এখানেই: মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে পড়শিদের ভিড়। ছবি: শুভ্র মিত্র
গোষ্ঠী সংঘর্ষে প্রৌঢ় খুনের ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্ত এখনও পলাতক বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
সোমবার রাতে কোতুলপুর থানার খিরি গ্রামের খাঞ্জা পাড়ায় ধর্মীয় জলসায় দুই গোষ্ঠীর বিবাদকে কেন্দ্র করে মৃত্যু হয় মতিহার রহমান (৫২) নামে এক প্রৌঢ়ের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খাঞ্জা পাড়ায় বুড়ো পীরের বেশ কয়েক বিঘা জমি এবং পুকুরের অধিকার কোন গোষ্ঠীর হাতে থাকবে তা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিবাদ লেগে রয়েছে। কোতুলপুর থানা এর আগেও কয়েকবার সেই বিবাদের মীমাংসা করেছে। সোমবার রাতে পীরের থানের পাশে এক গোষ্ঠীর আয়োজন করা জলসায় অন্য গোষ্ঠীর লোকজন হামলা করে বলে অভিযোগ। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় খড়ের পালুইয়ে।
খবর পেয়ে সোমবার গভীর রাতে এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) লাল্টু হালদার ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তিনি বলেন, ‘‘রাতভর তল্লাশি চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় ব্যবহত শাবল ও বাঁশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও এলাকায় পুলিশ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।’’ ঘটনার পরে মৃতের স্ত্রী আনিশা বিবি ২২ জনের বিরুদ্ধে কোতুলপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা হলেন শেখ মনিরুল, শেখ আসরফ, হুসনেহারা বিবি ও জামেলা বিবি। হুসনেহারা মুল অভিযুক্ত আকবর মণ্ডলের স্ত্রী। আকবরের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার ধৃত চার জনকে বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের চোদ্দ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
কোতুলপুরের খিরি গ্রামে খুন হন মতিহার রহমান।
মঙ্গলবার খাঞ্জা পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, এলাকা সুনসান। টিউবলাইটের ভাঙা কাচ, ইট, পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পালুই থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ভেঙে পড়ে রয়েছে জলসার প্যান্ডেল। পীরের থানের পাশেই মতিহারের বাড়ি। সেখানে উপচে পড়েছে পড়শিদের ভিড়। মৃতের স্ত্রী আনিশা বিবি এবং মেয়েরা কেঁদে চলেছিলেন। আনিশা বলছিলেন, ‘‘বুড়ো মানুষটাকেও রেহাই দিল না। পিটিয়ে মেরে ফেলল একেবারে।’’
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা তথা গ্রাম ষোলোআনার সদস্য ইসলাম মণ্ডল জানান, পীরের জমির ফসল ও পুকুরের মাছ আকবর মণ্ডল ও তাঁর দলবল ভোগ করে আসছিল। মাস তিনেক আগে গ্রাম ষোলোআনা থেকে ঠিক করা হয়, ওই ফসল ও মাছে সবাই সমান ভাগ পাবে। তাঁর অভিযোগ, সেই সিদ্ধান্তের পর থেকেই গোলমাল পাকাতে শুরু করেন আকবর ও তাঁর লোকজন।
সোমবার জলসা নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত হলে কোতুলপুর থানায় আকবর, ইসলাম ও দুই গোষ্ঠীর আরও কয়েক জনকে বিকেলে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। সেইখানে আপাত ভাবে ঝামেলা মিটে যায়। গ্রামের বাসিন্দা শেখ সুকুর আলি, সাজাহান মণ্ডলরা বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় আমরা যখন থান সাজানোর তোড়জোড় করছি, তখনই আকবর মণ্ডল ও তাঁর দলবল ভাঙচুর শুরু করে। রড, বাঁশ, ছুরি, ভোজালি নিয়ে হামলা করে। ওদের বাধা দিতে গিয়ে আমাদের অনেকে জখম হন।’’ তাঁরা জানান, হামলায় গুরুতর জখম হন মতিহার। সাজাহান মণ্ডল, শেখ মোস্তাফা, আঙ্গুরা বেসম-সহ কয়েকজনও আহত হন। আরামবাগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় মতিহারের। বাকিরা কোতুলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পরে বর্তমানে ছাড়া পেয়েছেন।
এ দিন আকবর মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কেউ নেই। আশপাশের বাড়িও ফাঁকা। ফোনে আকবর মণ্ডল তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি বিকেল থেকে থানাতেই বসে ছিলাম। গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। নিজেরাই মারামারি করে আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। আজও ওরা পুকুরের মাছ ধরার তোড়জোড় করেছে। অথচ ওই মাছ আমিই চাষ করেছি।’’
কোতুলপুর পঞ্চায়েতের প্রধান লক্ষ্মণ ভাঙ্গী বলেন, ‘‘গ্রামের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। আইন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, আকবরের খোঁজে তল্লাশি চলছে।