তে বাজির পসরা সাজিয়ে বিক্রেতারা এখনও বসেননি ঠিকই। কিন্তু ঝাড়খণ্ড এমনকী কলকাতা থেকে চকলেট এখনই চলে এসেছে বাজারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা জানান, গত বছর আগেভাগে চকলেট, দোদমা এনেছিলেন। কিন্তু পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই বাজির বেশির ভাগটাই বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিল। ওই বিক্রেতার কথায়, ‘‘গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে এ বার সকলেই একটু সতর্ক। তাই তাই এ বার বাজারে ওই শব্দবাজি মিলবে কালীপুজোর আগের দিন থেকে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, পুজো শুরু হয়ে গেলে পুলিশ মণ্ডপে বা রাস্তায় ভিড় সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে নজরদারি বা অভিযান কম হয়। একই বক্তব্য রঘুনাথপুরের কিছু বাজি বিক্রেতার। তাঁরা জানান, গত বছর পুজোর আগেই শহরের নতুন বাজার এলাকায় মজুত করে রাখা শব্দবাজি ফেটে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তার পরে পুজোয় পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় করেছে। অনেক টাকার বাজি বাজেয়াপ্ত করেছে। এ বার তাই আগেভাগে বাজি বাজারে আনতে চাইছেন না কেউ। জানা যাচ্ছে, এ বারও গোপনে গুদামে মজুত করা হয়েছে। ঠিক সময়ে বাজারে আসবে।

তবে পুলিশের দাবি, এ বার শব্দবাজির উপদ্রব রুখতে নজরদারি এবং অভিযান দুর্গাপুজোর সময় থেকেই চলছে। ফলে কালীপুজোয় এ বার চকলেট, দোদমার দাপট কমই থাকবে। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোয় ছ’জনকে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রির অভিযোগে ধরা হয়েছিল। প্রচুর শব্দবাজি আটকও করা হয়েছিল। কালীপুজোর আগে পুরুলিয়া শহর, রঘুনাথপুর, আদ্রায় নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি বন্ধে নজরদারি চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন