নিচুতলার দাবিতেই সিলমোহর

লক্ষ্য ছিল ‘একের বিরুদ্ধে এক’-এর লড়াই। সেই মসৃন বোঝাপড়ার পথে বীরভূমে জটে পেকেছিল তিনটি আসনে— সাঁইথিয়া, হাঁসন ও রামপুরহাট। ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ শেষ পর্যন্ত সাঁইথিয়া গেল সিপিএমেরই হাতে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০২:২৫
Share:

তখনও জট কাটেনি। দেওয়ালে লেখা শুরু হয়েছিল ‘বাম সমর্থিত’ কংগ্রেস প্রার্থীর নাম। নিজস্ব চিত্র।

লক্ষ্য ছিল ‘একের বিরুদ্ধে এক’-এর লড়াই। সেই মসৃন বোঝাপড়ার পথে বীরভূমে জটে পেকেছিল তিনটি আসনে— সাঁইথিয়া, হাঁসন ও রামপুরহাট। ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ শেষ পর্যন্ত সাঁইথিয়া গেল সিপিএমেরই হাতে। দু’দলেরই নিচুতলার কর্মীদের পর্যবেক্ষণ, পড়ে থাকা দুই কেন্দ্র সম্ভাবত এগোচ্ছে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’য়ের দিকেই। দুই শিবিরের নেতারাই অবশ্য বলছেন, একের বিরুদ্ধে একের লড়াই করাতে পারলে তারা খুশি হবে।

Advertisement

সিপিএম সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিন থেকে রাজ্য নেতৃত্ব বীরভূম জেলা নেতৃত্বকে ফোন করে জানান, সাঁইথিয়ায় জোট-প্রার্থী সিপিএমের ধীরেন বাগদি। দলীয় কর্মীদের প্রচার শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়। এই মর্মে বার্তা এসে পৌঁছতেই এলাকার খবর ছড়াতেই মহম্মদবাজারে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে শুরু হয় মিষ্টিমুখের পালা। এক কর্মীর কথায়, ‘‘জোটের প্রার্থী হওয়াও আমাদের কাছে এক রকমের জয়। পরের জয়ের অপেক্ষা ১৯ তারিখ পর্যন্ত।’’

আগে মহম্মদবাজার বিধানসভার অন্তর্গত ছিল সাঁইথিয়া। গত বিধানসভা ভোটের আগে মহম্মদবাজার বিধানসভা লোপ পায়। নতুন কেন্দ্র হয় সাঁইথিয়া। আগের বিধানসভায় কয়েক’টি এলাকা এ দিক ও দিক হলেও সাঁইথিয়া পুরসভা-সহ অধিকাংশ অঞ্চল রয়ে যায় সাঁইথিয়া বিধানসভায়। তথ্য বলছে, ১৯৫৭ সাল থেকে মহম্মদবাজার বিধানসভায় বামপন্থীরা জিতে আসছেন। হার বলতে ১৯৭২ সালে একবার। ধীরেন বাগদি নিজেও দু’বারের বিধায়ক। তাই কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া শুরুর আগেই এক রকম প্রচার শুরু করে দিয়েছিল বামেরা। মাঝে কংগ্রেস আসনটির দাবি জানানোয় প্রচারে কিছুটা ভাটা পড়ে। তারপর গত ১০ তারিখ বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে ধীরেন বাগদির নাম ঘোষণা করা হয়।

Advertisement

আঙ্গারগড়িয়ায় দলীয় কার্যালয়ে নিজে হাতে দেওয়াল লিখে প্রচার শুরু করেছিলেন ধীরেনবাবু। প্রচারে নামেন কর্মীরাও। তার ন’দিনের মাথায় গত শনিবার এই কেন্দ্রে জোটের প্রার্থী হিসাবে ফের কংগ্রেসের নাম উঠে আসে। প্রার্থী হিসাবে মদন ঢুলির নাম ঘোষণা করা হয়। এতে সিপিএমের নীচুতলার কর্মীদের মনোবল ভেঙে যায়। তাঁদের যুক্তি ছিল, গত লোকসভা ভোটের ফলের ভিত্তিতেও কংগ্রেসের থেকে বহু এগিয়ে সিপিএম। সিপিএম-এর প্রাপ্ত ভোট যেখানে ৫১,৭৫৮ সেখানে কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ৫,৭৯০টি ভোট। শুধু ভোটের ফলেই নয়, সাঁইথিয়ায় এই মুহূর্তে সাংগঠনিক ভাবেও অনেক পিছিয়ে কংগ্রেস। বিধানসভা কেন্দ্রের ১৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪টি পঞ্চায়েতই এবং সাঁইথিয়া পুরসভা বর্তমানে তৃণমূলের দখলে। সেখানে বাকি চারটি (মহম্মদবাজারের ভূতুড়া, আঙ্গারগড়িয়া, পুরাতন গ্রাম ও দেউচা) পঞ্চায়েত রয়েছে সিপিএম-এর দখলে।

