ধরমপুজোয় পাশাপাশি ‘মোদী-মমতা’

আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় ধরমপুজো আর সেই উপলক্ষে সঙয়ে মাতল সিউ়ড়ি। রথ আর উল্টো রথের পরে পাওনা একবেলার এই মেলা। সিউড়ির এই সঙ-সংস্কৃতি আড়াইশো বছরেরও বেশি পুরনো বলে মত স্থানীয় ইতিহাস সংগ্রাহক সুকুমার সিংহয়ের।

Advertisement

তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ১৪:০৩
Share:

শোভাযাত্রা: ধরমপুজো উপলক্ষে সিউড়ির মালিপাড়ায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

এক চিলতে রাস্তা রঙিন হল রবিবার বিকেলে। সিউড়ির মালিপাড়ার রাস্তা ছেয়ে গেল মাটির পুতুল, তেলেভাজার দোকান, বেলুন, ফুচকা-চাটের মতো দোকানের সারিতে।

Advertisement

আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় ধরমপুজো আর সেই উপলক্ষে সঙয়ে মাতল সিউ়ড়ি। রথ আর উল্টো রথের পরে পাওনা একবেলার এই মেলা। সিউড়ির এই সঙ-সংস্কৃতি আড়াইশো বছরেরও বেশি পুরনো বলে মত স্থানীয় ইতিহাস সংগ্রাহক সুকুমার সিংহয়ের। তাঁর কথায়, ‘‘সিউড়ি তখন গ্রাম। সেই সময় ফুল, মালা, ঠাকুরের শোলার সাজ জোগান দিতেন মালাকার সম্প্রদায়ের মানুষ। এলাকার নাম তা থেকেই মালিপাড়া। প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ বা অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের কাছে ধরমরাজ, মনসা এই সব পুজো বেশি প্রাধান্য পেত। সেই হিসেবে এই পুজোকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষের মেতে ওঠা স্বাভাবিক।’’

লোক গবেষক আদিত্য মুখ্যোপাধ্যায় জানান, ধর্মরাজ হলেন রাঢ়বঙ্গের জাতীয় দেবতা। সেই উপলক্ষে সিউড়িতে সঙ এখনও চালু আছে। এই জেলায় আগে তাঁতিপাড়ায় সঙ ছিল বিখ্যাত। তা এখন বন্ধ। তবে বিষয়পুরে বুদ্ধ পূর্ণিমায় ধরম পুজোর শোভাযাত্রায় বহুরূপীর দল থাকে। গুরু পূর্ণিমায় এই সঙ জেলার আর কোথাও হয় না। মূলত পৌরাণিক দেবদেবী, রাজারানী আর সমসাময়িক বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রার এক চলমান প্রদর্শনী থাকে এই সঙের শোভাযাত্রায়। মূল উদ্যোক্তা গৌতম মালাকার জানান, আগে গরুর গাড়ির উপর মাটির তৈরি বড় বড় হাতি ঘোড়ায় ঐতিহাসিক চরিত্র ছিল মূল আকর্ষণ। তখন কালীপদ মালাকার, রজনীকান্ত মালাকারদের চেষ্টায় সঙ অন্য রূপ পেত। ততটা না হলেও আজও চলছে সেই ঐতিহ্য। গরুর গাড়ির জায়গা নিয়েছে রিকশা, টোটো। ছোট বড় মিলিয়ে এ বছর ত্রিশটিরও বেশি বিষয় রয়েছে। বিশ্ব জয়ী কন্যাশ্রী, নোট বাতিলের মতো কিছু সাম্প্রতিক কালের ঘটনা এ বারের মুখ্য আকর্ষণ।

Advertisement

প্রচারের খরচ ওঠে এলাকার মানুষের দানে। স্থানীয় ১৩ পল্লি ক্লাবঘরে দেখা গেল কচিকাচাদের ভিড়। মোদীর পাশে মমতা, লকেট দাঁড়িয়ে আছে রূপটানের অপেক্ষায়। রাজনগর থেকে আসা হরিদাস সাহা ব্যস্ত হাতে মেকাপ দিচ্ছেন গত ৩৫ বছর ধরে। গৃহবধূ দেবশ্রী দে বলেন, “ছোটবেলায় আমরা সাজতাম। এখন ছেলে দেবাঙ্গ সাজে।” ক্লাস ফাইভের মেয়ে শর্মিলা মালাকার সেজেছে মমতা। মোদীর সাজে দুই শিশু। বাদ যাননি লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। বাজনার পরে সার বেঁধে সঙ, ঢাকের দল, বহুরূপী। সব শেষে দেয়াসীর দল। তার মাঝে আবার এক দল রাক্ষস, জোকার, কঙ্কাল সেজে ছোটরা ছুটে যাচ্ছে রাস্তার ধারের দর্শকদের আনন্দ দিতে। সব মিলিয়ে একটা রঙের মিছিল মালি পাড়া, বারুইপাড়া, ইন্দিরা চক এলাকা ঘুরে আবার ফিরে আসে ধর্মরাজের মন্দিরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন