এ বার ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু বনকর্তার

বাসা বদলানো কি কম ঝক্কি! কাজের ফাঁকে সেটাই দু’জনে সামলাচ্ছিলেন ওঁরা। নিজের হাতে ঘরের টুকিটাকি গোছাচ্ছিলেন স্ত্রী। অতিথি নিবাসে থেকেই চলছিল তদারকি। ঠিক ছিল, ভাড়া বাড়ি ছেড়ে আজ, বুধবার সকালে কোয়ার্টারে ঢুকবেন। কিন্তু, আবারও একটি দুর্ঘটনা এবং তার জেরে অকালমৃত্যুতে তছনছ হয়ে গেল সেই ঘর বাঁধার স্বপ্ন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ০১:৩৪
Share:

এই গাড়িতেই ছিলেন এডিএফও ওয়াসিম আলি। —নিজস্ব চিত্র।

বাসা বদলানো কি কম ঝক্কি! কাজের ফাঁকে সেটাই দু’জনে সামলাচ্ছিলেন ওঁরা। নিজের হাতে ঘরের টুকিটাকি গোছাচ্ছিলেন স্ত্রী। অতিথি নিবাসে থেকেই চলছিল তদারকি। ঠিক ছিল, ভাড়া বাড়ি ছেড়ে আজ, বুধবার সকালে কোয়ার্টারে ঢুকবেন। কিন্তু, আবারও একটি দুর্ঘটনা এবং তার জেরে অকালমৃত্যুতে তছনছ হয়ে গেল সেই ঘর বাঁধার স্বপ্ন!

Advertisement

সোমবার নম্বরপ্লেট বিহীন বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের মহিলা সুরক্ষা আধিকারিক সুমা ঘোষের। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই, মঙ্গলবার বিভাগীয় কাজে বের হয়ে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল পুরুলিয়ার কংসাবতী (উত্তর) বিভাগের এডিএফও ওয়াসিম আলির (৩৬)। পরপর জোড়া মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ জেলা প্রশাসনের কর্তারা।

এ দিন দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে হুড়া থানা এলাকার ভুঁইয়াডি গ্রামের অদূরে। গুরুতর আহত হয়ে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি গাড়ি চালক পিন্টু বাউরি। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওয়াসিম মাস পাঁচেক আগে প্রমোশন নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি রেঞ্জ থেকে পুরুলিয়ায় এডিএফও হিসেবে যোগ দেন। এ দিন বিকেলে দফতরের গাড়িতে হুড়ায় যাচ্ছিলেন।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাড়ে চারটে নাগাদ উল্টো দিক থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে বনকর্তার গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। সজোরে ধাক্কার অভিঘাতে ট্রাকের সামনের অংশের সঙ্গে বনকর্তার গাড়ি আটকে যায়। ক্রেন এনে লরি সরিয়ে বনকর্তাকে বের করে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনকর্তার গাড়ির সামনে একটি ট্রাক যাচ্ছিল হুড়ার দিকেই। ওই গাড়িটি ওভারটেক করতে গিয়েই এডিএফও-র গাড়ি উল্টোদিক থেকে আসা ট্রাকের মুখোমুখি পড়ে যায়। যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেই জায়গাটি তুলনামূলক ভাবে সরু। রাস্তার পাশে একটি খালও রয়েছে।

কংসাবতী (উত্তর) বন বিভাগের ডিএফও সোমা দাস জানান, অফিস ক্যাম্পাসে আজ, বুধবারই ওয়াসিমের কোয়ার্টারে ঢোকার কথা ছিল। কোয়ার্টার সাফসুতরো, রং করানোর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। কোয়ার্টারের সংস্কার কাজ চলায় তাঁর স্ত্রী মাসুমা বেগম পুরুলিয়ায় দফতরের অতিথি নিবাসে ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর সহকর্মীরাই স্ত্রী-র কাছে পৌঁছে দেন। তাঁদের সঙ্গেই তিনি হাসপাতালে স্বামীকে দেখতে আসেন। তবে স্বামীর যে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে, সে খবর তাঁকে জানানো হয়নি।

গাড়ি থেকে নেমে স্বামীর খোঁজ নিতে নিতে হাসপাতালে ঢোকেন মাসুমা। এক সহকর্মীর কথায়, ‘‘সকলের মুখ গম্ভীর দেখে ওনারও মুখ থমথমে হয়ে গিয়েছিল। স্বামীর দেহ শোয়ানো দেখে ভেঙে পড়েন।’’ নিজের মোবাইল থেকে বহরমপুরের বাড়িতে ফোন করে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তির উদ্দেশে বলেন, ‘‘ভাইয়া সব শেষ হয়ে গেল...!’’ এরপরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ডিএফও সোমাদেবী বলেন, ‘‘ওকে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’’ সোমাদেবীর উদ্দেশে মাসুমাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘নিজের হাতে কোয়ার্টার সাজালাম। এ বার কি করে ওখানে ঢুকব বলুন তো?’’

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান কংসাবতী (দক্ষিণ) বন বিভাগের ডিএফও উৎপল নাগ ও এডিএফও সমীর মজুমদার। সমীরবাবু বলেন, ‘‘যাওয়ার আমার সঙ্গে দেখা হল। ওর সঙ্গে যে আর কোনও দিনই দেখা হবে না ভাবতে পারছি না।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ঘাতক ট্রাকের চালক ও খালাসি পলাতক। তবে সোমবার যে গাড়ির ধাক্কায় সুমাদেবীর মৃত্যু হয়েছিল সেই গাড়ির চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন