স্কুলে রূপকথা চন্দ। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যে সদ্য প্রকাশিত মাধ্যমিকের ফলাফলে, মেধা তালিকায় প্রথম দশটি স্থানের মধ্যে বীরভূমের সাত ছাত্রছাত্রী জায়গা দখল করেছে। মেধা তালিকায় রাজ্যের প্রথম বাঁকুড়া জেলার পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বীরভূম। শুধু তাই নয়, জেলার ফলাফলে ছেলেদের থেকে বেশ এগিয়ে মেয়েরা। সে পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রেই হোক, অথবা ফলাফলের নিরিখে। আবার এই জেলার ছাত্রীদের মধ্যে সেরা হয়েছে মেধা তালিকার যুগ্ম অষ্টম স্থান দখলকারী, শান্তিনিকেতন নবনালন্দা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী রূপকথা চন্দ।
ছাত্রীর এমন সফলতায় স্বাভাবিক ভাবে খুশি তার বিদ্যালয় এবং সহপাঠীরা।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গৌরগোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পড়াশোনায় বরাবর ভাল রূপকথা, পঞ্চম শ্রেণি থেকে ক্লাসে বরাবর অদ্বিতীয় থেকেছে। ছাত্রীর সফলতায় আমরা খুব খুশি।” জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় ফল যে ভাল হবে, তা আগেই নিশ্চিত ছিল পরিবার। কিন্তু রাজ্যের প্রথম দশম স্থানাধীকারীদের মধ্যে নাম থাকবে, তা ভাবতে পারেনি রুপকথার পরিবার। বাবা তথা রাজ্যের কৃষি দফতরের বর্ধমান ও বীরভূমের সহ-অধিকর্তা জয়ন্ত প্রসাদ চন্দ বলেন, ‘‘পরীক্ষার পরে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল। মেয়ে নিশ্চয় প্রথম দশটি স্থানের মধ্যে নাম রাখবে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি আমরা কিন্তু এতটা আশা করিনি। আমি কখনও সখনও পড়া দেখিয়ে দিতাম।’’
জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘ছোট বেলা থেকেই বাংলায় একটু আনমনা। স্থানীয় বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষিকা হওয়ার কারণে আমার স্ত্রী মানসী ওকে বাংলা বিষয়টা দেখিয়ে দিত।’’ তবে তাঁদের ছাত্রী অবশ্য আরও কয়েকটা নম্বর পাবে— এমন আশা করছিল বলে জানান ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক গৌতম সাহা ও শ্রীমন্ত চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের দাবি, ‘‘বাংলা বিষয়ে আর কয়েকটা নম্বার পেলেই, মেধা তালিকার অনেকটা শীর্ষে নাম তুলত আমাদের ছাত্রী।’’
বোলপুর পুরসভার ছ’ নম্বর ওয়ার্ডের উদয়ন পল্লির বাসিন্দা রূপকথা জানায়, ‘‘বাংলাতে আরও কয়েকটা নম্বর এলেই পারত। মা’ ত দেখিয়ে দিয়ে ছিলেনই। বাংলা বিষয় নিয়ে ঘরে ও স্কুলে এমনটা হচ্ছে দেখে, অন্য বিষয়ের থেকে আমিও একটু বেশি করে নজর দিয়েছিলাম। কিন্তু কি আর করব!’’
উল্লেখ্য, মাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলা থেকে এ বার মোট পরীক্ষার্থী ৪২,৫৬৯ জন। তাদের মধ্যে ৩৩,৩৮৯ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। জেলায় পাশের হার ৭৮.২ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৮,৩২৬ ছাত্রের মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্রদের সংখ্যা ১৩,২৩৬ এবং ২৪,২৪৩ ছাত্রীদের মধ্যে উত্তীর্ণ ছাত্রীদের সংখ্যা ২০,০৫৩। জেলার সার্বিক মাধ্যমিক ফলাফলে ছাত্রীদের সফলতার হার বেশির পিছনে, পড়ুয়াদের জন্য রাজ্য সরকারের চালু করা বিভিন্ন প্রকল্পের অবদানের দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা মিশন।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার রাজ্য প্রতিনিধি প্রলয় নায়েকের দাবি, ‘‘কন্যাশ্রী, সবুজসাথি-সহ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাত্রীদের জন্য চালু করা বিভিন্ন বৃত্তি এবং প্রকল্প অন্যতম একটি কারণ। আর তাই পরীক্ষার্থী যেমন ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা বেশি, তেমনই ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাশের হারও জেলায় লক্ষণীয়। জেলায় ছাত্রীরা এগিয়ে।’’