নজরে বন উৎসবের ডাক।—নিজস্ব চিত্র
তিরও ছুটবে, আবার প্রাণীও মরবে না। এমন আশ্চর্য বিষয় নজির তৈরি হতে পারে এ বারের শিকার উৎসবে। আজ, শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে রবিবার ভোর পর্যন্ত অযোধ্যা পাহাড়ে চলবে শিকার উৎসব। বন সুরক্ষা কমিটি এ বার পাহাড়ে আসা শিকারিদের জন্য অভিনব একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। শিকারিরা এ বারে লক্ষ্যভেদ করবেন। কিন্তু কোনও প্রাণীর উপরে নয়। জড় বস্তুর উপরে। উৎসবের শ্রেষ্ঠ শিকারির হাতে ‘অযোধ্যা-বীর’ সম্মান তুলে দেবেন স্বয়ং পুলিশ সুপার।
শিকার উৎসব আদিবাসীদের ঐতিহ্য। উৎসবে যাতে বনের প্রাণীদের হত্যা না করা হয়, সে জন্য প্রতি বছর প্রশাসন এবং বনদফতরের তরফে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু ঐতিহ্যের প্রশ্নে সেই আবেদন শিকারীদের কাছে গুরুত্ব পায় না। লুকিয়ে চুরিয়ে প্রাণীহত্যা চলেই। ঐতিহ্য রক্ষার আচার যে বাস্তবের প্রয়োজনের থেকে আলাদা, তা নিয়ে মুখে তত্ত্বকথা না আউরে কাজে করে দেখাতে উদ্যোগী হয়েছে বনদফতর এবং বন সুরক্ষা কমিটি।
বন দফতর এবং অযোধ্যা বন সুরক্ষা সমণ্বয় কমিটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে এই লক্ষ্যভেদ প্রতিযোগিতা। পুরুলিয়ার ডিএফও কুমার বিমল জানান, গোটা অযোধ্যা পাহাড়ে ২১টি বন সুরক্ষা কমিটি রয়েছে। তাঁরা নিজেরাই চাইছেন, উৎসবে প্রাণি হত্যা না হোক। ডিএফও-র দাবি, কমিটিগুলির তরফে তিরন্দাজি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার প্রস্তাব বনদফতরের কাছে আসে। ঠিক হয়েছে, একক এবং দলগত— দু’টি বিভাগে প্রতিযোগিতা হবে। বনসুরক্ষা সমন্বয় কমিটির সভাপতি সাহেবরাম মুর্মু জানান, শিকার উৎসবে যোগ দেওয়া আদিবাসীদের কাছে গর্বের। কিন্তু শিকারে লক্ষ্যভেদটাই আসল। তাতেই বীরত্বের পরিচয়। প্রাণি হত্যা না করেও তাই বীরের শিরোপা পাওয়া যেতে পারে।
উৎসব কমিটির সংযোজক সমীর বসু বলেন, ‘‘উৎসবের নাম দেওয়া হয়েছে বাইশাখ কুনামি মাহামানাও। এর মানে হল, বৈশাখী পূর্ণিমা উৎসব। আদিবাসী সংস্কৃতির মেনে সমস্ত আয়োজন করা হয়েছে।’’ ডিএফও জানান, শনিবার সকাল থেকেই পাহাড়ে সমস্ত আয়োজন করা থাকছে। পাহাড়ে ওঠার রাস্তাগুলিতে ঘাটবেড়া, উরমা, পারডি, অযোধ্যা মোড়, কালিমাটি মোড়, খামার, শিরকাবাদ-সহ বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় গ্রামগুলির বাসিন্দারা দাঁড়িয়ে থাকবেন। উৎসবে যোগ দিতে যাঁরা আসবেন তাঁদের এই প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহ দেবেন তাঁরাও। আর প্রতিযোগিতার শেষে উৎসবের মঞ্চ থেকে ‘অযোধ্যা বীর’-এর হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার।
বিগত কয়েক বছর ধরে অযোধ্যা খেরওয়াল মাহাল মার্শাল মাডওয়া নামে একটি সংগঠনও পাহাড়ে শিকার উৎসবের আয়োজন করে করে আসছে। ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে কলেন্দ্রনাথ মান্ডি বলেন, ‘‘আমরাও বন্যপ্রাণ হত্যার বিরুদ্ধে। প্রতি বছরই পাহাড়ে আসা মানুষ জনকে এই কথাই বলি। এ বারও সেই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে।’’