Namukra

বালিকাকে পিষে দিল বালি-বোঝাই ট্রাক্টর

শনিবার দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ এই দুর্ঘটনার পরে, উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাঁকুড়ার জয়পুরের রুইশহর গ্রাম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়পুর শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২০ ০০:০৭
Share:

বিপর্যয়: বাঁকুড়ার জয়পুরের রুইশহর গ্রামে দুর্ঘটনার পরে জলাশয়ে পড়েছে ট্রাক্টর। নিজস্ব চিত্র

মায়ের সঙ্গে আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছিল তিন বছরের অঙ্কিতা। গ্রামের রাস্তার ধারে বাড়ি। উল্টো দিকে পুকুর। সেই পুকুরে হাত-পা ধুতে নেমেছিল দু’জনে। মা তখনও পা ধুচ্ছেন। রাস্তাটুকু পার হয়ে ফিরে যাচ্ছিল মেয়ে। চোখের পলকে তাকে পিষে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জলে পড়ে গেল বালি-বোঝাই ট্রাক্টর।

Advertisement

শনিবার দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ এই দুর্ঘটনার পরে, উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাঁকুড়ার জয়পুরের রুইশহর গ্রাম। দেহ ফেলে রেখে প্রায় দু’ঘণ্টা চলে অবরোধ। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী বলেন, “পথ দুর্ঘটনায় জয়পুরে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ট্রাক্টর চালক পলাতক। ময়না-তদন্তের জন্য দেহটি বিষ্ণুপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।’’

রুইশহর গ্রামের থেকে কিছুটা দূরেই দ্বারকেশ্বরের চাঁপাতলা খাদান। সেখান থেকে বালি নিয়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে চ্যাংডোবা হাইস্কুল পার হয়ে ২ নম্বর রাজ্য সড়কে ওঠে ট্রাক্টর। সরু গ্রামের রাস্তা। ট্রাক ঢোকার জো নেই। দু’দিকে বেশ কিছু পুকুর রয়েছে। তার উপরে রাস্তায় রয়েছে পর পর অনেকগুলি বাঁক। মোটরসাইকেল নিয়ে যাতায়াত করার সময়েও সতর্ক হয়ে থাকতে হয়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এমন রাস্তায় ‘বেপরোয়া’ বালির ট্রাক্টরের উৎপাতে তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে রয়েছেন।

Advertisement

অঙ্কিতার বাড়ি তালড্যাংরার বিবড়দায়। শনিবার দুর্ঘটনার আধ ঘণ্টা আগেই সে মায়ের সঙ্গে রুইশহরে এসেছিল বলে জানাচ্ছেন আত্মীয় নারায়ণ পাল। দুর্ঘটনার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকা। খবর পেয়ে চলে অঙ্কিতার বাবা জগন্নাথ কুম্ভকার। তিনি বলেন, ‘‘যে রাস্তা দিয়ে মানুষই ঠিক ভাবে চলাচল করতে পারে না, সেখান দিয়ে এ ভাবে বালির ট্রাক্টর ছুটছে। আর প্রশাসন চোখ বন্ধ করে রয়েছে।’’ কিছু ক্ষণের মধ্যেই হাজির হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেন, এলাকা দিয়ে কোনও বালির গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না। না হলে টানা পথ অবরোধের হুমকিও দেওয়া হয়। রাস্তায় কেন কোনও ‘হাম্প’ নেই, উঠছে সেই প্রশ্নও।

চাঁপাতলার মতোই দ্বারকেশ্বরের দক্ষিণে জয়পুর ও পাত্রসায়র ব্লক এলাকায় বেশ কিছু বালিখাদান রয়েছে। সেখান থেকে রাজ্য সড়ক প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে। অতটা পথ বালি-বোঝাই ট্রাক বা ট্রাক্টর ছোট গ্রামের রাস্তা দিয়ে। কোনও রাস্তাই বিশেষ চওড়া নয়। ২২ ফেব্রুয়ারি জুজুড়ের একটি খাদান থেকে বালি নিয়ে যাওয়ার সময়ে জুজুড়ের বাউড়িপাড়ায় এক যুবককে পিষে মারে একটি ট্রাক। দুর্ঘটনার পরে দু’টি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল উত্তেজিত জনতা। এ দিনের ঘটনা দু’টি ব্লকের অনেক গ্রামীণ পথে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) বলেন, ‘‘এলাকার মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে এই ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন