পরিযায়ীরা অতিথি, বোঝালেন বনকর্তারা

দিন কয়েক আগে সিউড়ির তিলপাড়া ব্যারাজ সংলগ্ন এলাকার বেশ কয়েক’টি গ্রামের মানুষের কাছে এমনই বার্তা দিয়েছিলেন জেলা বনকর্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৩
Share:

শিক্ষা: নীলনির্জন সংলগ্ন এলাকায় এ ভাবেই চলল প্রচার। বুধবার। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

তিলপাড়ার পরে বন দফতরের লক্ষ্য এ বার বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাশয় ‘নীলনির্জন’ ঘেঁষা লোকালয়। উদ্দেশ্য অতিথি পরিযায়ী পাখিদের বাঁচাতে প্রয়োজনীয় বার্তা দেওয়া।

Advertisement

দিন কয়েক আগে সিউড়ির তিলপাড়া ব্যারাজ সংলগ্ন এলাকার বেশ কয়েক’টি গ্রামের মানুষের কাছে এমনই বার্তা দিয়েছিলেন জেলা বনকর্তারা। নীলনির্জনের আশেপাশে স্থানীয় মানুষ, মৎস্যজীবী, বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের নিয়ে জলাধার লাগোয়া মণিরামপুর মৌজায় বুধবার ফের একটি সচেতনতা শিবির করলেন বনকর্তারা।

উপস্থিত ভিড়ের উদ্দেশে বনকর্তারা বলেন, ‘‘বহু দূর থেকে উড়ে আসে পাখিগুলো। ওরা আমাদের অতিথি। ওদের বিরক্ত করবেন না। মাংসের লোভে পাখি শিকার করবেন না বা বেচবেন না। ওদেরও এই পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার আছে। কেউ পাখিদের অনিষ্ট করতে চাইছে, এমনটা জানলে দ্রুত বন দফতরকে খবর দিন।’’ এই কর্মসূচিতে ছিলেন এডিএফও বিজনকুমার নাথ, দুবরাজপুরের রেঞ্জার কাজল মণ্ডল সহ বন দফতরের একাধিক কর্তা।

Advertisement

কেন এই প্রচারের প্রয়োজন পড়ল?

শীতের শুরুতে সুদূর সাইবেরিয়া, মাঙ্গলিয়া, তিব্বত থেকে উড়ে এ রাজ্যের বিভিন্ন জলাশয়ে ভিড় করে পরিযায়ী পাখির দল। জেলার হাতেগোনা যে ক’টি জলাশয় পরিযায়ীদের প্রিয় ঠিকানা, সেই তালিকায় সবার উপরে রয়েছে বক্রেশ্বরের জলাধার নীলনির্জনে। এই সময় নানা চেনা অচেনা পাখির কলতানে মুখরিত হয় চারধার। পাখিপ্রেমীরা অতিথিদের খোঁজে ভিড় জমান জলাশয়গুলিতে। দেখা মেলে বড়ি হাঁস (বারহেডেড গুজ), ব্রাহ্মণী হাঁস (রুডি শেলডাক), খুন্তে হাঁস (সোভেলার) বা রাঙা মুড়ি হাঁস, কমন কুট, গ্রিব-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের।

শুধু কী পরিযায়ী— থাকে সরাল, বালিহাঁস, নানা জাতের পানকৌরি, জলপিপি, জলময়ূরের মতো প্রচুর বাংলার পাখিও। কিন্তু ঘটনা হল, বিগত কয়েক বছর ধরে গোটা জলাশয় জুড়ে পাতা মাছ ধরার ফাঁস জাল। আর মোটা টাকার জন্য ওঁত পেতে থাকা পাখি শিকারদের দাপটে পাখি আসা কমছিল। কয়েক বছর আগেও জেলার শান্ত বিস্তৃর্ণ ওই জলাধারটি ছিল পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সেই শান্তনির্জন জলাধারগুলিতে গত কয়েক বছর ধরে অত্যাচার শুরু হয়েছে। তাতে সেগুলি আর পাখিদের জন্য নিরাপদ নয়। এ বারও বেশ কিছু পাখি এসেছে, এখনও আসছে। এই শীতের অতিথি নিরীহ পাখিগুলোকে মেরে ফেলা বা অনিষ্ট করা যাতে না হয় তার জন্যই প্রচার, জানাচ্ছেন বনকর্তারা।

বনকর্তারা আরও জানাচ্ছেন, কেউ পাখিদের অনিষ্ট করছে কিনা সেটা জানতে, বাল্ক এসএমএসের (একটি বার্তায় অনেকের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া) আশ্রয়ও নেওয়া হচ্ছে। আগে হাতি আসার খবর চাউড় করতে এই পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হত। এখন পরিযায়ী পাখিদের সংরক্ষণের বিষেয় একই ভাবে প্রচার ভাবনা নেওয়া হয়েছে। বুধবার মণিরামপুর সচতনতা শিবির উপস্থিত লোকজন ও বনসুরক্ষা কমিটির সদস্যদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বন দফতর। অন্য দিকে, বনাধিকারিকদের নম্বরও দেওয়া হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। পরিযায়ী পাখিদের সংরক্ষণে জন সচেতনতা গড়ে তুলতে বিলি হয়েছে সচেতনতা বিষয়ক লিফলেট। পক্ষীপ্রেমীরা বন দফতরের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন