মমতা বলায় মর্গ পরিষ্কার বাঁকুড়ায়

মর্গ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষবার বাঁকুড়া মর্গের জমে থাকা দেহ সৎকার করা হয়েছিল। তার পরে টানা দু’বছর আর সেই কাজ হয়নি। এই সময়ের মধ্যে পুলিশের তরফে ১৬৩টি ও বাঁকুড়া মেডিক্যালের তরফে প্রায় দেড় হাজার দেহ জমা হয় মর্গে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০২:৪২
Share:

এ ভাবেই মর্গে পড়ে ছিল বেওয়ারিশ দেহ। নিজস্ব চিত্র

দু’বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল বাঁকুড়া মর্গে পড়ে থাকা প্রায় হাজার খানেক দেহের। বাঁকুড়া পুরসভা উদ্যোগে ও পুলিশের সহযোগিতায় গোবিন্দনগর সংলগ্ন যমুনাজোড়ে গণ চিতা বানিয়ে দু’দফায় দেহগুলি দাহ করা হয়েছে।

Advertisement

বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সৎকারের কাজ শুরু হয়। ওই রাতেই অর্ধেক দেহ দাহ করে দেওয়া হয়েছিল। বাকিগুলি দাহ করা হয় শুক্রবার রাতে। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, তা ভেবে রাতে দাহ কাজ সারা হয়েছে। সুষ্ঠু ভাবেই সব মিটেছে। মর্গ পরিষ্কার করে দূষণমুক্ত করার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।”

মর্গ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষবার বাঁকুড়া মর্গের জমে থাকা দেহ সৎকার করা হয়েছিল। তার পরে টানা দু’বছর আর সেই কাজ হয়নি। এই সময়ের মধ্যে পুলিশের তরফে ১৬৩টি ও বাঁকুড়া মেডিক্যালের তরফে প্রায় দেড় হাজার দেহ জমা হয় মর্গে। হাসপাতালের দেহগুলির মধ্যে বেশির ভাগই সদ্যোজাত শিশুদের বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

মর্গের কর্মীরা জানাচ্ছেন, হাসপাতালে সদ্যোজাতের মৃত্যু হলে অনেক ক্ষেত্রেই বাড়ির লোকজন দেহ নিয়ে যান না। হাসপাতালে ভর্তি অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির মৃত্যু হলেও দেহ মর্গেই ফেলে রাখা হয়। অন্য দিকে, জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় প্রায়ই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের পরে তা-ও জমে মর্গেই।

এ ছাড়াও মর্গে এমন কিছু দেহও জমে থাকে, যাঁদের পরিচয় জানা গেলেও পরিজনদের খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। অনেক পরিবার আবার দেহ নিতে অস্বীকার করে। পুলিশের উদ্ধার করা প্রায় ১৪টি দেহ সে ভাবেই গত দু’বছর ধরে পড়ে ছিল মর্গে। এক পুলিশ কর্মী জানান, তার মধ্যে কয়েক জন ভবঘুরের দেহ রয়েছে। এলাকা থেকে তাদের পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হওয়া ৯টি সময়ের আগে জন্মানো (প্রিম্যাচিওর্ড) শিশুর দেহও পড়ে ছিল এত দিন।

মর্গের কর্মীরা জানাচ্ছেন, এত দেহ রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক সময় মর্গের বারান্দাতেও দেহ ফেলে রাখতে হতো। কাজ করতে গিয়ে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতেন মর্গের কর্মীরা। দাহ করার দায়িত্ব কার, তা নিয়ে মাসের পর মাস জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বাঁকুড়া মেডিক্যালের মধ্যে টানা পোড়েন চলছে। কাজের কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপা প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি বলেন। পুরসভাকে এক মাসের মধ্যে সৎকারের কাজ সেরে মর্গ পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসকের নেতৃত্বে কমিটিও গড়ে দিয়ে যান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজটি শেষ করেছে পুরসভা।

সময় মতো গোটা কাজটি মিটে যাওয়ায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন মর্গের কর্মীরাও। শনিবার গিয়ে দেখা গেল মর্গে দেহ জড়ো করে রাখার ঘরটিতে সাফাই কাজ চলছে। দীর্ঘ দিন পরে ঘরটি খোলা হওয়ায় দুর্গন্ধে সেখানে শ্বাস নেওয়াই দায় হয়ে উঠেছিল। অবশ্য মর্গের এক কর্মী বলছেন, “গত কয়েক দিনের চেয়ে এখন দুর্গন্ধ অনেকটাই কমে গিয়েছে। সঠিক ভাবে ঘরটি পরিষ্কার করা হলে এই দুর্গন্ধও কেটে যাওয়ার কথা।”

এত দিন কী ভাবে এখানে কাজ করতেন?

মর্গের এক ডোম বলেন, “পেটের দায়! এরই মধ্যে বছেরের পর বছর সারা দিন থেকেছি।’’ মর্গের আরেক অস্থায়ী কর্মীর বক্তব্য, “এখানে কিছুক্ষণ থাকলেই গায়ে এমন দুর্গন্ধ হয়ে যায় যে কেউ কাছে ঘেঁষে না।’’ খরচের বিষয়টিও সমস্যা হয়ে উঠেছিল। ডোমরা জানাচ্ছেন, বেওয়ারিশ লাশ সৎকার করার জন্য ৫০ টাকাও পাওয়া যায় না। ফলে কেউ এগিয়ে আসেননি।

দু’বছর পরে যেন শাপমুক্তি হল বলে তাঁদের মনে হচ্ছে। তবে এ বার নিয়মিত মর্গের দেহ দাহ করার কাজ চলবে না একই পরিস্থিতি আবার তৈরি হবে সেই প্রশ্নও হাওয়ায় ভাসছে। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) নবকুমার বর্মন বলেন, “প্রতি মাসেই মর্গে জমা দেহ দাহ করা হবে। প্রশাসনিক বৈঠকে রুটিন মেনে এই কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরসভাকে।’’

আবার পুরপ্রধান বলছেন, “বৈঠকে মৌখিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রশাসন চূড়ান্ত কিছু আমাদের জানায়নি।’’ প্রশাসন দায়িত্ব দিলে পুরসভা ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন