বালিঘাটে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সিউড়ি ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ শেখ কাজলের নামে এফআইআর দায়ের হল।
শুক্রবার রাতে ওই অভিযোগ দায়ের করেন লিজপ্রাপ্ত ঠিকাদার মদনমোহন মণ্ডল। তার পরেই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, জুয়েল শেখ, নইম চৌধুরী, জাফরউদ্দিন শাহ এবং সুরজ মির্ধা নামে ওই চার ধৃতের বাড়ি সিউড়ির কুকুডিহি গ্রামে। ধৃতদের বিরুদ্ধে বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, মারধর, অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখার মতো ধারা দিয়েছে পুলিশ। শনিবার সিউড়ি আদালতে হাজির করলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩ পাপিয়া খান ধৃতদের ছ’দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
শুক্রবার দুপুরে ময়ূরাক্ষী নদীর বালি বহনের রাস্তা ব্যবহার করাকে ঘিরে লিজ পাওয়া দুই ঠিকাদারের লোকেদের মধ্যে বিবাদ চরমে ওঠে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি, বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ এবং একে অপরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগে চরম উত্তপ্ত ছিল সিউড়ির দুর্গাপুর মোড়ের অদূরে পাঁচপাকুরিয়া গ্রাম সংলগ্ন ময়ূরাক্ষী নদীর ডোবরডা মৌজা। আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় চালা এবং পাঁচটি মোটরবাইক। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মদনমোহন মণ্ডল নামে ওই ঠিকাদার ময়ূরাক্ষী নদীর ওই মৌজায় লিজ নিয়ে বালি তুলছিলেন। অংশটি মহম্মদবাজার থানা এলাকায় হলেও বালি বহন হচ্ছিল সিউড়ি থানা এলাকা হয়ে। দিন কয়েক আগে নদীর অপর প্রান্তে (সিউড়ি থানা এলাকায় থাকা) একই মৌজার অন্য দাগ নম্বরে বালি তোলার বরাত পায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি সংস্থা। যাদের হয়ে শেখ কাজল নামে ওই তণমূল নেতাকে বালি তুলছেন বলে মদনমোহনবাবুর অভিযোগ। ওই দিন বালি বহনের রাস্তার দখল নিয়েই দুই ঠিকাদারের লোকেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। মদনমোহনবাবুর দাবি, তিনি আর্থিক চুক্তি করে ব্যক্তিগত জমিতে থাকা কিছু অংশে রাস্তা বানিয়ে বালি বহনের কাজ করছিলেন। ব্যক্তিগত ভাবে তৈরি করা সেই রাস্তা ব্যবহার করছিল কাজলের লোকেরা। তাতে মদনমোহনবাবু আপত্তি জানান। তার পরেই কাজলের দলবদল তাঁর লোকেদের উপর বোমা, বারুদ নিয়ে চড়াও হয় বলে মদনমোহনবাবুর অভিযোগ। রাতেই সিউড়ি থানায় কাজল-সহ তাঁর অনুগামী জামসুর মির্ধা, মানাই মির্ধার মতো ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মদনমোহনবাবু।
যদিও প্রথম থেকেই বালি কারবারের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই বলে দাবি করে আসছেন কাজল। লিখিত অভিযোগে তাঁর নাম প্রথমেই রয়েছে শুনে তিনি বলেন, ‘‘উনি কি প্রমাণ দিতে পারবেন, ঘটনার পিছনে আমি বা আমার লোকজন ছিল?’’ কাজলের পাল্টা অভিযোগ, মদনমোহনবাবুর লোকেরা অপর ঠিকাদারের লোকেদের বালি তোলায় বাধা দিয়েছিল। তা থেকেই ঝামেলা।
এ দিকে, বালি নিয়ে অশান্তি কাণ্ডে ধৃতদের নিরীহ বলে দাবি করেছেন ধৃতের পরিজনেরা। তাঁদের দাবি, প্রথম তিন জন টোটো চালক, শেষের জন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে কাজ করেন। তাঁরা কেউ-ই ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন বলে পরিজনদের দাবি। এমনকী, ধৃত এক জনকে নাবালক বলেও দাবি করেছেন তার পরিজন। বিচারক তার সাপেক্ষে কাল, সোমবার নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশের দাবি, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতেই ওই চার জনকে ধরা হয়েছে। বাকিদেরও ধরা হবে।