এই পরিস্থিতিতে সাঁইথিয়া কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে দেওয়ায় শুধু বাম কর্মীরাই নন, বিস্মিত হন এলাকার কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের অনেকেও। সাঁইথিয়া নিয়ে জেলা নেতৃত্বের ‘গাছাড়া’ মনোভাব প্রথম দিন থেকেই ক্ষুব্ধ করেছিল এলাকার সিপিএম নেতৃত্বকে। এ দিন ধীরেনবাবুর নাম ঘোষণা হতেই আনন্দে মাতেন এই কেন্দ্রের বাম সমর্থকেরা। আর সিপিএমের মহম্মদবাজার জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রভাসবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটাই হওয়ার ছিল।’’ ধীরেনবাবু বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট প্রচার বন্ধ করেনি। জোট প্রার্থীর হয়ে প্রচার চলছিলই। এ দিন নাম ঘোষণা হতে ফের প্রচার শুরু করা হল।’’ জেতার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। সাঁইথিয়ার প্রার্থী মদন ঢুলি বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পত্র তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নেতৃত্ব বললে পরে সিদ্ধান্ত নেব।’’

কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মতো ওই আসনটি বামফ্রন্টকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সাঁইথিয়ায় কংগ্রেস প্রার্থী দিচ্ছে না।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোমও বলেন, ‘‘সাঁইথিয়া নিয়ে জটিলতার অবসান হয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব বামফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করে আসনটি এ দিন সিপিএমকে ছেড়ে দেয়।’’ ধীরেনবাবু শনিবার মনোনয়ন পত্র দাখিল করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কিন্তু, কী হবে হাঁসন ও রামপুরহাটে?

হাঁসন কেন্দ্র ইতিমধ্যেই প্রার্থী দিয়েছে বামেরা। শরিক দল আরসিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক কামাল হাসান এখানে ঘোষিত প্রার্থী। সেই আসনেই আবার কংগ্রেসের প্রার্থী রয়েছেন মিলটন রশিদ। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা মিলটন এই মুহূর্তে আইএটিইউসি-র জেলা সভাপতি ও দক্ষ সংগঠক। প্রথম থেকেই বামদের কাছে এই আসনটির জন্য দরবার করেছে কংগ্রেস। কিন্তু সংগঠন থাকায় বামেরা শরিক আরসিপিআইয়ের দাবি ফেলতে পারেনি।

রামপুরহাটে বামেদের অপর শরিক দল ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী মহম্মদ হান্নান। এলাকায় তাদের শক্ত জমি রয়েছে দাবি করে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জোর দাবি জানান নেতারা। তবে বামদের একটা অংশ এই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী বদলের দাবি তুলেছিল। এই আসনেই এ বার প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। এই দুটি আসনে ভোট ভাগাভাগি তো আটকানো যাবে না! তা হলে? সিপিএমের দলীয় কার্যালয় সিউড়িতে বৃহস্পতিবার জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদার উপস্থিতিতে রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘আমাদের শরিক দল ওই দুটি আসনে প্রার্থী। বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে। তবে এখনও চাইব লড়াই একের বিরুদ্ধে একের হোক। সেই মর্মে আলোচনা চলছে।’’ বামফ্রন্ট গত ভাবেই এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে, যোগ করছেন তিনি।

হাঁসনের আরসিপিআই প্রার্থী তথা জেলা সম্পাদক কামাল হাসান অবশ্য বলছেন, ‘‘এমন কোনও কথা আমার জানা নেই। বামফ্রন্ট প্রার্থী হিসাবে লড়াইয়ে রয়েছি। বামফ্রন্ট গত ভাবে যদি এমন কোনও সিদ্ধান্ত হয় তা হলে সেটা মেনে চলব।’’ অন্য দিকে, ফব-র জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘বামফ্রন্ট গতভাবেই চিন্তা ভাবনা চলছে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়ার। সেই তালিকায় রামপুরহাটও রয়েছে।’’ কংগ্রেস জেলা সভাপতি জিম্মি অবশ্য মনে করেছেন, এই দুই আসনে জট কাটল বলে। একই ভাবে আশাবাদী রামচন্দ্র ডোমও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন