ক্ষোভ বিড়ি শ্রমিকদের

হাসপাতাল তৈরির কাজ বন্ধ ছ’বছর

কিন্তু একটি ইটও বসানো হয়নি। ফলে কবে কাজ শেষ হয়ে ওই হাসপাতাল চালু হবে, তা এখন বিশ বাঁও জলে।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

কোটশিলা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:১০
Share:

পোড়ো: মাঝ পথে থমকে গিয়েছে নির্মাণের কাজ। নিজস্ব চিত্র

মাঝপথেই থমকে গিয়েছে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। তারপরে প্রায় ছ’বছর পার হয়ে গেলেও কোটশিলার টালি সেন্টার এলাকায় বিড়ি শ্রমিকদের হাসপাতালের কাজ আর শুরু হল না। কেন্দ্র থেকে রাজ্য সরকারের কাছে বারবার হাসপাতালের কাজ শেষ করার জন্য দাবি জানিয়েছেন বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব। দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম মন্ত্রকেও দরবার করে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু একটি ইটও বসানো হয়নি। ফলে কবে কাজ শেষ হয়ে ওই হাসপাতাল চালু হবে, তা এখন বিশ বাঁও জলে।

Advertisement

২০০৬ সালে চাষমোড়-তুলিন রাজ্য সড়কের পাশে টালি সেন্টার এলাকায় এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী বিলাসীবালা সহিস। বিড়ি শ্রমিকদের যৌথ সংগ্রাম সমিতির আহ্বায়ক ভীম কুমারের দাবি, ‘‘এই জেলায় নানা ভাবে বিড়ি শিল্পের সঙ্গে কমবেশি চার লক্ষ পরিবার যুক্ত। শুধু বিড়ি বাঁধার কাজ করেন দেড় লক্ষের মতো শ্রমিক। কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম দফতরের হিসেব মোতাবেক এই জেলা থেকে বিড়ি শিল্পে সেস বাবদ দৈনিক লক্ষাধিক টাকা শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা পড়ত (এই তথ্য জিএসটি চালু হওয়ার আগে জুন মাস পর্যন্ত)। এই টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমেই বিড়ি শ্রমিকদের কল্যাণেই ব্যয় করা হয়। কিন্তু এই জেলার বিড়ি শ্রমিকদের হাসপাতাল এখনও তৈরিই হল না।’’

রাজ্যের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ায় এত বিড়ি শ্রমিক থাকলেও তাঁদের জন্য আলাদা ভাবে চিকিৎসার সে রকম কোনও বন্দোবস্ত নেই। শ্রমিকেরা দাবি তোলেন, পুরুলিয়ায় বিড়ি শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল করতে হবে। ভীমবাবু জানান, সেই দাবি মেনে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার এই হাসপাতাল গড়তে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। যদিও হাসপাতালের জন্য প্রস্তাবিত জমি নিয়ে মামলা হওয়ায় নির্মাণের কাজ শুরু হতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। পরবর্তীকালে মামলার জট কাটিয়ে ২০০৮ সাল নাগাদ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। স্থানীয় একটি ট্রাস্ট জমি কিনে সেই জমি রাজ্য সরকারকে হস্তান্তর করে। রাজ্য সরকার এক টাকা মূল্যের বিনিময়ে মোট আট একর ২৪ ডেসিমেল জমি কেন্দ্রীয় সরকারকে হস্তান্তর করে। তারপরে কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে হঠাৎ করে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

Advertisement

বিড়ি শ্রমিকদের সংগঠনের নেতা তথা জয়পুরের প্রাক্তন বিধায়ক ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তারপর কাজ আর শুরু হল না। একাধিকবার দিল্লিতে গিয়ে শ্রম মন্ত্রকে স্মারকলিপিও দিয়েছি। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি।’’

ভীমবাবুর কথায়, ‘‘ শুধু জানালা-দরজা লাগানো, জলের লাইন-সহ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। পাঁচিল, হাসপাতাল ভবন, রাস্তা, রং অনেকখানি কাজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে অনেককিছুই।’’ তিনি জানান, এই হাসপাতালে শুধু বিড়ি শ্রমিকেরাই নয়, সাধারণ মানুষও চিকিৎসা করাতে পারবেন। বর্তমান রাজ্য সরকার এই বিষয়টি নিয়ে নীরব না থেকে দিল্লিতে গিয়ে প্রশ্ন তুললে, কাজ তরান্বিত হতো।’’ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র পুরুলিয়া জেলা সভাপতি প্রফুল্ল মাহাতো দাবি করেন, ‘‘আমরা রাজ্যের শ্রমমন্ত্রীকে বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। আমরাও দ্রুত এই হাসপাতাল চালু করার দাবি তুলছি।’’

পুরুলিয়ার তৃণমূল সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো বলেন, ‘‘বিড়ি শ্রমিকদের সংগঠনের নেতৃত্ব আমার কাছে সমস্ত কাগজপত্র দিলে আমি বিষয়টি সংসদে তুলব।’’ ভীমবাবু দাবি করেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার এই দাবি জানিয়েছি। ফের প্রশাসনের কাছে দাবি জানাব। প্রশাসন অচলাবস্থা কাটাতে বৈঠক ডাকুক। সেই বৈঠকে আমাদের ডাকা হলে আমরা থাকব, সাংসদ থাকলে আমরা তাঁকে আমাদের কাছে যা নথি রয়েছে তুলে দেব।’’

জেলার সহকারী শ্রম মহাধ্যক্ষ (পুরুলিয়া পশ্চিম) সঞ্জয় দেবনাথ জানান, হাসপাতালটি কেন্দ্রীয় সরকার তৈরি করছে। কেন বন্ধ রয়েছে তাঁরা তা জানেন না। তবে মহকুমাশাসক (ঝালদা) সন্দীপ টুডু হাসপাতালের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন